বিডি মেট্রোনিউজ || এশিয়ার বৃহত্তম হাওড় মৌলভীবাজারের হাকালুকি। প্রতিবছরই শীতে অসংখ্য অতিথি পাখি ভীড় জমায় এই হাওড়ে। শতাধিক প্রজাতির পাখির নিরাপদ আশ্রয়স্থল এখন আগের অবস্থায় নেই। পাখিরা নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছে। এ কারণে বাংলাদেশে তাদের ভ্রমণ এখন কমে যাচ্ছে। পাখিরা একবার যেখানে ঠিকানা গড়ে সহজে তা ছাড়তে চায় না। প্রতিকূল পরিবেশেও অতিথি পাখিদের আগমন পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।
হাকালুকিসহ বাংলাদেশের অনেক বিল-ঝিল, হৃদ, জলাশয়, অনেক বাড়ির গাছগাছালিতেও পাখিরা সাময়িক বসত গড়ে। সংখ্যায় কমলেও এবারও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। পাখি শিকারীরা যেমনি তৎপর হয়ে উঠেছে। পাখি বিশেষজ্ঞরাও বিশেষভাবে তৎপর। তাদের কার্যক্রম অবশ্য ভিন্ন মাত্রায়। তারা গবেষণা চালাচ্ছে কোন কোন প্রজাতির, কি ধরণের বৈশিষ্টময় পাখিরা আসছে তাদের সনাক্ত করা। তারা ঘুরে ফিরে বাংলাদেশে ফিরে আসে কিনা যাচাই করা। এজন্য বিশেষজ্ঞরা পাখিদের গায়ে বিশেষ ধরনের রিং পড়িয়ে দেন।
বাংলাদেশ বার্ড কাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, দেশের খ্যাতিমান পাখি গবেষক ড. ইনাম আল হক হাকালুকিসহ বিভিন্ন হাওড়-বাওড় আসা অতিথি পাখিদের নিয়ে গবেষণা করছেন। গতবছর তারা হাকালুকিতে বার্ড রিংগিং কার্যক্রম চালান। সাথে ছিলেন যুক্তরাজ্যের প্রখ্যাত বার্ড রিংগার স্টিভেন স্যামওয়ার্থ ও বিল জোন্স। তারা বাংলাদেশের রিংগারদের প্রশিক্ষণ দেন। গত বছর শীতে ৩৩ প্রজাতির ৩৭০টি পাখি ধরে পায়ে সনাক্তকারী রিং পড়িয়ে ছেড়ে দেন। পাখিদের অজানা তথ্য জানা যায় এই প্রক্রিয়ায়। রিংয়ে এমন কিছু ইলেকট্রনিক উপাদান থাকে যার সাহায্যে পাখি বিশেষজ্ঞরা ইন্টারনেটে ঢুকে পাখির অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারেন।
হাকালুকিতে আসা পাখিদের পায়ে রিং লাগাতে গিয়ে পাখি বিশেষজ্ঞরা অত্যন্ত বিরল প্রজাতির পাখিরও সন্ধান পেয়েছেন। পাতারি ফুটকি, মেটে ফুটকি, তিলাঝাড় ফুপকি, পালাসি ফড়িং ফুটকি, বৈকাল ঝাড় ফুটকি, লালচাঁদি ফুটকি নামের অতি বিরল প্রজাতির পাখিও পাওয়া যায়।
অতি সূক্ষ্ম এক প্রকারের নেট টাঙ্গিয়ে পাখি ধরা হয়। এই জাল এতই সূক্ষ্ম যে পাখিদের চোখে তা ধরা পড়ে না। এই জাল আমদানি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় কেবলমাত্র বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবকে এই জাল আমদানি ও ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে লম্বালম্বিভাবে পাখিদের বিচরণ ক্ষেত্রে এই নেট টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়। পাখিরা ভীড় হওয়ার সময় জালে আটকে পড়ে।
পাখি বিশেষজ্ঞরা অতি সতর্কতার সাথে জাল থেকে বের করে পাখির পাখ, পা, নখসহ শরীরের বিভিন্ন অংশের মাপ নেন। এই কাজে ব্যবহার করা হয় সøাইড কালিপার্স নামে এক সুক্ষ্ম মাপ যন্ত্র। মাপ অনুযায়ী নির্দিষ্ট আকারের রিং পেচিয়ে পাখির পায়ে লাগানো হয়। রিংয়ের গায়ে একটি নম্বর থাকে। রিংয়ের সাহায্যে জানা যায় পাখির বিরল ইতিহাস। বাংলাদেশে আসা পাখি সাইবেরিয়ায় ফিরে ধরা পড়লে বা মারা গেলে তারা পায়ের রিংয়ের তথ্য ঘেঁটে জানা যাবে পাখিটি বাংলাদেশেও এসেছিল। ৩৩ প্রজাতির ৩৭০টি পাখির পায়ে গতবছর এই রিং পড়িয়ে দেয়া হয়।
২০০৯ সালে ১৬টি পাখির গায়ে স্যাটালাইট ট্রান্সমিটার ও ৩৪টি পাখির সায়ে রিং লাগানো হয়। এবারের শীতেও বার্ড কাব একই কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। আগে রিং পড়ানো পাখিরা আসছে কিনা তাও পর্যবেক্ষণ করবেন তারা।