জাবির সাংবাদিকতা বিভাগের মাস্টার্সের ফল বিপর্যয়

মুহাম্মদ মূসা, জাবি : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর মাস্টার্সের ফল বিপর্যয়ের প্রেক্ষাপটে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া চূড়ান্ত পরীক্ষার আগে টিউটোরিয়ালের ফল প্রকাশ না করা, টিউটোরিয়ালের খাতা শিক্ষার্থীদের ফেরত না দেওয়া ইত্যাদি অভিযোগের কথাও জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
গত সোমবার বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মাস্টার্সের ফল প্রকাশিত হয়েছে। অনার্স এবং মাস্টার্সের ফলাফলের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর ফলাফল অনার্সের চেয়ে মার্স্টাসে অবনতি হয়েছে। এদের মধ্য অন্তত সাতজন শিক্ষার্থীর সিজিপিএ অনার্সে ৩.৫০ এর ওপরে ছিল।
বিভিন্ন বিভাগের একাধিক অধ্যাপকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণত শিক্ষার্থীরা অনার্সের চেয়ে মাস্টার্সে ফল ভালো করে। কিন্তু কেন সাতজন ৩.৫০ বা বেশি পেয়েও মাস্টার্সে খারাপ করল তা খতিয়ে দেখা যেতে পারে। এখানে শিক্ষকদের পাঠদানে কোনো সমস্যা আছে নাকি সমস্যা শিক্ষার্থীদেরই তা জানা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে কলা ও মানবিকী অনুষদের ডীন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক বলেন, এ ব্যাপারে ডীনের করণীয় কিছু নেই।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা যায়, মাস্টার্সের দশটি কোর্সের মধ্যে আটটি কোর্সের প্রত্যেকটিতে ২০ জন বা এর অধিক শিক্ষার্থীর উত্তরপত্র তৃতীয় পরীক্ষক পর্যন্ত গড়িয়েছিল। এটা তখনই হয় যখন প্রথম পরীক্ষক থেকে দ্বিতীয় পরীক্ষকের প্রদানকৃত নম্বরের ব্যবধান ১৪ শতাংশ বা এর বেশি হয়। সংশ্লিষ্টদের মতে এই ঘটনা অস্বাভাবিক এবং এতে করে উত্তরপত্র মূল্যায়ন নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়।
কারো কারো প্রতি শিক্ষকেরা পক্ষপাতিত্ব করেছেন এমন অভিযোগ করে একাধিক শিক্ষার্থীরা জানান, যারা মেধা তালিকা থেকে বিভাগে ভর্তি হয়েছিল তাদের প্রায় সবার ফলাফলই ক্রমাগত অবনতি হয়েছে। অন্যদিকে পোষ্য কোটাসহ অন্যান্য কোটার শিক্ষার্থীদের ক্রমাগত উন্নতি হয়েছে। কেন মেধা তালিকার শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করতে পারছে না এটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের খতিয়ে দেখা উচিত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাস্টার্সে ৩.৬৮ পেয়ে সাঈদ আল জামান (অভি) দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন। সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল মান্নানের ছেলে সাঈদ পোষ্য কোটায় ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে গ্রেস নম্বর নিয়ে বিভাগে ভর্তি হয়েছিল। প্রথম ও দ্বিতীয়বর্ষে তাঁর ফলাফল নিচের দিকে থাকলেও আকস্মিকভাবে সে ভালো করতে থাকে। ৩.৫৮ পেয়ে তৃতীয় স্থান লাভ করা শিক্ষার্থী মিফাত নায়ারও কোটায় ভর্তি হয়েছিল বিভাগে। কিন্তু অনার্সে তাঁর সিজিপিএ ছিল ৩.৪১।
অন্যদিকে, অনার্সে সিজিপিএ ৩.৫০ বা তার বেশি ছিল কিন্তু মাস্টার্সে ৩.৫০ এর নিচে ফল হয়েছে এমন সাতজনের মধ্যে অন্যতম বিজয়া রহমান খান, সাদিয়া আফরিন, সুমন আলী। যাদের অনার্সে সিজিপিএ ছিল ৩.৫৪। অথচ তাদের মাস্টার্সে ফল যথাক্রমে ৩.৪৩, ৩.৩৫ এবং ৩.৪৫। এ ছাড়া অনার্সে ৩.৫২ ছিল শাহলা শাহনাজ দ্যুতি এবং মো. মিঠুন ইসলামের। মাস্টার্সে তাদের ফল হয়েছে যথাক্রমে ৩.৪২, ৩.৪০। ইমরান হোসেনের ফল ছিল ৩.৫১ যার মাস্টার্সে ফল হয়েছে ৩.৩১।
এ বিষয়ে একাধিক মাস্টার্সের শিক্ষার্থী বলেন, আমরা অনেকেই পরীক্ষা ভাল দিয়েছি। অনার্সে ভাল ফলাফলে অণুপ্রাণিত হয়ে মাস্টার্সের পড়াশুনায় কোন ত্রুটি করিনি। আসলে আমরা এমন ফলাফলে খুবই হতাশ। এর বেশি কিছু বলার নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা অধ্যাদেশ থেকে জানা যায়, ২৭৪ তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরীক্ষা গ্রহণের সাত দিনের মধ্যে টিউটোরিয়াল পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করে শিক্ষার্থীদের ফেরত দিতে হবে। কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাচের একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, গত পাঁচ বছরে বিভাগে থেকে কোনো শিক্ষক টিউটোরিয়াল পরীক্ষার খাতা কিংবা কোনো অ্যাসাইনমেন্ট শিক্ষার্থীদের ফেরত দিতেন না। অথচ এখানে থেকেই শিক্ষার্থীরা তাদের নিজেদের ভুল-ভ্রান্তি সম্পর্কে জানতে পারত। শিক্ষার্থীরা বিভাগের শিক্ষকদের হাতে জিম্মি দশার কারণে এতদিন কোনো অভিযোগ করতে পারেনি। কিন্তু কেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এত এ বিষয়ে খোঁজ নেননি তা জানতে চেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরা।
এ বিষয়ে বিভাগের সভাপতি ও মাস্টার্সের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি উজ্জ্বল কুমার মন্ডল বলেন, যদি কেউ মনে করেন তার প্রতি অবিচার হয়েছে, তাহলে তার উচিত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের প্রক্রিয়া মেনে আবেদন করা।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আমির হোসেন (প্রশাসন) বলেন, খাতা পুর্নমূল্যায়ন ছাড়া আর কোন উপায় নেই। এই জন্য তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট আবেদন করতে হবে।
Print Friendly

Related Posts