জীবনটাই একটা দারুণ ম্যাট্রিক্স সিনেমা

ইবনে মিজান ।।  হলিউড এর ম্যাট্রিক্স সিনেমার সঙ্গে কম বেশি সবাই পরিচিত। যেখানে মানুষ কম্পিউটার দ্বারা তৈরি একটি ভার্চুয়াল বাস্তবতার ভেতর বসবাস করে।

আপনি যদি কিছু সময় ব্যয় করে আপনার দৈনন্দিন জীবনের ওপর মনোযোগ দেন, আপনি একটি আশ্চর্য বিষয় আবিষ্কার করতে পাবেন। তা হল আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বাস্তবতাও সিনেমা এর ভার্চুয়াল বাস্তবতার এক মহান প্রতিচ্ছায়া।

আসলে আমাদের জীবনটাই একটা দারুণ ম্যাট্রিক্স সিনেমা। কীভাবে? সেটা বোঝাতেই এই লেখার অবতারণা।

মানুষের ভার্চুয়াল বাস্তবতা কম্পিউটার দিয়ে তৈরি হয় না, মানুষের মন-ই ভার্চুয়াল বাস্তবতা তৈরি করে। মানুষের ক্রমাগত চিন্তা এবং আবেগ দ্বারাই মানুষের ভার্চুয়াল বাস্তবতা সৃষ্টি হয়। তাই আমরা আমাদের চিন্তা ও অনুভূতি’র ম্যাট্রিক্সে কারাবন্দী অবস্থায় বসবাস করি।

তাহলে দেখে নেয়া যাক দৈনন্দিন জীবনের ভার্চুয়াল বাস্তবতার ম্যাট্রিক্স এবং কীভাবেই এই ম্যাট্রিক্স কারাবন্দীতা আমাদের জীবনকে ঘিরে রেখেছে।

মহা জাগতিক স্থায়ী পরিবর্তন

matrix-77

আমরা আমাদের ইচ্ছা ও অপূর্ণ স্বপ্ন দ্বারা সবসময় তারিত থাকি। আমরা সারাজীবন টাকা, ক্ষমতা, প্রতিপত্তি, সুখী জীবন দ্বারা প্রলুব্ধ। আমাদের জীবনের লক্ষ্যে এগোতে বা কিছু অর্জন করতে সর্বদাই উচ্চাভিলাষী। আমাদের জীবনের ভয়-ই এই ক্লান্তিহীন এক অস্থিরতার তৈরি করে। আমরা কখনোই সন্তুষ্ট থাকি না, আমরা সবসময়ই কিছু না কিছু চাই, আরো ভালো কিছু চাই, বর্তমানে যা আছে তারচেয়েও বেশি চাই।

আর এভাবেই আমরা আমৃত্য আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য ছুটে বেড়াই। যখন আমরা বুঝতে পারি এই ছুটে বেড়ানো পুরোটাই অর্থহীন ছিল, তখনই আমারা জন্য প্রতিবাদী হয়ে উঠি।

এই প্রতিবাদের ধরন ও আচরণ প্রকৃতির দ্বারা সৃষ্ট। জন্ম ও মৃত্যু সাপেক্ষে এর স্থায়ী পরিবর্তন হয়ে থাকে। আমরা যে কোনো কিছুর প্রতি আকৃষ্ট হই না কেন, আমার সব কিছুই হারিয়ে ফেলি এবং খালি হাতে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাই।

আধ্যাত্মিক ইচ্ছা

matrix-22

আমরা, আমাদের জীবনে স্থায়ী নিরাপত্তা চাই। আমরা সবসময়ই এই বিশ্বের ধ্রুবক পরিবর্তনগুলোকে খুঁজে পেতে চাই। আর তাই জাগতিক পরিবর্তনগুলোকে খোঁজার জন্য আমরা আধ্যাত্মিকতার অন্বেষী হয়ে উঠি।

এই আধ্যাত্মিক অনুসন্ধান এর জন্য আমার আমাদের মনকে ব্যবহার করি। এটা ভাবা হয় মানুষের অহং মনই বুঝতে চায় এই মনের পেছনে কী কাজ করে। আর এভাবেই মানুষের মনের ভেতরে তৈরি হয় এক প্রকার প্রতিচ্ছায়া, সুখ, মানসিক চাহিদা।

মনের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জন্ম নেয় মানসিক প্রতিচ্ছায়া। এর জন্য দরকার পরে তথ্যের, যা আমরা ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতার বিভিন্ন বই, লোক মুখে শোনা কথা, মানুষের মতামত থেকে একসঙ্গে জড়ো করি।

এই মানসিক প্রতিচ্ছায়াগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের লক্ষ্য পুরণে অনুপ্রাণিত করে। এই আধ্যাত্মিক উদ্দেশ্যগুলো পূরণ আমাদের ক্ষণস্থায়ী সন্তুষ্টি মাত্র। তারপরও আমাদের মন আবার নতুন লক্ষ্য পুরণের জন্য তাড়িত করে।

থেমে যাওয়া

matrix-33

আমার ক্লান্ত না হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকি, পরিশেষে সত্যটাকে বুঝতে পারি আর আধ্যাত্মিকতা থেকে থেমে যাই। আমাদের মধ্যে উপলব্দি আসে আমরা যা খোঁজার জন্য ছুটে চলছি তা আমাদের ভেতরেই বিরাজ করছে। আমরা আমাদের মনের অগোচরে এই থেমে যাওয়াকে উপলব্ধি করি ও আমাদের মাঝে এক নিরব অভিজ্ঞতা সৃষ্টি হয়।

ভেতরের যাত্রা

matrix-66

মনকে অতিক্রম করে ম্যাট্রিক্স থেকে আমাদের বের হওয়ার জন্য আমাদের ভেতর একটি অভ্যন্তরীণ যাত্রা শুরু হয়। যখন আমরা এই যাত্রা শুরু করি, আমরা দুনিয়াকে পিছনে ফেলে চলে যেতে থাকি এবং আমাদের অগ্রগতির পথের সকল বাধাকে অতক্রম করে ফেলি। তখন আমরা গুরুত্বহীন বিষয়গুলোকে বাদ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর দিকে মনোযোগ দেই। আর এভাবেই আমাদের মাঝে আসে মানসিক পরিশুদ্ধি।

আর এই মানসিক পরিশুদ্ধির সময়ই আমরা মুখোমুখি হই আমাদের চিন্তা, ধারণা, আবেগের সুবিশাল ছায়া জালের। একটা সময় পর আমারা বুঝতে পারি আমাদের অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলোকে আমাদের জীবন থেকে বাদ দেয়া উচিত, যা আসলেই মিছামিছি ছিল। তখন আমরা পুরাপুরি একা হয়ে পরি। কিন্তু তখনো আমাদের নিজের সঙ্গে নিজের পথ চলা শেষ হয়না। আমরা এক প্রতিছায়ার আবদ্ধ থেকেই যাই।

জেগে ওঠা

 

matrix-44

নিজেদের অস্তিত্বের চেতনা জাগরণই হচ্ছে নিজের ভেতরে জেগে ওঠা। পরিশুদ্ধির পর নিজের ভেতর আর কিছুই থাকে না। আমাদের অভ্যন্তরীণ জাগরণে যাই হোক না কেন আমাদের সেটাই উপলব্ধি করা উচিত। আমাদের উপলব্ধি করা দরকার আমাদের জীবন আমাদের কী দিচ্ছে। অতীত অভিজ্ঞতা যেন কখনোই ভবিষ্যতের বোঝা না হয়।

তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে আমার কী আমাদের বাস্তব জীবনের ম্যাট্রিক্স থেকে পরিত্রাণ পেয়েছি?

প্রত্যাবর্তন

matrix-55

এই পদক্ষেপ আমাদের আবার সেই যাত্রা শুরুর স্থানে নিয়ে যাবে। আমরা আবার ফিরে যাবো সেই দৈনন্দিন জীবনের ম্যাট্রিক্সে। যেখানে আমাদের অন্তর্হিত অহংবোধ, স্বার্থপরতা আর থাকবে না। স্পন্দিত শূন্যতায় নিজের অস্তিত্বকে আবার ফিরে পাওয়া যাবে।

প্রত্যাবর্তন এর মাধ্যমে সবার মধ্যে বিরাজ করবে পরিবর্তন। তখন কেউ তর্কের সঙ্গে কোনো কিছুর পেছনে ছুটবে না। আর আমরা কখনোই আমাদের পরিচয় থেকে হারিয়ে যাব না।

এখন আমরা সব কিছু থেকে মুক্ত। বিশ্ব একটি রোমাঞকর স্থানে পরিণত হয়ে যাবে। জীবনের সকল ঝড় ঝঞ্ঝাট থেকে আলাদা হয়ে আমরা মহা বিশ্বের সঙ্গে মিলে মিশে একাকার হয়ে যাই।

অন্যদিকে আমরা জাগরণ আর পরিবর্তনের দ্বারা একে অন্যকে সাহায্য করতে থাকবো, আর আমাদের অস্তিত্ব ও সহানুভূতি একে অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারবো।

 

 

 

 

 

 

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts