জয়ললিতাকে কেন কবর দেওয়া হল?

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক তামিলনাডুর সদ্য প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রীর শেষকৃত্য যখন হচ্ছে মঙ্গলবার, তখনই অনেকের মনে প্রশ্নটা উঁকি দিয়েছিল যে তাঁকে কেন সমাহিত করা হচ্ছে? জয়ললিতা একজন হিন্দু হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে কেন দাহ করা হল না? সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই নিয়ে আলোচনা শুরু হয়, কয়েকটি সংবাদপত্রও নানা মত লিখতে থাকে।

চেন্নাইয়ের এক খাবারের হোটেল চালান কে রামচন্দ্রন। তিনি যে জয়ললিতার সমর্থক তা নয়। তবুও জয়াললিতার মরদেহ দাহ সংস্কার না করে কেন কবর দেওয়া হল – এটা নিয়ে তিনিও আশ্চর্য হয়ে গেছেন।

তিনি বলছিলেন, “উনার মৃত্যুর খবর শুনে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম, আর তার থেকেও বেশী অবাক হয়েছিলাম যখন জানতে পারলাম যে উনাকে হিন্দু পরম্পরা অনুযায়ী দাহ না করে কবর দেওয়া হচ্ছে।”

তামিলনাডু ব্রাহ্মণ সংঘ সেখানকার উচ্চবর্ণের হিন্দুদের একটি সংগঠন। তার প্রধান এন নারায়ণন বলছিলেন, “ভোটের রাজনীতি করতে গিয়ে হিন্দুদের বিশ্বাস আর ব্রাহ্মণদের পরম্পরা – এই দুটোকেই পুরোপুরি বিসর্জন দিয়ে দিয়েছে দ্রাবিড় রাজনীতি। তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের এই সিদ্ধান্তে শুধু তামিল ব্রাহ্মণরা নয়, অন্যান্য হিন্দুদেরও মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়েছে।”

এটা এখনও স্পষ্ট নয় যে জয়ললিতা নিজে তাঁর শেষকৃত্যের ব্যাপারে কোনও ইচ্ছা প্রকাশ করে গিয়েছিলেন কি না। জয়ললিতা তামিলনাডুর তৃতীয় মুখ্যমন্ত্রী, যাঁকে কবর দেওয়া হয়েছে। এর আগে জয়ললিতার রাজনৈতিক গুরু এম. জি. রামচন্দ্রনকে আর তারও আগে দ্রাবিড় রাজনীতির জন্মদাতা আন্না দুরাইকেও কবর দেওয়া হয়েছিল বঙ্গোপসাগরের তীরে চেন্নাইয়ের মারিনা তটে।

তবে এম. জি. রামচন্দ্রন তামিল ব্রাহ্মণ ছিলেন না। তিনি মালয়লী মেনন সম্প্রদায়ের মানুষ ছিলেন আর ব্যক্তিগত বিশ্বাসে জাতপাত মানতেন না।আর আন্না দুরাই তথাকথিত উচ্চবর্ণের মানুষ ছিলেন না। তাই ওই দুজনকে কবর দেওয়া হলেও কোনও বিতর্ক তৈরি হয় নি।

মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের তামিল ভাষা ও সাহিত্যের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. বি. আরাসুও মনে করেন, জয়ললিতাকে যে দাহ না করে কবর দেয়া হলো, তার পেছনে দ্রাবিড় রাজনীতিই মূল কারণ।

ড. আরাসুর কথায়, “দ্রাবিড় আন্দোলনের সঙ্গে জয়ললিতাকে জড়িত রাখতেই হবে। আর দ্রাবিড় আন্দোলন হিন্দু ধর্মের ব্রাহ্মণ্যবাদী যে কোনও রীতি রেওয়াজ বা পরম্পরায় বিশ্বাস করে না। এই দুটোর অবস্থান সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে।”

হিন্দুত্ববাদ আর ব্রাহ্মণ্যবাদের সঙ্গে দ্রাবিড় আন্দোলনের এতটাই বিরোধ যে অনেক নেতাই নিজের পদবী লেখার সময়ে সেই অংশগুলো ব্যবহার করেন না, যা দিয়ে তাঁর জাত বোঝা যায়।

বিবিসি

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts