বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক॥ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। তবে এই পদে পুনর্নির্বাচিত হতে তাঁকে দীর্ঘ বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে।
নির্বাচনে আইভীকে শুধু বিএনপির বিরুদ্ধে নয়, লড়তে হয়েছে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের একটি অংশের বিরুদ্ধেও। সেখানকার একটি প্রভাবশালী পরিবারের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব নিরসনে খোদ প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করেছেন। ২২ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের নেতাদের নিয়ে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করলে সেখানে তাঁর সামনেই শামীম ওসমান-আইভী বিতর্কে জড়ান। সুযোগ পেলেই শামীম ওসমান কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে আইভীর নামে নালিশ করতে থাকেন। তাঁর বিরুদ্ধে নানা ভিত্তিহীন অভিযোগ আনেন শামীম ওসমান। তবে সব বাধা অতিক্রম করে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নারী হিসেবে দ্বিতীয়বার সিটি করপোরেশনের মেয়র হয়েছেন আইভী।
আইভীর প্রথম বাধা আসে দলীয় মনোনয়ন পেতে। গত ১৫ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগ মেয়র পদে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য তিনজনের নামের তালিকা কেন্দ্রে পাঠিয়েছিল। তাতে আইভীর নাম ছিল না। ছিল নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ রশীদ ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমানের নাম। তাঁরা প্রায় সবাই ছিলেন শামীম ওসমানের সমর্থক। পরে ১৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে সেলিনা হায়াৎ আইভী দলের সভাপতি শেখ হাসিনা বরাবর আবেদন করেন। পরের দিন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে মনোনয়ন দেন।
আইভী ২০০৩ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে পৌর মেয়র নির্বাচিত হয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ওই নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে প্রতিপক্ষকে পরাজিত করে তাক লাগিয়ে দেন তিনি। নারায়ণগঞ্জ পৌরসভাকে সিটি করপোরেশন ঘোষণা করার পর ২০১১ সালের প্রথম নির্বাচনে তিনি শামীম ওসমানকে বিপুল ভোটে পরাজিত করেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থন দিয়েছিল শামীম ওসমানকে। আইভী ছিলেন নাগরিক সমাজের প্রার্থী।
এই পরাজয় কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি শামীম ওসমান। এ জন্য সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়াদে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে আইভীকে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। অনেকবার প্রকাশ্যে আইভীকে গালিগালাজও করেন শামীম। তবে সব বাধা অতিক্রম করে আইভী নারায়ণগঞ্জ শহরের উন্নয়নে কাজ করতে থাকেন। শামীমকে নিবৃত্ত করতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদেরও বেগ পেতে হয়েছে।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা বলেন, ‘আমাদের সর্ব শক্তি দিয়ে শামীমকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তা-ও শতভাগ পারিনি। তবে সব বাধা পেরিয়ে আইভী জয়ী হয়েছেন, এটাই বড় ব্যাপার।’
চিকিৎসক থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া আইভী ১৯৬৬ সালের ৫ জুন নারায়ণগঞ্জের একটি রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মা মমতাজ বেগম ও বাবা সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আলী আহাম্মদ চুনকা। চুনকা পরিবারের পাঁচ সন্তানের মধ্যে আইভী হলেন প্রথম সন্তান। তিনি দেওভোগ আখড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। পরে তিনি নারায়ণগঞ্জ প্রিপারেটরি স্কুলে ভর্তি হন এবং ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। এরপর তিনি মরগ্যান বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
১৯৭৯ সালে ট্যালেন্টপুলে জুনিয়র স্কলারশিপ পান। ১৯৮২ সালে এসএসসি ও ১৯৮৪ সালে এইচএসসি পাস করেন। তিনি ১৯৮৫ সালে রাশিয়া সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানে শিক্ষা গ্রহণের জন্য ওডেসা পিরাগোভ মেডিকেল ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। ১৯৯২ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে ডক্টর অব মেডিসিন ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ১৯৯২-৯৩ সালে ঢাকা মিটফোর্ড হাসপাতালে ইন্টার্ন সম্পন্ন করেন।
আইভী তাঁর সুদীর্ঘ শিক্ষাজীবনের পর ১৯৯৩-৯৪ সালে মিটফোর্ড হাসপাতালে এবং ১৯৯৪-৯৫ সালে নারায়ণগঞ্জ ২০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে অনারারি চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন তিনি।
এরপর ১৯৯৫ সালে আইভী নিউজিল্যান্ডে পাড়ি জমান। সেখানে তিনি মেডিকেল ল্যাবরেটরি সায়েন্সের ওপর পড়াশোনা করেন। সেখান থেকে তিনি ২০০২ সালে দেশে ফিরে আসেন।
আইভী ১৯৯৫ সালের ১৫ নভেম্বর রাজবাড়ীর কাজী আহসান হায়াতের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। কাজী আহসান হায়াত নিউজিল্যান্ডে চাকরি করেন। পারিবারিক জীবনে তিনি দুই ছেলের মা। তাঁরা হলেন—কাজী সারজিল হায়াৎ ও কাজী সাদমান হায়াৎ।