প্রভা পলি’র এক থোকা গোলাপ কবিতা

// সম্পর্কের সাতকাহন

তিন কবুলে হয়কি বান্ধা ভালবাসার ঘর
পীরিতেরও তীর্থভূমি বনবে কি অন্তর
সাতটি পাঁকে ঘুরান দিয়ে সিঁদুর লাগায় দিলে
ভালবাসার ঘরবসতি হয়কি দুজন মিলে –

সাদা কালো পোষাক পরে গীর্জায় দুজন গেলে
বিয়ে শাদী হতেই পারে তাতে ভালবাসা কি মেলে
লোকাচারের মাঝেই ভবে সম্পর্ক খোঁজ যদি
জোয়ার ভাটা বন্ধ করেই দাঁড়িয়ে যাবেই নদী –

প্রেম পিরিতির লেনাদেনার এমনই সমাহার
না দেখিলেই একটা নজর জগতও আন্ধার
চোখের পাতা ভরা শ্রাবণ মেঘের উল্লাস
রাজার রাজা রাজ্য ছেড়ে ঘটায় সর্বনাশ –

ভালবাসার সব খেলাতে প্রথা অর্থহীন
দুই হৃদয়ে হৃদয় বীণা বাজায়ই শুধু বীণ
শাসন বারণ লোকনিন্দা যেন অহেতুক
প্রেমিক যুগল প্রেমের মাঝেই পেয়ে থাকে সুখ –

লোকাচার কি প্রথা সকল চলতে পারে তবে
সুষ্ঠু সমাজ নির্মাণে মতের মূল্য দিতে হবে
হঠাৎ করে কলমা পড়া সিঁদুর দেয়ার কথা
অনেকটা যে সহমরণ যেন সতীদাহ প্রথা –

সম্পর্কতে গড়বে যারা আগামী ভবিষ্যৎ
ক্ষতিটাকি যদি তাদের থাকেই খুশির মত
নাহলেইতো থাকবে না সে ভালবাসার ঘর
যৌন দাস আর দাসিই হবে দুজন জীবনভর ।

 

১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

 

// যোজনের বিয়োগ

যোজন যোজন দূরে থাকলেও বিরহি যক্ষ উড়বেই
কোটি কোটি প্রেমপত্র নিয়ে দশদিক মোর ঘুরবেই
আকাশ বাদলে সাজুক অথবা সূর্য থাকুক গরম
প্রেম নিবেদনে দেখেছি মানুষ কতটা যে বেসরম –

ধরতে পারেনা পড়তে পারেনা তবু কলংক খোঁজে
আজব আজব ভাবে তারা সব চরিত্রকেই বোঝে
তাই বলে কি আলোতে আমার পৃথিবীটা ভরাবো না!
চাঁদ বলে কি জোছনা বিলিয়ে প্রকৃতিটা গড়বো না !

নিন্দুকদের মুখে দিয়ে ছাই সুন্দরী চাঁদ বলে
কৃষ্ণপক্ষে কিছু দূরে থেকে শুক্লাপক্ষে জ্বলে
এত কাটা খেয়ে হাসে তবু চাঁদ হাসি দেখে প্রেম ভাবে
নিজের অসভ্যতায় নিজেই ভাসে যে কি খোঁয়াবে –

সুন্দরী নারী তোমরাই বল তোমরা কি আছো ভালো
এমন মানুষই ডাইনে বায়ে ঘৃণার আগুন জ্বালো
কথাকে যারা প্রেম মনে করে ফুলশয্যা ভেবে হাসে হাসি
বন্ধুরা তারা নিজের গলায় নিজেই দিয়েছে ফাঁসি –

সোনার ধরার প্রতিটি ধুলিকণা কী যে মিষ্টি দেখোনা
কিছু অমানুষ করবে অমনই সেকথা মনে রেখোনা ।।

 

২১ আগস্ট, ২০১৭

 

// কুন্ঞ্জবনে নীলকন্ঠ

হাত ছাড়ো- এযে চন্দ্রগ্রহণ -ভাল নেই মন
দূরবীন হাতে নিয়ে দেখো এ মরমী লগন
রাহু কেতুর প্রভাব তুমি ফেলেছ ইচ্ছে করে
তুঙ্গে ছিল বৃহস্পতি তুমি নামালে সমরে –

অরণ্যে রোদন এখন যে বৃথাই মনে হয়
সোনার কাঠি রূপোর কাঠির কাজ এসব নয়
নহবত সানাই বাদক কোথায় আবার পাবে
নীলকন্ঠ পাখি এখন নীড়েই ফেরত যাবে –

পালঙ্কটা শূন্য থাকুক ভাবনা বরবাদ
স্বপ্নে দেখা রাজপ্রাসাদের মিটলো নাতো স্বাদ
বৈদ্যরাজের যাদুর মলম শোন মহারাজ
কোনভাবেই আজ কিন্তু করবে না আর কাজ –

