রাসলীলা উৎসবে অংশ নিতে সৈকতে পূণ্যার্থীদের ঢল

সকল জাগতিক পাপ মোচনের আশায় পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় রাসলীলা উৎসবে অংশ নিতে ভিড় জমিয়েছে ধর্মাবলম্বী হাজারো নারী পুরুষ।

বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) বিকাল থেকেই সমুদ্র সৈকতে উৎসবে অংশকারীদের ঢল নেমেছে। আজ (শুক্রবার) সন্ধ্যায় কুয়াকাটার শ্রী শ্রী রাধাকৃঞ্চ মন্দিরে ভগবানকে আমন্ত্রন, মঙ্গল ঘট স্থাপন, সন্ধ্যা আড়তি, আলোচনা সভা এবং ভক্তদের প্রসাদ বিতরন করা হবে। এরপর রাতভর চলবে সঙ্গীতানুষ্ঠান, ভাবগত পাঠ ও মহানাম কীর্তন। আগামীকাল শনিবার ভোররাতে পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ রাস উৎসব।

তবে পূর্ণিমা চলমান থাকায় আজ ভোরে মতুয়াসহ অনেক হিন্দু সম্প্রদায় গঙ্গাস্নান সম্পন্ন করেছেন। এদিকে গতকাল রাত সাড়ে ৯টায় অধিবাসের মধ্য দিয়ে কলাপাড়ায় শুরু হয়েছে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী শ্রী কৃষ্ণের রাস উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। শহরের মদনমোহন সেবাশ্রমে সতের জোড়া যুগল প্রতিমা দর্শনের মাধ্যমে এ রাসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এসময় শাঁখ, উলুধ্বনি এবং নাম কীর্তনে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো মন্দির প্রাঙ্গণ।

পঞ্জিকা মতে, বৃহস্পতিবার ভোররাত ৫ টা ৪৩ মিনিটে শুরু হয়েছে পূর্ণিমা। এর অবস্থান শুক্রবার ভোররাত ৩ টা ৩২ মিনিট পর্যন্ত।

সৈকতে আগত পূণ্যার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে মাঠে কাজ করছে বিপুল সংখ্যক আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য।

কথিত রয়েছে, মানবতা রক্ষায় দ্বাপর যুগে কংস রাজাকে বশ করে পূর্ণিমা তিথিতে ঘটে রাধা-কৃষ্ণের পরম প্রেম। সেই থেকেই মূলত রাস উৎসবের প্রচলন হয়। তবে কুয়াকাটা ও কলাপাড়ায় প্রায় ২০০ বছর ধরে রাস উৎসব উদযাপন করে আসছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

খুলনা থেকে আসা পূণ্যার্থী সজল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, আজ সকালে এখানে এসেছি। পরিবারের সব সদস্য আমার সঙ্গে রয়েছে। আগামীকাল পূর্ণিমা তিথিতে আমরা গঙ্গাস্নান করবো। তবে এবছর এখানে আসলেও বিগত বছরগুলোতে আমরা দুবলার চরে রাস উদযাপন করেছি।

বরিশাল থেকে আসা পূণ্যার্থী সম্রাট কর্মকার বলেন, রাতভর এখানে ধর্মীয় অনুষ্ঠান হবে। এ অনুষ্ঠান থেকে ভোররাতে পূণ্যস্নান করবো। তাই প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও কুয়াকাটায় আসা। আশা করছি পূণ্যস্নানের মাধ্যমে সকল জাগতিক পাপ দূর হয়ে যাবে।

কুয়াকাটার শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দির ও তীর্থযাত্রী সেবাশ্রমের সাধারণ সম্পাদক নেহের রঞ্জন মন্ডল জানান, গতকাল থেকেই আমাদের এখানে ব্যাপক পূণ্যার্থী এসে উপস্থিত হয়েছেন। আজও অনেকে আসছেন। আমরা রাতভর এখানে পূজার্চনাসহ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবো। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর পূণ্যার্থীদের চাপ একটু বেশি।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘পূণ্যার্থীদের নিরাপত্তায় আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। মাঠে পুলিশ সদস্য ও সেনা সদস্য মোতায়েন রয়েছে। নিরাপত্তা চাদরে ঢাকা রয়েছে পুরো কুয়াকাটা। আশা করছি পূণ্যার্থীরা নিরাপদে রাস উপভোগ করতে পারবেন।’

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts