বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভাগ উন্নয়ন ফি আদায় নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং এ প্রসঙ্গে প্রশাসনের অবস্থান সম্পর্কে যা আমরা পত্রিকান্তরে এবং প্রশাসনের বিবৃতি মারফত জানতে পারছি, তা থেকে প্রতীয়মান হয় যে প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সাথে মুখোমুখি শুধু নয়, বরং তাদের বিরুদ্ধে মারমুখি অবস্থান নিয়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে আমরা উদ্বিগ্ন।
গত বেশ কয়েক বছর ধরে পাবলিক ফান্ডে পরিচালিত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ম করে ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভাগ উন্নয়ন ফি’র নামে টাকা পয়সা আদায় করছে। একেক বিভাগে একেক মাত্রার ফি ধার্য করা এবং বছর বছর এই ফি বৃদ্ধি করার কারণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, বহু রীতি-নীতির বরখেলাপ করা হচ্ছে। সকল বিভাগের জন্য ৫০০০ টাকার একটি সিলিং ও কিছু শর্ত বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রশাসন কয়েক বছর যাবৎ প্রচার করলেও বাস্তবে আমরা তার যথার্থ প্রয়োগ দেখিনি। অন্যদিকে, এম ফিল, পি এইচ ডি ভর্তির ক্ষেত্রে এই অর্থ আদায় কোথাও কোথাও সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে বলে জানা যায়। অথচ কোন ক্ষেত্রেই এই সংগৃহিত অর্থ কোথায়, কীভাবে খরচ হচ্ছে তার কোনো পরিষ্কার বিধান কার্যকর নেই এবং সেই সাথে এই খরচের হিসাব-নিকাশ জন সমক্ষে কখনও হাজির করা হয় না। বরং জানা যায় অনেক বিভাগের একাউন্টে মোটা অংকের টাকা অলস জমা আছে, এবং অনেক ক্ষেত্রে বিভাগগুলোর দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন দৃষ্টিগোচর হয়নি। এছাড়াও খরচের ক্ষেত্রে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য স্বচ্ছ ও সমরূপ কার্যকর নীতিমালা না থাকায় বিভাগগুলোর অর্থনৈতিক সামর্থ্য ও প্রকাশের ক্ষেত্রে এক ধরনের বৈষম্য লক্ষ করা যাচ্ছে। এরপরও প্রতিবছর বিভিন্ন বিভাগে ফি বাড়ানো হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ তুললেও তা কতোটা শিক্ষার্থীদের কাজে ব্যয় হচ্ছে তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগের উন্নয়ন ফি নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ ও আন্দোলনের যথেষ্ট যৌক্তিকতা আছে বলে আমরা মনে করি।
বলা প্রয়োজন পাবলিক ফান্ডে পরিচালিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনগুলো দীর্ঘদিন যাবৎ, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত তদারকি (maintenance) মেরামত ও নির্মাণের চাহিদা নিরূপণ করে সরকারের কাছ থেকে পর্যাপ্ত বরাদ্দ আদায় করতে পারেনি। শ্রেণিকক্ষ, লাইব্রেরি, কম্পিউটার ল্যাব এমনকি পাঠদান পদ্ধতি আধুনিকায়নে কর্তৃপক্ষ কখনো মনোযোগী হয়নি। ফলে এই খাতগুলোতে ভীষণভাবে স্থবিরতা বিরাজ করছে। বহুদিন ধরে শিক্ষার্থী-শিক্ষকেরা তা কাটানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পয়োঃব্যবস্থা অপ্রতুল ও অপরিচ্ছন্ন। যা নিয়ে কেন্দ্রীয় উদ্যোগের অভাবে বিভাগগুলো হিমশিম খায়। এই সুযোগে বিশ্বব্যাঙ্কের পরামর্শে ব্যক্তিমালিকানার আদল অনুসরণ করে এই ধরনের বিভাগ উন্নয়ন ফি আদায়ের নীতিমালা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুমোদন করা হয়েছে। শিক্ষাদানের অবকাঠামো টিকিয়ে রাখা ও চালু রাখার স্বার্থে, সময়ের সাথে সাথে অর্থ সংস্থানের অভ্যস্ততা এখন বিভাগগুলোর জন্য অর্থ সংকুলানের একমাত্র বাস্তবতা হয়ে দাঁড়ালেও কেন্দ্রীয় নীতিমালা ও তা বাস্তবায়ন, দেখভালের অভাবে এই অর্থ আদায় এখন যথেচ্ছাচারের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
এই পরিস্থিতিতে আমরা মনে করি প্রথমত, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ তৈরি করে তাদের অভিযোগ শুনতে হবে এবং তাদেরকে আস্থায় নিয়ে আসন্ন ভর্তি কার্যক্রম শুরু করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, অবকাঠামোগত তদারকি ও নির্মাণ খাত শিক্ষা সহায়ক, বাস্তবসম্মতভাবে নির্ধারণ করে প্রশাসনের উচিৎ তার অর্থ বরাদ্দ পেতে সরকারের সাথে দর কষাকষি করা।
তৃতীয়ত, গবেষণা বরাদ্দ বাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
চতুর্থত, ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কিছু অর্থ সংগ্রহ করা যায়, কিন্তু তার পরিমাণ যতটা সম্ভব নিম্নমাত্রার হতে হবে যাতে তা ভর্তিচ্ছু বেশির ভাগ পরিবারের সামর্থ্যের মধ্যে থাকে। এই অর্থ কেবল সংগ্রহ করা যাবে শিক্ষার্থী কল্যাণ খাতে (খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের সহায়তা খাতে)।
পঞ্চমত, প্রতি বছরের সংগৃহীত অর্থ প্রতিবছরই খরচ করতে হবে। কোন খাতে কী খরচ হয়েছে তা স্বচ্ছতার স্বার্থে বিভাগের নোটিশ বোর্ড তথা সংশ্লিষ্ট অফিসে প্রদর্শন করতে হবে।
আনু মুহাম্মদ, নাসিম আখতার হোসাইন, মানস চৌধুরী, শরমিন্দ নীলোর্মি, মির্জা তাসলিমা, স্বাধীন সেন, রায়হান রাইন, সায়েমা খাতুন, মাহমুদুল সুমন, নাসরিন খন্দকার, রায়হান শরীফ, হিমেল বরকত, সাহিদ সুমন ও পারভীন জলি
শিক্ষক মঞ্চ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়