লুসাই পাহাড় যেমন তেমন বাক্য বলেছ
তীর-বর্শা মেরেও পাঁজর দু’পায়েই দলেছ
কুঞ্জবনে থাকব না আর ছাড়ো আমার হাত
মন ভোমরার গুঞ্জরনে কাটাবো না রাত –

প্রণয় তোমার ভীষণ বাজে ভালবাসার জাল
কইতে নারি সইতে নারি হারাই আমার তাল
দোহাই দোহাই হাতটা ছাড়ো আর সুযোগ নয়
ওমা ওকি? তোমার চোখে জল? ওকি সহ্য হয় -!!!

 

১৬ আগস্ট, ২০১৭

 

// অলক্ষির ইতিকথা

অঘটনঘটনপটিয়সী তুই লক্ষীছাড়ারে মেয়ে
তোকে নিয়েইতো সকল বিপদ দেখনা জগতে চেয়ে
জ্বালা যন্ত্রণা ভরা তুই সব সংসার দেশ ধরা
তোর কারণেই সারাটা পৃথিবী দ্রোহের আগুনে ভরা

শিশুকালে তুই ঠিক যেন সেই স্বর্গের প্রিয় দূত
ডাঙ্গর হওয়ার সাথে হতে থাকে আচরণ অদ্ভুত
নয়নের ছোড়া একটি বাণেই ভাঙছে সাধুর ধ্যান
রূপ যৌবন বুঝিস না তুই নেই তোর সেই জ্ঞান

মৌল সবাই বলে তাই তুই ঘরে কর উৎসব
বাইরে গেলেই হয়ে যাস তুই নিষিদ্ধ গন্ধব
তোর হাটা-চলা-হাসি মাধুর্যে প্রকৃতিও গান গায়
ফুল ফুটে উঠে ভোমরাও ছোটে পুরুষরা ভয় পায়

তোরে নিয়ে চলে হরেক কাণ্ড চলে কত লেখালেখি
মহাকাব্যের ছত্রে ছত্রে তোর ছবিইতো দেখি
নন্দঘোষের মত সব দোষ তোরই ঘাড়ে বর্তায়
বিমুঢ় যে তুই হায়রে বেচারি চোখ ভাসে বন্যায়

এখানে যাবিনা ওখানে যাবিনা এইভাবে কাজ কর
পুরুষ প্রজাতি গড়েছে নিয়ম গড়েনিতো ঈশ্বর
বউ শালী বোন পুরুষ বানায় বেশ্যাও তারা গড়ে
চুপ থাকবি একদম নচেৎ অভিযোগে যাবি মরে

চোখ দিয়ে ফেলে নোনতা পানি হালকা না হয় হবি
সান্তনা নিবি এইভাবে নয় দেখবি মরার ছবি
পৃথিবীর সব নষ্টের মূলে চাবিকাঠি তুই নারী
সাগরের পানি তোর চোখে এনে পূণ্য করতে পারি ।

 

৩০ জুন, ২০১৭

 

// জলবতির পয়গাম

সুস্বাগতম জলবতী ঋতু দাও দাও পয়গাম
সূর্যমুখীর অঙ্গদ আজ বনময়ূরির ধাম –
জলজ ফুলেরা মহা আনন্দে
প্রকৃতি নাচায় ছন্দে গন্ধে
বাবুই পাখির ঝুলানো কুটিরে ঝোলে স্বপ্নের খাম
নিন্দার তীর ছোড়ে নিন্দুক করে মহা বদনাম।

চাঁদটাকে ধরে দু’চোখের নীড়ে আটকাবো আজ ঠিক
ভালবাসা দিয়ে জোছনা ভরে উড়াবো দশদিক –
আউশের ক্ষেতে যৌবন ঢেলে
ফলাবো ফসল প্রেমে হেসে খেলে
সুজন সখিরা ফেরারি পথে অপূর্ব বাঁক নিক
রূপোর ইলিশ উল্লাসি হয়ে দেখাক কিছু ঝিলিক।

দেয়ার ঢোলেই বাংলা বোলেই অভিসার আজ রাতে
মেঘদূতদের পুনর্মিলন জলপরীদের সাথে-
কাড়াকাড়ি হবে বাড়াবাড়ি হবে
সব ভুলে সব একসাথে রবে
নিয়ম ভাঙ্গার কোন পথ নেই ছাড়াছাড়ি কভু নয়
বিস্ময় নিয়ে অবাক পৃথিবী দেখবে তা নিশ্চয় ।

এসো জলবতী এসো ঋতুবতী এসো এসো বরষা-
সুস্বাগতম বকুল কদম রেখো তব ভরসা।।

 

২৩ জুন, ২০১৭

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts