কমরেড জসিম মণ্ডলের চিরপ্রস্থান

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ প্রবীণ রাজনীতিক ও প্রখ্যাত শ্রমিকনেতা কমরেড জসিম উদ্দিন মণ্ডল আর নেই । রাজধানীর পান্থপথের একটি হাসপাতালে আজ ভোরে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

তিনি ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ও পাবনার অতি পরিচিত মুখ। তিনি বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। গত বৃহস্পতিবার সকালে ঈশ্বরদী শহরের পশ্চিম টেংরীর তার নিজ বাড়ি থেকে সিপিবির তত্ত্বাবধানে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। গতকাল রোববার দুপুর থেকে তার অবস্থার অবনতি ঘটে। তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। জসিম মণ্ডল পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলের জনক। স্ত্রী জাহানারা বেগম গত বছর ১৩ জানুয়ারি এবং একমাত্র ছেলে কয়েক বছর আগে মারা যান।

মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক জসিম উদ্দিন মণ্ডল ১৯২৪ সালে বর্তমান কুষ্টিয়া জেলা ও তৎকালীন অবিভক্ত ভারতের নদীয়া জেলার কালিদাসপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৯ সালে তিনি রেলইঞ্জিনে কয়লা ফেলার চাকরি পান। সে সময় শ্রমিক শোষণের চিত্র দেখে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন। তিনি ব্রিটিশ রেল কোম্পানির শ্রমিক শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন।

জসিম উদ্দিন মণ্ডল ভারতের মহাত্মা গান্ধী, বাঘাযতীন, প্রীতিলতা, জ্যোতি বসু, কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য, কবি কাজী নজরুল ইসলামসহ প্রখ্যাত মানুষের সান্নিধ্য পান।

তিনি কমিউনিস্ট পার্টির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। আন্দোলন করতে গিয়ে একাধিকবার কারাবরণ ও ব্রিটিশ সরকারের নির্যাতনের শিকার হন। আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে তিনি মোট ১৯ বছর কারাভোগ করেন।

জসিম উদ্দিন মণ্ডলের নিজস্ব কোনো বাড়ি নেই। বন্দোবস্ত নেওয়া সরকারি এক খণ্ড জায়গায় তিনি বসবাস করতেন। বাড়ির পাশেই নিজ উদ্যোগে ১৯৯৬ সালে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে তোলেন। পরবর্তী সময় বিদ্যালয়টি সরকারীকরণ হয়। বিদ্যালয়ের নাম পশ্চিম টেংরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, আগামীকাল মঙ্গলবার পল্টনে সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের নেতা-কর্মীরা তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। জোহর নামাজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। মঙ্গলবার রাতে তার মরদেহ ঈশ্বরদীতে আনা হবে। পরদিন বুধবার জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হবে।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts