ইমরুল সুমন
আর আসা হবে না। রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ইন্দিরা রোডে জাকারিয়া পিন্টু ভাইয়ের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন প্রতাপ শঙ্কর হাজরা। ভেতরে গ্যারেজে লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে শুয়ে আছেন কিংবদন্তী ফুটবলার মো. জাকারিয়া পিন্টু। সকালেই যিনি সবাইকে ছেড়ে পরপারে পাড়ি দিয়েছেন। সামনেই হাঁটা দুরত্বে জাতীয় সংসদ ভবন। ভবনের সামনে মোহামেডানের ২৬ বছর দায়িত্ব পালনকারী সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, জাতীয় পার্টি নেতা জামাল রানা ভাই।
পিন্টু ভাই ও প্রতাপ দা ছিলেন মানিকজোড়। সেই ৬২ সাল থেকে এক সঙ্গে আছেন খেলার মাঠে। এবার জুটি ভেঙে গেলো। প্রতাপ দা যেমন বলছিলেন, ‘আমার বন্ধুত্বের পুরো অংশটাই জুড়ে ছিলেন পিন্টু ভাই।’ বয়সে একটু বড় হলেও প্রতাপ দাকেই ফুটবলের বিশ্বস্ত সঙ্গী বানিয়েছিলেন পিন্টু ভাই। কি স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল, কি জাতীয় দল সব জায়গাতেই পিন্টু ভাই প্রতাপ দাকে আগলে রাখতেন। আর প্রতাপ দা ব্যাপক প্রতাপের সঙ্গে আগলে রাখতেন পিন্টু ভাইকে। নিজে দলের অধিনায়ক না হয়ে বরং পিন্টু ভাইকে অধিনায়ক বানাতে গো ধরতেন। মোহামেডানে এমন দিনও গেছে যে পিন্টু ভাইকে অধিনায়ক না বানালে প্রতাপ দা সহ অনেকেই খেলবেন না বলে জেদ ধরতেন। এসব কারণে মোহামেডানে টানা ৮ বছর অধিনায়ক ছিলেন পিন্টু ভাই।
প্রতাপ দা শুধু নামে নয় তাঁর গুনে সবাইকে প্রতাপের সঙ্গে জড়িয়ে রাখতেন। শুধু ফুটবল নয় প্রতাপ দা ভালো হকি ও ক্রিকেটও খেলতে পারতেন। হকিতে তিনি জাতীয় দলের নিয়মিত খেলোয়াড় ছিলেন। ক্রিকেট খেলেছেন প্রথম বিভাগ লীগে। জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন হকি খেলোয়াড় হিসেবে। পিন্টু ভাই জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন ফুটবলার হিসেবে। স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন ফুটবলার পরিচয়ে। স্বাধীনতার পর এই দুই মানিকজোড় মোহামেডান ছেড়ে অন্য দলে আর খেলেননি।
স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক ছিলেন জাকারিয়া পিন্টু। সহ অধিনায়ক ছিলেন প্রতাপ শঙ্কর হাজরা। ভারতের মাটিতে দলটি বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করে। দেশ স্বাধীনের আগেই ভারতের মাটিতে বাংলাদেশের পতাকা উড়ায়। সে ম্যাচগুলোতে পাওয়া অর্থ মুক্তিযোদ্ধা ফান্ডে দান করেন। বাংলাদেশের স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সেই অনুদানের অর্থে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অস্ত্র কেনা হয়। সেই অস্ত্রে হানাদারদের বিরুদ্ধে লড়াই করে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করেন।
দেশ স্বাধীনের পর স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ফুটলারদের বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেয় বিএনপি আমলের বাংলাদেশ সরকার। এই দলের দুইজন ফুটবলার মো. জাকারিয়া পিন্টু ও কাজী সালাহউদ্দিনকে স্বাধীনতা পদক দেয়া হয়। জাকারিয়া পিন্টু, প্রতাপ শঙ্কর হাজরা, আইনুল হক, কাজী সালাহউদ্দিন, মো. কায়কোবাদ, মেজর জেনারেল খোন্দকার নূর উন নবী(অব.), কে এম নওশেরুজ্জামান সহ বেশ কয়েকজনকে জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। তবে দলটির সম্মিলিত কোন স্বীকৃতি জোটেনি বলে আফসোস ছিল জাকারিয়া পিন্টু ভাইয়ের। বেশ কয়েকবারই তিনি পুরো দলটির স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা করেছিলেন।
কাজী সালাহউদ্দিন সভাপতি থাকাকালীন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন একবার দলটির সকল সদস্যকে সম্মাণনা জানায়। ২০১৬ সালে মতিঝিলে প্রগতি সংঘ তাদের সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলটিকে দলীয়ভাবে সম্মাণনা জানায়। তবে, এসব স্বীকৃতি আর মূল্যায়নের ধার ধারেন না প্রতাপ শঙ্কর হাজরা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ যে স্বাধীন হয়েছে আমাদের যে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে সেটাই অনেক বড় কথা। আমরা বিদেশের মাটিতে ফুটবল নিয়ে লড়াই করেছি। তবে, যারা সরাসরি রণাঙ্গনে অস্ত্র হাতে লড়াই করেছেন তাদের ভূমিকা ও গুরুত্ব অনেক বেশি। তাদের অবদানের সঙ্গে অন্যদের ভূমিকা গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না। আমরা আমাদের সামর্থ্যে দেশের জন্য যা করেছি তার চেয়ে প্রতিদান অনেক বেশি পেয়েছি।’
বুঝলাম না এটা প্রতাপ দা’র অভিমান, কষ্ট না কি উনি সব চাওয়া পাওয়ার উর্ধ্বে উঠে গেলেন একদিনেই। এতদিন যে পিন্টু ভাইয়ের সঙ্গে থেকে দলীয় স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা করেছেন আজ তিনিই অন্যরকম কথা বলছেন। আমারও আজ প্রতাপ দা’র কথাটাই সঠিক মন হচ্ছে। আসলে একটা বয়সে এসে এসব চাওয়া পাওয়ার আর কিছুই দাম থাকে না।
স্টেডিয়াম পাড়ায় পিন্টু ভাই ছিলেন বিএনপি মনমানসিকার ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। জাতীয় প্রেস ক্লাবের প্রধান নির্বাচন কমিশনারও ছিলেন বিএনপি সমর্থিত সদস্যরা যখন এর নেতৃত্বে। পিন্টু ভাইয়ের সঙ্গে থাকায় প্রতাপ দা’র গায়েও বিএনপি সমর্থিত খেলোয়াড়ের সিল লেগে যায়। বিএনপি’র শাসনামলে উনারা চেষ্টা তদ্বির করে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড়দের গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে উনাদের জন্য সম্মানজনক ভাতারও ব্যবস্থা করান। মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামের দোতলায় দলটির জন্য একটি কক্ষ বরাদ্দও নেন। চেষ্টা করেন দলটির দলীয় স্বীকৃতি আদায়ের। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল, ফায়ার সার্ভিস সহ অনেক প্রতিষ্ঠান দলীয়ভাবে সরকারী স্বীকৃতি পেলেও স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ভাগ্যে সেটা জুটেনি। আওয়ামী লীগ শাসনামলে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলটি কোন সুবিধাই পায়নি। এই দলটির আওয়ামী লীগ ঘেষা কর্মকর্তা ও খেলোয়াড়রা নিজেদের আখের গোছালেও দলের বা দলের খেলোয়াড়দের জন্য কিছুই করেননি। কাজী সালাহউদ্দিন দীর্ঘদিন ফুটবল ফেডারেশনের দায়িত্বে থাকলেও দলটিকে সরকারী স্বীকৃতি এনে দেয়ার চেষ্টা করেও সফল হননি। বাধ্য হয়ে আমরা ক্রীড়া সংগঠকরা আমাদের সীমিত সামর্থ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলটির দলীয় স্বীকৃতি দেয়ার চেষ্টা করি। ২০১৬ সালে মতিঝিলের ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া ও সামাজিক সংগঠন প্রগতি সংঘের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত প্রগতির সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল, মতিঝিলের বীর মুক্তিযোদ্ধা সহ ১০০ জন গুণীজনকে সম্মাণনা দেয়া হয়। সে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাকারিয়া পিন্টু ভাইয়ের ঘনিষ্ট বন্ধু তৎকালীন বানিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়। এই আয়োজনে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলকে সম্মাণনা জানানোর ক্ষেত্রে প্রগতি সংঘের সভাপতি জুবের আলম খান রবিন সহ সংগঠনের সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
আওয়ামী লীগ শাসনামলে পিন্টু ভাইকে নিয়ে অনেক ষরযন্ত্র হয়েছে। অনেক লাঞ্ছনা গঞ্ছনা সইতে হয়েছে উনাকে। এজন্য একটা সময় তিনি ঘরের বাইরে যাওয়া কমিয়ে দেন। পিন্টু ভাই কিংবদন্তী ফুটবলার হওয়ার পাশাপাশি ভালমানের লেখক ছিলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। সেখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হয়েও দায়িত্ব পালন করেন। ক্রীড়া বিষয়ক বেশ কয়েকটি প্রকাশনা ও বইও আছে উনার। বিশ্বকাপ ফুটবলের সময় উনার বিশ্লেষনমূলক লেখাগুলো সবারই মনোযোগ কেড়ে নিতো। খেলোয়াড়ী জীবনীভিত্তিক তার প্রথম প্রকাশনা ‘মুক্তিযুদ্ধে ফুটবল’ বইটি লেখার ক্ষেত্রে উনাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করি। ক্রীড়া বিষয়ক লেখালেখির আগ্রহ দেখে অনেক শখ করে উনাকে বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতির সদস্য বানিয়েছিলাম। তবে এখানে উনাকে সদস্য বানানোর জন্যও অনেক কাঠ খর পোহাতে হয় আমাকে। দীর্ঘদিন উনার সদস্যপদ পদ আটকে রাখেন সমিতিরই মোহামেডান ঘরানার এক কর্মকর্তা এবং আওয়ামী লীগ পন্থী কিছু কর্মকর্তা। পরে এর ব্যাখ্যা দেন, পিন্টু ভাইকে সমিতিতে সম্মাণজনক পদ দেয়ার জন্যই উনারা সময় নিচ্ছিলেন। অথচ দেখা যায় সমিতির নিয়মানুযারী ২৫ টি ক্রীড়া বিষয়ক লেখা জমা দিয়ে পিন্টু ভাইকে সমিতির সাধারণ সদস্য হতে হয়। এজন্য অবশ্য অনেক লড়াই করতে হয় আমাদের। জাকারিয়া পিন্টু ভাইকে সাধারণ সদস্য করলেও কিছুদিন পর উনার অধিনে খেলা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিন ভাইকে আজীবন সদস্য করে নেয় বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতির আওয়ামী লীগ পন্থি কর্মকর্তা মোস্তফা মামুন, সনাৎ বাবলা ও সুদীপ্ত আনন্দ গং। বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতির সভাপতি মোস্তফা মামুন ও সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত আনন্দ বার্ষিক চাঁদা পরিশোধ না করার ঠুনকো অভিযোগে জাকারিয়া পিন্টু ভাইকে বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতির এজিএমে প্রবেশ করতে দেননি একবার। বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের দুই তলার হলরুমে হচ্ছিল সে সভা। পিন্টু ভাইকে গেটেই আটকে দেন সমিতির পিওন হাবিব ও জাহাঙ্গীর। আমি এটা দেখে যার পর নাই বিস্মিত হই। দেশের কিংবদন্তী একজন ফুটবলারের এই অপমান সইতে পারিনি। এজিএমের সাধারণ আলোচনায় এ নিয়ে প্রশ্ন তুলি। কড়া সমালোচনা করি। মঞ্চে বসা কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি মোস্তফা মামুন ও সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত আনন্দকে বলি জাকারিয়া পিন্টু ভাইকে এজিএমে প্রবেশের অনুমতি দিতে। পিন্টু ভাই সেদিন এজিএম স্থলে তাঁর বকেয়া চাঁদা দিতে রাজিও ছিলেন। কিন্তু মোস্তফা মামুন কিংবা সুদীপ্ত আনন্দ তাতে কর্ণপাত করেননি। এমনকি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান ভাই ও কবি সানাউল হক খান ভাই আমার হয়ে সমিতির সাধারণ সদস্য জাকারিয়া পিন্টু ভাইকে সমিতির এজিএমে প্রবেশে ব্যবস্থা নিতে বললেও মোস্তফা মামুন ও সুদীপ্ত আনন্দ সে কথা এড়িয়ে যান। পিন্টু ভাই অলিম্পিক ভবনের নিচতলায় দীর্ঘক্ষন বসে থেকে চলে যান। আমিও সেখানে আর বসে থাকতে পারিনি লজ্জায়। পিন্টু ভাইয়ের সঙ্গে চলে আসি। এরপর থেকে আমি আর সমিতির এজিএমে যাইনি। সমিতির সাবেক সাংগঠনিক ও সাবেক দপ্তর সম্পাদক হয়েও আমি জাকারিয়া পিন্টু ভাইকে করা এই অপমান আমি সহ্য করিনি। ফ্যাসিবাদদের সঙ্গে আপোস করিনি। পিন্টু ভাইও আর যাওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেননি সেখানে। আমি পিন্টু ভাইকে আরো বড় প্ল্যাটফর্মে এনে পরবর্তিতে সম্মানিত করেছি।
বিএনপি শাসনামলে মগবাজার ওয়ারলেসের গলিতে একটি নতুন মাঠ উদ্বোধন করেছিলেন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব সভাপতি তৎকালীন সংসদ সদস্য মোসাদ্দেক আলী ফালু ভাই। সেদিন পিন্টু ভাই ও প্রতাপ দা’ র সঙ্গে ছিলাম আমিও। ঢাকায় একটি জমি কিনি আমি। শখ করে দলিল করার সময় সে জমির স্বাক্ষী করি জাকারিয়া পিন্টু ভাই ও প্রতাপ শংকর হাজরা দাদাকে। সনাক্তকারী আমার বন্ধু সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম মিঞা। জমি রেজিস্ট্রির দিন শুধু দাতা ও সনাক্তকারীকে নিয়ে হাজির হই তেজগাঁও রেজিস্ট্রি অফিসে। পিন্টু ভাই ও প্রতাপ দাকে সঙ্গে নেইনি। জমির দলিল দেখে তো সাব রেজিস্টার সাবেক অবাক। প্রশ্ন করলেন স্বাক্ষীরা কি আসলেই দলিলে স্বাক্ষর করেছেন? প্রথমে থতমত খেলেও পরে পরস্থিতি সামলে নেই।
সোমবার ধানমন্ডির মসজিদ আত তাকওয়ায় প্রথম জানাজা শেষে পিন্টু ভাইকে আনা হয় ইন্দিরা রোডের বাসায়। সেসময় পিন্টু ভাইকে বহনকারী ফ্রিজিং গাড়িটি বাড়ির নিচে রেখে প্রতাপ দা’র সঙ্গে আমি বাইরে আসি। আমাদের দেখা দেখি লোকমান।হোসেন ভাই ও জামাল রানা ভাইও বাইরে আসেন। আমাকে দেখিয়ে লোকমান হোসেন ভাই প্রতাপ দাকে বলেন, ‘সুমন তো ছিল পিন্টু ভাইয়ের হাতের লাঠি। ওরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো। আর কি দেখা হবে এখানে আমাদের?’ লোকমান ভাই রাতে পিন্টু ভাইদের ইন্দিরা রোডের বাসা ছেড়ে চলে আসার সময় আমাকে বলেন, ‘প্রতাপ দাকে সিগারেট খাওয়া কমাতে বলো’। আমি সেটা মেনে প্রতাপ দাকে সেটা বলি। প্রতাপ দা বলেন, ‘সিগারেট ত ছেড়েই দিয়েছিলাম। পিন্টু ভাইয়ের কথা শুনে আবার ধরলাম। আমার তো বন্ধু বান্ধব আর কেউ রইলো না। এখন তো পিন্টু ভাইয়ের ব্যাপারে আমরা বলতে পারছি। আমি চলে গেলে বলার মতো তো আর কেউই থাকবে না। আমরা মারি ভাই, গজনবি ভাইদের দেখে ভালো।খেলোয়াড় হতে উৎসাহিত হয়েছি। আফসোস লাগে আমাদের দেখে সেরকম খেলোয়াড় হতে কেউ পারেনি।’
পিন্টু ভাইয়ের ছোট ভাই ফুটবলার মঈন ভাই সে কথা শুনে বলেন, ‘সবাই চলে যাচ্ছে একে একে। পিন্টু ভাই কি মাপের খেলোয়াড় ছিলেন আমরা যারা মাঠে তার সঙ্গে খেলেছি তারাই সেটা বলতে পারবো। অন্যদের সেটা উপলব্ধি করা কঠিন।’
পিন্টু ভাইকে নিয়ে অনেক স্মৃতি আমার। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের বড়াইলে আমাদের গ্রামের কাজীবাড়িতে বৃক্ষরোপন করেছিলেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ৪ লিজেন্ড মো. জাকারিয়া পিন্টু, প্রতাপ শঙ্কর হাজরা, মেজর জেনারেল খোন্দকার নূর উন নবী(অব.) ও মোহাম্মদ কায়কোবাদ। উনাদের সঙ্গে ছিলেন মোহামেডানের অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক মোস্তাকুর রহমান, সাবেক ফুটবলার মোহাম্মদ রিয়াজ, মোহাম্মদ ইয়া হিয়া। সেখানে একটি ফুটবল টুর্ণামেন্টে সভাপতিত্বও করেন। উনার লাগানো গাছগুলো প্রায় ৩ তলার সমান উচুঁ হয়েছে। অনেক আশা ছিল পিন্টু ভাইকে আবার সেখানে নিয়ে যাবো। কিন্তু উনার শারিরীক কন্ডিশন দেখে আর ঢাকার বাইরে নেয়ার সাহস পাইনি। হৃদযন্ত্রের সমস্যা ছিল। বাই পাস করা ছিল হার্টে। বয়সের কারণে শরীরও ভেঙে পড়ছিল। শেষ দিকে খাওয়া দাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। ল্যাব এইড হাসপাতালে নেয়া হলো। সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরলেন। আবার সমস্যা দেখা দিলে ক’দিন পর নেয়া হলো ধানমন্ডি শংকরের ইবনে সিনা হাসপাতালে। সেখানে
জানা গেল লিভার ও কিডনিতেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। সব মিলিয়ে জটিল পরিস্থিতি। এ অবস্থায় আর সারভাইভ করতে পারলেন না।
—————————————————
মো. জাকারিয়া পিন্টু ভাইয়ের বিদায়ের প্রস্তুতি
বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের প্রথম অধিনায়ক, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত ফুটবলার, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্রীড়াবিদ, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের পরিচালক মো. জাকারিয়া পিন্টু ভাই আর নেই। আজ সকাল ১১:৪৫ টার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মো. জাকারিয়া পিন্টু
জন্ম: ০১/০১/১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দ
মৃত্যু: ১৮/১১/২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ
মৃত্যুর স্থান: ইবনে সিনা হাসপাতাল
শংকর (ধানমন্ডি)।
তারিখ: ১৮/১১/২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ
*প্রথম জানাজা (বাদ আসর):
মসজিদ উদ তাকওয়া(ধানমন্ডি)।
*দ্বিতীয় জানাজা (বাদ এশা):
তেজগাঁও কলেজ (ছাত্রাবাস মসজিদ)।
তারিখ: ১৯/১১/২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ
তৃতীয় জানাজা (সকাল ১০:০০ টা):
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব প্রাঙ্গন।
চতুর্থ জানাজা (সকাল ১১:০০ টা):
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন(বাফুফে) ভবন প্রাঙ্গন।
রাষ্ট্রীয়ভাবে বীর মুক্তিযোদ্ধা জাকারিয়া পিন্টু ভাইকে গার্ড অব অনার প্রদান।
ক্রীড়া উপদেষ্টা উপস্থিত থাকবেন।
পঞ্চম জানাজা (দুপুর ০১:৩০ টা):
জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গন।
দাফন:
বাস আসর (বিকাল ৪:০০ টা)
শহীদ বুদ্ধিজীবি কবরস্থান, মিরপুর, ঢাকা। বাংলাদেশ।