স্নোটেক্স পোশাক কারখানায় দুই দিনে ৫ শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ

কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা ॥ আরএমওকে প্রধান করে ৫সদস্যের তদন্ত কমিটি

মোঃ রাসেল হোসেন, ধামরাই থেকে:
ঢাকার ধামরাইয়ের ডুলিভিটায় শ্রমিক ও পরিবেশ বান্ধব স্নোটেক্স আউটার লিমিেিটড পোশাক কারখানায় অজ্ঞাত রোগে আক্তান্ত হয়ে দুই দিনে ৫ শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে।

এঘটনায় পুরো কারখানার শ্রমিকদের মাঝে নেমে আসে গভীর আতংক। রোববার বিকালে ও সোমবার সকালে এসব আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এদের মধ্যে অর্ধশতাধিক শ্রমিকের অবস্থা গুরুতর।

আহত শ্রমিকদের ধামরাই সরকারি আবাসিক হাসপাতাল,নয়ারহাট গণবিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও সাভার এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। স্নোটেক্স পোশাক কারখানা কর্তৃপক্ষ অজ্ঞাত রোগে অসুস্থ হয়ে পড়া শ্রমিকদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। ধামরাই সরকারি আবাসিক হাসপাতালের আরএমও আলহাজ্ব মোঃ জাকারিয়া আল আজিজজে প্রধান করে একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে উক্ত রোগ নির্ণয়ে।

অপরদিকে কারখানটিতে শ্রমিকদের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছেন। পরদিন সোমবার সকালে সাধারণ শ্রমিকরা যথারীতি কাজে যোগদান করেন। ফোরে ঢুকতেই ফের পূর্বের মত তারা মাথা ঘুরে পড়ে যান এবং বমিতে আক্রান্ত হন। ফলে অজ্ঞাত রোগে অসূস্থ হয়ে পড়ার পর কারখনাাটিতে আবারও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। অপরদিকে অসূস্থ হয়ে পড়া শ্রমিকদের হাসপাতাপলে প্রেরণ করা হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবুল কালাম আজাদ, থানার অফিসার ইনচার্জ দীপক সাহা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবি, ফায়ার ব্রিগেড ও সিভিল ডিফেন্স বাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলায় ভুমিকা রাখেন। সকলের সার্বিক সহায়তায় কারখানা কর্তৃপক্ষ দ্রুতগতিতে অসুস্থ হয়ে পড়া শ্রমিকদের বিভিন্ন হাসাপাতালে পাঠান এবং আধুনিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। এব্যাপারে ওই পোশাক কারখানার সিনিয়র কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি ওয়াচ কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, কারখানাটিতে প্রায় ৮হাজার শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করেন। অফিস স্টাফ ও সাধারণ শ্রমিকরা প্রতিদিনের মত রোববার দুপুরে কারখানার নিজস্ব ক্যান্টিনে সকলেই একসঙ্গে দুপুরের খাবার খান। উক্ত কারখানাটির তৃতীয় তলার সি-ফোরে কাজ করে প্রায় দেড় সহস্রাধিক শ্রমিক। এদের অধিকাংশই নারী শ্রমিক।

বিকাল পৌনে ৫টার দিকে কারখানাটির প্রথম পর্বের ছুটি দেয়ার প্রাক্কালে লাভলী আক্তার, শারমিন আক্তার,দোলেনা আক্তার,নুরভানু বেগম,খুশিদাস,ইতি বেগম,অঞ্জনা রানী নামে বেশ কয়েকজন নারি শ্রমিক (অপারেটর) হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপরই তার অনবরত বমি হতে থাকে। অবস্থার বেগতিক দেখে তাকে কারখানাটির বাইরে উন্মুক্ত পরিবেশে এ্যাসেম্বলীর মাঠে নিয়ে যাওয়া হয় এবং কারখানার মেডিক্যাল সেন্টারে তাকে চিকিৎসা প্রদান করা হয়।

সে সুস্থ হতে না হতেই শুরু হয় শ্রমিকদের আহত হওয়ার পালা। নিমিষে অর্ধশতাধিক নারি শ্রমিক অসুস্থ্য হয়ে পড়লে কারখানা কর্তৃপক্ষ স্থানীয় হাসাপাতাল, পুলিশ স্টেশন,ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বাহিনী এবং সাংবাদিকদের খবর জানান। কর্তৃপক্ষ দ্রুত তাদেরকে হাসপাতালে প্রেরণ করেন। এরপরই আরও শতাধিক শ্রমিক অজ্ঞাত রোগে অসুস্থ হয়ে পড়ে। সকলেই বমি করে কান্ত হয়ে পড়ে।এঘটনা দেখে সাধারণ শ্রমিকরা আতংকিত হয়ে পড়ে। ফলে কারখানা কর্তৃপক্ষ কারখানাটিতে শ্রমিকদের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেন।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বাহিনীর কর্মকর্তা মোঃ সাহেব আলী জানান,খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধার কাজে অংশ নেই। দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়া শ্রমকিদের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করি।ধামরাই থানার এসআই মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান,অজ্ঞাত রোগে অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর পেয়ে ঘটন্থলে ছুটে আসি। এরপর অসুস্থ্য শ্রমিকদের গাড়ি ও এ্যাম্বোলেন্সে করে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করি।

এব্যাপারে উক্ত কারখানার ডিজিএম এএইচএম কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন,শ্রমিকরাই আমাদের সম্পদ। তারা কাজ না করলে কারখানা চলবেনা। তাই আমরা তাদেরকে অধিক গুরুত্ব টেককেয়ার করে থাকি। কাজেই তাদের অসুস্থতার খবর পেয়েই সঙ্গে সঙ্গে অজ্ঞাত রোগে অসুস্থ্য হয়ে পড়া শ্রমিকদের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠিয়ে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি।

কারখানাটির কর্মকর্তা মোঃ মোশারফ হোসেন বলেন,২৮এপ্রিল জাতীয় স্বাস্থ্য ও নিারপত্তা দিবসে গণপ্রজাতন্ত্রী সাংলাদেশ সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় হতে পুরষ্কারপ্রাপ্ত হয় স্নোটেক্স আউটার ওয়্যার লিমিটেড পোশাক কারখানা। পাশাপাশি শ্রমিক কর্মচারিদের জীবনমান উন্নয়নে আরএমজি টাইমস হতে পদক প্রাপ্ত হয় প্রতিষ্ঠানটি। শ্রমিকদের খাবারের জন্য মুরগী আনা আনা হয় আফতাব পোল্ট্রি,ব্র্যাক পোল্টি ও ডিম আনা হয় কাজী পার্ম থেকে। এরপরও শ্রমিকদের অসুস্থতা দেখে অনেকটা বিচলিত হয়ে পড়েছি। বিষয়টি গভীর ভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

স্নোটেক্স কারখানার সহকারি পরিচালক(অপারেশন) মোঃ জয়দুল হোসাইন বলেন,অজ্ঞাত রোগে শ্রমিকরা আতংগ্রস্ত হয়ে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে কারখানাটিতে শ্রমিকদের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। অপরদিকে অসুস্থ হয়ে পড়া শ্রমিকদের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।

ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন,খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে কারখানাটিতে চলে আসি। শ্রমিকদের অসুস্থতার বিষয়ে খোঁজখবর নেই এবং হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করি। শ্রমিকদের অসুস্থতার কারণ নির্ণয়ে ধামরাই সরকারি আবাসিক হাসপাতালের আরএমও আলহাজ্ব ডা.মোঃ জাকারিয়া আল আজিজকে প্রধান করে ৫সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এ কমিটি তাদের তদন্ত কাজ শুরু করে দিয়েছে।

ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচও) ডা.মোঃ ফজলুল হক বলেন,শ্রমিক অসুস্থ হওয়ার বিষয়টি এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে রোগটি গণমনস্তাত্বিক (ম্যাসহিস্ট্রেরিয়া) রোগ। রোগটি নির্ণয় করতে তদন্ত কমিটি কাজ করছে।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts