মারাকাশ জলবায়ু সম্মেলন ও বাংলাদেশ

মো. শহীদ উল্লা খন্দকার  []

জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কাটা তৃতীয় বিশ্বকেই বেশি সইতে হচ্ছে। কারণ, অনুন্নত দেশগুলোর জন্য দুর্যোগ সামলানো একেবারেই কঠিন। তাই বলে উন্নত বিশ্ব যে ঝুঁকিমুক্ত তা কিন্তু মোটেও নয়। যদিও এ বিপদটির জন্য উন্নত বিশ্বই মূলত বেশি দায়ী। তবে এটা ভালো খবর যে, প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়নে একধাপ অগ্রগতির মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে বিশ্ব মারাকাশ জলবায়ু সম্মেলন।

অর্থের জোগান বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েই মারাকাশ ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেছেন বিশ্ব নেতারা। মারাকাশে জাতিসংঘের শীর্ষ জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নেয়া রাষ্ট্রপ্রধানরা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ রাজনৈতিক সদিচ্ছা ব্যক্ত করেছেন। ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো যাতে তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে সেজন্য উন্নত দেশগুলোর অর্থের জোগান বাড়াতে হবে। বিশেষ করে প্যারিস জলবায়ু চুক্তির দীর্ঘমেয়াদি, উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কাজ করতে হবে একসঙ্গে। উন্নত দেশগুলো এতে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দ্রুত ছাড় করার ব্যাপারেও অঙ্গীকার করেছে। এ সবকিছুই আশার খবর বলে মনে করি আমি।

মারাকাশ সম্মেলন শেষে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্রে নেতারা বলেছেন, পৃথিবীর তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে তাতে আমাদের আশু কিছু করণীয় আছে। প্যারিস চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে তারা বলেন, এ চুক্তি ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন হওয়া শুরু হয়েছে। উচ্চাভিলাষী হলেও চুক্তিটি বাস্তবায়নে আমরা পূর্ণ অঙ্গীকার করছি।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেসব দেশ ঝুঁকির মধ্যে আছে সেগুলোর বিষয়ে বিশ্ব নেতারা বলেন, এ দেশগুলোর ঝুঁকি মোকাবেলার ক্ষেত্রে আমাদের পূর্ণ সমর্থন থাকবে। দেশগুলো যাতে ক্ষতি কাটিয়ে উঠে শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে সেজন্য উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। নেতারা দারিদ্র্য নির্মূলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করার মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হলে কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করতে হবে। এজন্য পৃথিবীর তাপমাত্রা কমিয়ে আনতে সব পক্ষকে একযোগে কাজ করতে হবে।

২০২০ সালের আগে যাতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় একটি কার্যকর অবস্থানে পৌঁছা যায় সে লক্ষ্যে কাজ করার ব্যাপারেও সম্মত হয়েছেন বিশ্ব নেতারা। টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এ সময় নেতাদের প্রচেষ্টা থাকবে বলে উল্লেখ করে বলা হয়, এখন আমাদের কাজে নেমে পড়তে হবে। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই।

মরক্কোর পর্যটননগরী মারাকাশে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (কপ-২২) শুরু হয় ৭ নভেম্বর। ১২ দিনব্যাপী এ সম্মেলনের শুরুতে হতাশা দেখা দিলেও শেষ পর্যন্ত অনেক বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসে। ১৫ নভেম্বর সম্মেলনের হাইসেগমেন্ট শুরু হওয়ার পর আশার আলো জ্বলে ওঠে সম্মেলনকে ঘিরে। মরক্কো সরকারের হস্তক্ষেপে এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে মারাকাশ সম্মেলনে ইতিবাচক ঘোষণা আসে। সম্মেলনকে সফল করতে মারাকাশ সরকার বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান এবং মন্ত্রীদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে সম্মেলনকে সফলতার দিকে নিয়ে যান।

বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকাও এক্ষেত্রে ছিল অগ্রগণ্য। উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বলিষ্ঠ বক্তব্য ছিল আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর। সম্মেলনে (কপ-২২) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জোর দিয়ে বলেন, জলবায়ুতাড়িত অভিবাসীর চ্যালেঞ্জ যথাযথভাবে মোকাবেলা করতে না পারলে আমরা কখনোই টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন করতে পারব না। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ হুমকির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সবাইকে একজোট হওয়ার আহ্বান জানান। এ বৈঠকে ছিলেন বাংলাদেশসহ ১১৫টি দেশের ৮০ জন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান এবং সিনিয়র মন্ত্রীরা ।

প্রধানমন্ত্রী গত বছরে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো এগিয়ে নেয়ার এটাই সময় উল্লেখ করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় প্যারিস চুক্তি অর্থবহ সহযোগিতার সুদৃঢ় ভিত্তি গড়ে তুলেছে। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের অবস্থানটিও বিশ্ববাসীর কাছে স্পষ্ট করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর ও অনুসমর্থন দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রথম সারির দেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের ইস্যুতে আমরা অঙ্গীকার পূরণে ব্যর্থ হলে কোটি কোটি মানুষ ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করবে। আগামী প্রজন্মের জন্য পৃথিবীকে নিরাপদ ও সুন্দর করতে আমাদের অঙ্গীকার পূরণের লক্ষ্যে সবাইকে অবশ্যই ন্যায়সঙ্গত দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত হতে হবে।

বাংলাদেশের সাফল্যের কথা তুলে ধরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ নিজস্ব তহবিল থেকে ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে সর্বপ্রথম ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট’ গঠন করেছে। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়ের মতো জলবায়ু সম্পৃক্ত অধিক ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় এলাকা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সাফল্য অর্জন করেছে। প্রধানমন্ত্রী পূর্বসতর্কীকরণ ব্যবস্থা ও আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণসহ বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের উল্লেখ করে বলেন, এসব পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্যোগকালে জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি অনেক কমেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পানি বিষয়ে টেকসই উন্নয়ন অর্জনে গবেষণা, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি স্থানান্তরে সহায়তা করতে একটি বৈশ্বিক তহবিল গঠনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

পরে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সম্মেলন কেন্দ্রে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, বাংলাদেশ হচ্ছে প্যারিস চুক্তি অনুমোদনকারী প্রথম দেশগুলোর একটি। এছাড়া বাংলাদেশই প্রথম রাষ্ট্র, যে জলবায়ু পরিবর্তনে নিজস্ব অর্থে ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করে। এ পর্যন্ত এ তহবিলের নিজস্ব সম্পদ থেকে প্রায় ৪০ কোটি ডলার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো উচ্চমাত্রার ঝুঁকি সত্ত্বেও বাংলাদেশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশ জিসিএফ, লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিল থেকে দ্রুত অর্থ দাবি করেছে। প্যারিস চুক্তির রূপরেখা প্রণয়নের কাজ ২০১৮ সালের মধ্যেই শেষ হবে। ফলে এখন সবাই তাকিয়ে আছে ২০১৮ সালের দিকে।

এছাড়া ওয়ারশ ইন্টারন্যাশনাল মেকানিজমের আওতায় পর্যালোচনা আগামী দুই বছরের মধ্যে শেষ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে মারাকাশ সম্মেলনে। এটি পরবর্তী সময়ে আরও পাঁচ বছর বাড়ানো হবে। মারাকাশ সম্মেলনে এ দুই ইস্যু মোটা দাগে আলোচনা হচ্ছিল শুরু থেকেই। সম্মেলনের প্লেনারি সেশনের আগে বিভিন্ন দেশের সর্বশেষ দরকষাকষিতে লিস্ট ডেভেলপ কান্ট্রি (এলডিসি) ফান্ডে অর্থায়নের বিষয়ে উন্নত দেশগুলো যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সেটির বিষয়েও সিদ্ধান্ত এসেছে। আশা করা হচ্ছে, উন্নত দেশগুলো ২৫ মিলিয়ন ইউরো এ ফান্ডে অর্থায়ন করবে। এছাড়া ২০২০ সাল থেকে সবুজ জলবায়ু তহবিলে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার দেয়ার যে প্রতিশ্রুতি ছিল সে ব্যাপারেও একটা রোডম্যাপ তৈরি হয়েছে। এর সবই আশাব্যঞ্জক হিসেবে আমাদের কাছে বিবেচ্য।

প্রসঙ্গত, জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত পরিবেশ বিপর্যয়ের শিকার যেসব দেশ, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। ভবিষ্যতে এ বিপর্যয় ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন, পৃথিবীতে কার্বন নিঃসরণ কমানো না গেলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি রোধ করা যাবে না। আর উষ্ণতা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাবে। বাড়বে অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগও। এতে সব দেশের মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশংকা প্রবল। এতে বিশ্বে অভিবাসী সংকট আরও তীব্র হবে। কাজেই জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবেলার বিষয়ে দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ নেই কোনো দেশেরই। বিশ্বকে বসবাসের উপযোগী রাখতে হলে কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের পাশাপাশি আরও কিছু পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় গত বছর প্যারিস সম্মেলনে যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, চলতি বছরই তার বাস্তবায়ন শুরু হবে। আমরা অবশ্যই আশা করব এর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার প্রশ্নে শিল্পোন্নত ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা রয়েছে এবং তা দিন দিন বাড়ছে। এ মতভিন্নতার অবসান হওয়া দরকার। শিল্পোন্নত দেশগুলোকে অনুধাবন করতে হবে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য তারাই বেশি দায়ী। তদুপরি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় শিল্পোন্নত দেশগুলোর যে সক্ষমতা রয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর তা নেই। যে কোনো দুর্যোগে দরিদ্র মানুষের দুর্ভোগ চরমে ওঠে। এটি বিশ্ববাসীর জানা থাকলেও আমাদের উপকূলীয় এলাকার হতভাগ্য মানুষের দুর্ভোগের অবসান কখনও হয় না। সিডর ও আইলায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে অনেক সহায়তার আশ্বাস দেয়া হলেও বাস্তবতা হল, ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকেই এখনও মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছেন। তবে সাম্প্রতিক কার্যক্রম দেখে আমরা আশাবাদী হয়ে উঠেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমাদের আস্থার জায়গাটি দৃঢ়। আমাদের বিশ্বাস তার নেতৃত্বে সব সমস্যাই আমরা কাটিয়ে উঠতে পারব।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের মনের সাহস বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমরা এখন পদ্মা সেতুর মতো অনেক বড় ধরনের প্রকল্পও করতে পারি। এখন আমাদের খুব বেশি বিদেশী ঋণ ও সাহায্যের ওপর নির্ভর করতে হয় না। গত শতাব্দীর আশি ও নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিক পর্যন্ত অবস্থাটা এমনই ছিল যে, আমাদের উন্নয়ন বাজেটের প্রায় সবটাই বিদেশী ঋণ ও ঋণদাতাদের মর্জির ওপর নির্ভর করতে হতো। আমরা প্যারিসে অনুষ্ঠিত কনসোর্টিয়ামের দিকে চেয়ে বসে থাকতাম। এখন আমাদের রেমিটেন্স বেড়েছে, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের খাত বেড়েছে, আমাদের এখন আর চাল আমদানি করতে হয় না। এ তিনটি ক্ষেত্রেই সরকারের ভূমিকা অসামান্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫০ লাখ হতদরিদ্র মানুষের জন্য ১০ টাকা কেজি দরে চাল দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। গড় জাতীয় আয়, প্রবৃদ্ধির হার আজ ঊর্ধ্বমুখী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই ঘোষণা করেছেন, ‘এ দেশে কেউ না খেয়ে থাকবে না। যারা গৃহহীন, তারা ঘর পাবে। কেউ বিনা চিকিৎসায় মরবে না। সব ছেলেমেয়ে লেখাপড়ার সুযোগ পাবে।’ হয়তো বঙ্গবন্ধুর কন্যা বলেই তিনি জাতির জন্য মনপ্রাণ দিয়ে এসব করে যাচ্ছেন। দেশপ্রেমের এমন উদাহরণ নিঃসন্দেহে নজিরবিহীন।

পরিবেশ রক্ষায় সতর্ক প্রধানমন্ত্রী পরিকল্পিতভাবে বালু তোলারও নির্দেশ দিয়েছেন। নদীর বালু যত্রতত্র থেকে তোলার ফলে সেতু ও ফসলের মাঠ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ছাড়াও নদীরপাড় ভাঙনসহ পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। প্রধানমন্ত্রী ভূমি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ, পানিসম্পদ ও নৌপরিবহন এ চারটি মন্ত্রণালয়কে সুনির্দিষ্ট এলাকা থেকে বালু তোলার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ক্ষতির বিষয়টি এড়িয়ে এ ধরনের কাজ করা উচিত। এজন্য তিনি চারটি মন্ত্রণালয়কে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা ডেকে একটি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছেন।

নদ-নদী বেষ্টিত প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের দেশ বলে বাংলাদেশের যে খ্যাতি ছিল, আজ তা মানবসৃষ্ট ও বৈরী পরিবেশের কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে। যত উন্নয়ন বা যা কিছুর কথাই বলা হোক না কেন, যদি পরিবেশ রক্ষা করা না যায় তাহলে কোনো কিছুই কাজে আসবে না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী পরিবেশ নিয়ে কতটা ভাবেন, তা অনুধাবন করার জন্যই এ প্রসঙ্গ এখানে টেনে আনা হল।

মারাকাশ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী জলবায়ুতাড়িত দুর্যোগ ও অভিবাসী সমস্যা সমাধানে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি যে আহ্বান জানিয়েছেন, তাতেও বাংলাদেশের স্বার্থ নিহিত। কারণ, পশ্চিমা ও শিল্পোন্নত বিশ্বের শিল্পায়ন, বনভূমি ও জলাভূমি ধ্বংস এবং মাত্রাতিরিক্ত ফসিল জ্বালানি ব্যবহারের কারণে গত এক শতাব্দীতে বিশ্বের জলবায়ুর বিপজ্জনক পরিবর্তন ঘটলেও এর চরম মাশুল দিতে হচ্ছে যেসব স্বল্পোন্নত ও জনবহুল দেশগুলোকে, বাংলাদেশ তার অন্যতম।

মারাকাশ সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে, এখন তারা দেখতে চাইবে উন্নত বিশ্ব তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে কতটা আন্তরিক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই সত্যই উচ্চারণ করেছেন। এ দৈত্যাকায় দুর্যোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব সুসংহত করার যে তাগিদ শীর্ষ সম্মেলনে তিনি দিয়েছেন, তাও সময়োচিত। গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর পাশাপাশি বৈশ্বিক এ দুর্যোগের অভিঘাত মোকাবেলায় উন্নত দেশগুলোকে বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত বা উন্নয়নশীল দেশকে জলবায়ুর বিপদ মোকাবেলায় প্রযুক্তি ও আর্থিক সহায়তা দিতে আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে।

মো. শহীদ উল্লা খন্দকার : সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts