বিডি মেট্রোনিউজ || নৌকা-ধানের শীষের লড়াইয়ে বিচ্ছিন্ন গোলযোগ আর অনিয়মের মধ্য দিয়ে শেষ হল বাংলাদেশের ২৩৩ পৌরসভায় নির্বাচন ।
বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এসব পৌর এলাকাগুলোর সাড়ে ৩ হাজার কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের পর শুরু হয়েছে গণনা। ভোট গণনা শেষ হলে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে নির্বাচনের বেসরকারি ফল ঘোষণা করা বলে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তরা জানিয়েছেন।
সব পৌরসভায় একজন করে মেয়র, সংরক্ষিত ৭৩১টি ও সাধারণ কাউন্সিলরের ২ হাজার ১৯৩টি পদের এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন ১২ হাজার প্রার্থী। এর মধ্যে ২২২টিতে দুই বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা মুখোমুখি লড়াইয়ে ছিলেন।
৭০ লাখ ৯৯ হাজার ১৪৪ জন ভোটারের মধ্যে কতজন শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রে গিয়ে তাদের মতামত দিয়েছেন, সে তথ্য জানাতে পারেনি ইসি।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশনার মো. আবু হাফিজ বলেন, “ভোটের হার ভালোই হবে। নারী ভোটারের উপস্থিতিও বেশ। তবে এ মুহূর্তে এ নিয়ে খোঁজ নিচ্ছি না আমরা। আইন-শৃঙ্খলাটাই এখন মুখ্য।”
ভোটে ‘অনিয়মের সঙ্গে সম্পৃক্ততা’র অভিযোগে দুই জেলায় পুলিশের পাঁচ কর্মকর্তাকে এদিন সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ দিতে হয়েছে ইসিকে।
আবু হাফিজ বলেন, “আমরা সন্তুষ্ট। তবে আরও ভাল হলে আরও খুশি হতাম। দুই একটি জায়গায় হামলা-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই।
সকালে ২৩৪ পৌরসভায় নির্বাচন শুরু হলেও নরসিংদীর মাধবদী পৌরসভার একটি কেন্দ্র দখল করে ব্যালটে সিল মারার ঘটনা ঘটে। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে হামলা ও বোমাবাজিও হয়। পরে বিকালে ওই পৌরসভার ভোট স্থগিতের কথা জানান কমিশনার আবু হাফিজ।
এছাড়া অন্তত ২০টি পৌরসভায় বিভিন্ন কেন্দ্রে গোলযোগ হয়েছে, সাতকানিয়া পৌরসভায় ভোটে কেন্দ্রের দেড় কিলোমিটার দূরে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন একজন।
ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করার অভিযোগ আর সংঘর্ষের কারণে ১১ পৌরসভার ১৭টি কেন্দ্র স্থগিত করেছে কমিশন। এর মধ্যে চট্টগ্রামের চন্দনাইশে তিনটি, নীলফামারীর সৈয়দপুরে তিনটি, মাদারীপুরের কালকিনিতে দুটি, কুড়িগ্রামের উলিপুরে দুটি এবং কুমিল্লার বরুড়া, ময়মনসিংহের ভালুকা, জামালপুরের সরিষাবাড়ী, বরগুনা, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ, নড়াইলের কালিয়া এবং পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পৌরসভার একটি করে কেন্দ্র রয়েছে।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে কেন্দ্র দখল, এজেন্টদের বের করে দেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে চট্টগ্রামের তিন পৌরসভায় বিএনপির তিনজন এবং বরগুনায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীসহ মোট ২৩ মেয়র প্রার্থী ভোট চলাকালেই বর্জনের ঘোষণা দেন।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি গত এপ্রিল ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটির নির্বাচনের মাঝপথে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিল। এবার পৌর ভোটে কেন্দ্রীয়ভাবে তেমন কোনো ঘোষণা দলটি না দিলেও ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ অনেক।
সকালে ভোট শুরুর দেড় ঘণ্টার মাথায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, নির্বাচনের ফল পক্ষে নিতে ‘সরকারি কারসাজির’ যে আশঙ্কা তারা প্রকাশ করে আসছিল, ভোটের মাঠে দিনের শুরুতেই তা ‘সত্যি’ হতে শুরু করেছে।
এরপর বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ওসমান ফারুকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ইসিতে গিয়ে দেড় ঘণ্টায় অন্তত ৬০টি কেন্দ্র দখলের অভিযোগ জানিয়ে আসেন।
অন্যদিক দুপুরে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ক্ষমতাসীন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, ‘পরাজয়ের আশঙ্কায়’ বিএনপির প্রার্থীরাই বিভিন্ন স্থানে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিচ্ছে।
এরপর আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম ইসিতে গিয়ে বলেন, সারা দেশে ‘সুন্দর, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর’ পরিবেশে পৌরসভা নির্বাচন চললেও বিএনপি-জামায়াত ‘অধ্যুষিত’ কয়েকটি স্থানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ‘বাড়াবাড়ি’ করায় ‘বিচ্ছিন্ন কিছু’ ঘটনা ঘটেছে।
ভোটের প্রচারে অন্তত অর্ধশতাধিক পৌরসভায় হামলা-সংঘর্ষের পর এবার ভোটের দিন ছিল ব্যাপক নিরাপত্তার আয়োজন। জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে এই ভোটের খুব বেশি প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা না থাকলেও প্রধান দুই দল এই ভোটকে নিয়েছিল তাদের মর্যাদার লড়াই হিসেবে।
২০১১ সালে চার ধাপে আড়াই শতাধিক পৌরসভায় ভোটে প্রার্থীরা দলের সমর্থন নিয়ে ভোট করেছিল। তাতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিজয়ী মেয়র প্রার্থী ছিলেন প্রায় সমান-সমান।
এবার সাতটি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের সাতজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।