মেট্রো নিউজ : দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খুব একটা ভাল সময় কাটেনি ধোনির। বিশেষত ধোনির ব্যাটের ফিনিশিং টাচ প্রচন্ড মিস করেছে ভারত। অনেক ক্রিকেট বোদ্ধা ভারতের এই হারের জন্য সরাসরি দায়ী করলেন মহেন্দ্র সিং ধোনিকে। কিন্তু তাদের কঠোর সমালোচনা করলেন দেশটির কিংবদন্তী ক্রিকেটার সুনিল গাভাস্কার। তিনি জানান, এখনও ফুরিয়ে যায়নি ধোনি। এখনও ভারতকে সাফল্য এনে দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে ‘ওয়ার্ল্ড ক্লাস’ এই ফিনিশারের।
কানপুরে প্রথম ওয়ানডেতে অধিনায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্সের সেঞ্চুরি টর্নেডোতে ৫ উইকেটে ৩০৩ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা।ডি ভিলিয়ার্স ৭৩ বলে ১০৪ রানে অপরাজিত থাকেন। জবাবে রোহিত শর্মার দৃষ্টিনন্দন ১৫০ রানের ইনিংসে নিশ্চিত জয়ের পথেই এগোচ্ছিলো ভারত। কিন্তু শেষ দিকে এক ওভারে রোহিত ও সুরেশ রায়নার উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচের মোড় দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে নিয়ে আসেন স্পিনার ইমরান তাহির। ফলে সহজ ম্যাচ কঠিন হয়ে যায় ভারতের জন্য। শেষ ওভারে ম্যাচ জয়ের জন্য ১১ রান প্রয়োজন পড়ে ভারতের।
দক্ষিণ আফ্রিকার ২০ বছর বয়সী পেসার কাগিসো রাবাদার শেষ ওভার থেকে ১১ রান নেয়া খুব বেশি কঠিন ছিলো না স্ট্রাইকে থাকা ধোনির। কারণ অতীতে অনেক কঠিন ম্যাচ একাই বের করে ফেলেছিলেন ধোনি। কিন্তু প্রথম ওয়ানেডেতে সেটি আর করতে পারেননি ‘মিস্টার কুল’ খ্যাত টিম ইন্ডিয়ার দলপতি। রাবাদার বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ের সামনে হার মানেন ধোনি, সেই সঙ্গে ভারতও হেরে যায় ৫ রানে।
ম্যাচটি ভালোভাবে ফিনিশ করতে না পারায় ভারত জুড়ে চলছে ধোনির সমালোচনা। তবে এসব সমালোচনা ভালো লাগেনি ভারতের সাবেক অধিনায়ক গাভাস্কারের। ধোনি পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন তিনি। ধোনির পক্ষে কথা বলতে গিয়ে গাভাস্কার বলেন, ‘এখনও ভারতের এক নম্বর ফিনিশার ধোনি। অবশ্যই এখন তার বয়স কিছুটা বেড়েছে। তাই তার শক্তিও কিছুটা কমে গেছে। আর শুধুমাত্র খেলাধুলাতেই নয় এটি যেকোন পেশাতেই হতে পারে। যাইহোক ম্যাচ হারের সব দায় যে ধোনির কাঁধেই পড়বে তা ঠিক নয়। একটি ম্যাচ দিয়েই সব বিবেচনা করা যায় না। ভারতকে সাফল্য এনে দেয়ার সামর্থ্য ধোনির এখনও আছে। অতীতে বহুবার এমন কাজ ভালোভাবে করে দেখিয়েছে সে।’
তবে ভারতের ম্যাচ হারের কারণ কি, সেটিও বলে দিয়েছেন গাভাস্কার। ভারতীয় বোলারদের দিকে আঙ্গুল তুলে গাভাস্কার বলেন, ‘বর্তমানে ভারতীয় দলের সবচেয়ে বড় সমস্যা বোলিং বিভাগে। শেষ দশ ওভারে আমাদের বোলাররা ১শ’র বেশি রান দিয়ে দিচ্ছে। এটা খুবই দুঃখের বিষয়। ভারতীয় দলে দীর্ঘদিন থাকার পরও ডেথ ওভারে কিভাবে বল করতে হবে সেটিও ভালোভাবে রপ্ত করতে পারেনি বোলাররা। কোন সময় ইয়র্কার দিতে হবে, কোন সময় কোন লাইন লেন্থে বল করতে হবে সেটিও ঠিক মত বুঝতে পারেন না তারা। যদি তারা এগুলো দ্রুত রপ্ত করতে না পারে তবে দলে তাদের থাকার কোন প্রয়োজন নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে মোহিত শর্মাকে দলে চাই। কারণ সীমিত ওভারের ফরম্যাটে সে ভালো করতে পারবে। বিশেষভাবে ডেথ ওভারের জন্য সে একজন কার্যকর বোলার। এ ছাড়া ভুবেনশ্বরের পক্ষেও আমি কথা বলতে চাই। তাকে সবসময় সুযোগ দেয়া উচিত।’
কানপুরে ভারতীয় ইনিংসকে একাই টেনেছেন ওপেনার রোহিত শর্মা। ১৩৩ বলে ১৫০ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলেন তিনি। তাই বিশ্ব ক্রিকেটে দু’টি ডাবল সেঞ্চুরির মালিক রোহিতের প্রশংসায় পঞ্চমুখ গাভাস্কার, ‘ভারতীয় দলের গুরুত্বপূর্ন সদস্য রোহিত। ভারতীয় ইনিংসের অর্ধেকের বেশি রান করেছেন তিনি। ম্যাচে দুর্দান্ত কিছু শট খেলেছে রোহিত। বিশেষভাবে ডুমিনিকে সুইপ করে তার ছক্কা হাঁকানোটা ছিল অসাধারণ।’
প্রথম ওয়ানডের ব্যাটিং লাইন-আপ নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ৬৬ বছর বয়সী গাভাস্কার। তিনি বলেন, ‘দলে জেনুইন অলরাউন্ডার ছিলো না। উপরের সারির সেরা ছয় ব্যাটসম্যানকে আরো বেশি দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হবে। কোহলিকে তিন নম্বরে ব্যাটিং করতে দেয়া উচিত। এরপর রাহানে চার নম্বরে। এরপরই ধোনি ও রায়না। তবে পরিস্থিতির উপর বিবেচনা করে ধোনি ও রায়নার ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তন করতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট।’