সৌদি আরবে পরিবর্তনের হাওয়া

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক সৌদিরা এখন পরিবর্তনের কথা বলছে বছরের হিসেবে নয়, মাসে। সফল এক সৌদি নারী ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হচ্ছিল মেয়েদের গাড়ি চালানোর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার বিষয়ে।

“আমি আমার এক পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে বাজি ধরেছিলাম যে এ বছরের প্রথম ছয় মাসের মধ্যে এই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে। কিন্তু আমার পুরুষ সহকর্মীর ধারণা এটা আসলে ঘটবে এ বছরের শেষ ছয় মাসে।”

“কিন্তু এখন আমার মনে হচ্ছে এটা আসলে ঘটবে সামনের বছর। আর হয়তো শুধু চল্লিশের বেশি বয়সী নারীদেরই গাড়ি চালানোার অনুমতি দেয়া হবে”, বললেন এই নারী ব্যবসায়ী।

রিয়াদের রাজকীয় পরিমন্ডলেও অবশ্য এখন এমন সম্ভাবনার কথা শোনা যাচ্ছে। অনেকে বলাবলি করছে, তরুণীদেরও হয়তো গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়া হবে।

সৌদি আরবে রক্ষণশীল ধর্মীয় নেতাদের নিয়ন্ত্রণ এতটাই কঠোর যে সেখান পরিবর্তনের গতি খুবই ধীর।

কিন্তু বিগত বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক বাজারে যেভাবে তেলের দাম পড়ে গেছে, তা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল উৎপাদনকারী এই দেশটির শাসকদের বাধ্য করছে পরিবর্তনের গতি বাড়াতে।

তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় সৌদি আরবের আয় কমে গেছে অর্ধেক। ফলে তাদের এখন অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে নতুন অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে।

সৌদি আরবের আয়ের ৯০ শতাংশ আসে তেল বিক্রি থেকে।

সৌদি সরকার ‘ভিশন ২০৩০’ নামে এক মহাপরিকল্পনা ঘোষণা করেছে গত বছর। এর পেছনে আছেন ৩১ বছর বয়সী সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। মোটা বেতনে গাদা গাদা বিদেশি কনসালট্যান্ট নিয়োগ করে তৈরি করা হয়েছে এই মহাপরিকল্পনা।

সৌদি যুবরাজ এবং তাঁকে ঘিরে থাকা লোকজন ভালো করেই জানেন যে একদিন তাদের তেলের কূপগুলো শুকিয়ে যাবে। আর হয়তো তারও অনেক আগে ইলেকট্রিক কারের ব্যাপক প্রচলন ঘটবে। ফলে তেলের চাহিদা কমবে।

“ভিশন ২০৩০ এবং এর লক্ষ্য অর্জন করা এজন্যেই এতটা গুরুত্বপূণ”, বলছিলেন সৌদি তেলমন্ত্রী খালিদ আল ফালিহ।

“এই মহাপরিকল্পনার কতটা আমরা ২০৩০ সাল নাগাদ অর্জন করতে পারি, সেটা আমরা দেখতে চাই।”

অর্থনৈতিক চাপের মুখে সৌদি আরবে সরকারী কাজে মোটা অংকের বেতন এবং দরাজ হাতে দেয়া সুযোগ সুবিধা সংকুচিত করে আনা হচ্ছে। অর্থনীতিতে বেসরকারী খাতের গুরুত্ব বাড়ছে এবং ভবিষ্যতে সেখান থেকেই বেশিরভাগ প্রবৃদ্ধি আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু এখনো সেখানে কোন গতি দেখা যাচ্ছে না।

সৌদি আরবের ৩১ বছরের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বর্তমান বাদশাহ সালমানের সবচেয়ে প্রিয় সন্তান বলে পরিচিত। যুবরাজ জানেন, পরিবর্তনের জন্য সময় ঘনিয়ে আসছে দ্রুত।

সৌদি আরবের মোট জনসংখ্যার দুই তৃতীয়াংশ মানুষের বয়স তাঁর সমান বা তার চেয়ে কম। সরকারী বৃত্তির আওতায় হাজার হাজার সৌদি ছেলে-মেয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে এসেছে।

সৌদি আরবে কোন খাবার দোকানে একজন পুরুষ কেবল তার আত্মীয় নারীর সঙ্গে এক টেবিলে বসতে পারবেন। কিন্তু এক বছর আগের সফরের তুলনায় এবার যেন কিছু পরিবর্তন দেখতে পেলাম।

সৌদি আরবের রাস্তায় দেখা যেত যে কুখ্যাত ধর্মীয় পুলিশ, বা মুতাওয়া, যাদের কাজ ছিল পাপাচার বন্ধ করা আর পূণ্য ফেরি করে বেড়ানো, তাদের এবার চোখে পড়লো না।

বিবিসি

 

 

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts