ভোলা-৪ আসনের নির্বাচনী হাওয়া

বিডিমেট্রোনিউজ, চরফ্যাশন (ভোলা) ॥  চরফ্যাশন এবং মনপুরা উপজেলা নিয়ে গঠিত ভোলা-৪ আসন। দুই উপজেলার কোনো বাসিন্দা যদি ৬-৭ বছর পর এলাকায় ফেরেন তাহলে তার পক্ষে এলাকা চেনাই কঠিন হয়ে পড়বে। জ্যাকবের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ এলাকাজুড়ে।

১টি পৌরসভা ও ২৫টি ইউনিয়ন নিয়ে এ আসনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৮৮১। এ আসনে কোনো দলই একক আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি অতীতে। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় গেলেও এখানে এমপি হন আওয়ামী লীগের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম। তার আকস্মিক মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে বিজয়ী হন আরেক আওয়ামী লীগ নেতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ডাকসুর এক সময়কার ডাকসাইটে নেতা বিএনপির নাজিম উদ্দিন আলম এসে পাল্টে দেন সব হিসাব। ১৯৯৬ সালে বিএনপির জন্য জয় ছিনিয়ে নেন তিনি। ২০০১ সালেও বিজয় ধরে রাখেন আলম। ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে আবারও এমপি হন তিনি। শেষ পর্যন্ত ওয়ান-ইলেভেনের সময় বিতর্কিত ভূমিকার কারণে জনপ্রিয়তা হারান আলম। ২০০৮ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তরুণ নেতা সাবেক এমপি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলামের ছেলে আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের কাছে হেরে যান তিনি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হন জ্যাকব। দায়িত্ব পান বন ও পরিবেশ উপমন্ত্রীর।

এ এলাকাকে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত করিয়েছেন জ্যাকব। এলাকায় কোনো কাঁচা সড়ক নেই। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন পাকা করা হয়েছে।

জ্যাকবের এ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিপরীতে কোন ইস্যু নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামবে বিএনপি, জানতে চাওয়া হয় বিএনপির সাবেক এমপি নাজিম উদ্দিন আলমের কাছে। তিনি বলেন, ‘আমি এমপি থাকাবস্থায় যেসব সড়ক, ভবন করেছি তার ওপরই লেপ-পোছ দিচ্ছেন বর্তমান এমপি। সেখানকার সব অবকাঠামো আমি তৈরি করে এসেছি।’

তিনি বলেন, ভোলা-৪ আসনের সর্বস্তরের মানুষ বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে। বিএনপি আমায় মনোনয়ন দেবে এ ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। এ নিয়ে চিন্তা করার কোনো কারণ নেই।’

বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চাইছেন সাবেক ছাত্রদল নেতা এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম নয়ন ।

দলের মনোনয়ন চাওয়া প্রসঙ্গে নয়ন বলেন, ‘ভোলা-৪ বিএনপির দুর্গ। তারপরও যখন সেখানে দল পরাজিত হয় তখন বুঝতে হবে, প্রার্থীর মধ্যে কোথাও গলদ হয়েছে। তাছাড়া বারবার এমপি হওয়া নেতার গুণের পাশাপাশি দোষের খবরগুলোও জানা হয়ে যায় সাধারণ মানুষের। এমপি জ্যাকবকে ঠেকাতে ক্লিন ইমেজের তরুণ নেতৃত্ব প্রয়োজন। আমি আশা করছি, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এবং বর্তমান প্রজন্মের অহংকার তারেক রহমান এসব বিষয় নিশ্চয়ই বিবেচনা করবেন। আমি দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। বাকি সিদ্ধান্ত নেবে দল।’

আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির উল্লিখিত নেতাদের পাশাপাশি এখানে দলীয় মনোনয়নে নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন জাতীয় পার্টির ৩ নেতা। এরা হলেন : জাতীয় পার্টির জেলা সভাপতি কেফায়েত উল্লাহ নজিব এবং দু’জন সহসভাপতি যথাক্রমে আবদুল মান্নান এবং মো. মফিজ মিয়া। মনোনয়নের মাঠে ৩ জন থাকলেও একটি বিষয়ে তারা একমত- দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তার পক্ষেই নির্বাচনী লড়াইয়ে নামবেন বাকিরা।

এ ছাড়া চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতা অ্যাডভোকেট মাওলানা মো. মুহিব্বুল্লাহ প্রায় দেড় বছর ধরে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। দলের মনপুরা উপজেলা মুজাহিদ কমিটির সভাপতি ডা. মো. মোতালেব জানান, ‘প্রার্থী হিসেবে মাঠে কাজ করছেন মুহিব্বুল্লাহ। আশা করি নির্বাচনী মাঠে আমাদের দলের জনসমর্থনের বিষয়টি পরিষ্কারভাবে দেখতে পারবেন সবাই।’

অ্যাডভোকেট মাওলানা মো. মুহিব্বুল্লাহ বলেন, দেশের স্থায়ী শান্তি, মানবতার মুক্তি, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা, সমৃদ্ধশালী কল্যান রাস্ট্র প্রতিষ্ঠা ও সন্ত্রাস দুর্নীতি দুঃশাসন নির্মুলে ইসলামকে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিজয়ী করার জন্য পীর সাহেব চরমোনাইর নেতৃত্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোলা-৪ আসনে প্রার্থী হয়েছি।

তিনি বলেন, চরফ্যাশন এবং মনপুরার মানুষ আজ রাজনৈতিকভাবে বাকরুদ্ধ, তারা এ অবস্থা থেকে মুক্তি চায়।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts