বান্দরবানের শৈলপ্রপাত সৌন্দর্য্য

শিউল মনজুর

 

শৈলপ্রপাতের সামনে দাঁড়িয়ে মনে হলো হিমহিম ঠান্ডা জলে গা ভাসিয়ে দিই। আসলে সকাল থেকে বান্দরবানের উচু-নিচু রাস্তা দিয়ে বিভিন্ন দর্শনীয় জায়গা ঘুরতে ঘুরতে শরীরটা এখন অনেক ক্লান্ত ও অবসন্ন। বেশ গরমও পড়েছে। এ রকম অবস্থায় জলে গা ডুবিয়ে গোসল করলে শরীর মন যে চাঙ্গা হয়ে উঠবে তা যেনো মন থেকেই সাড়া দিচ্ছিল। ছোট ছেলে সুবর্ণ বলেই ফেলল, বাবা পানিতে নামব। কিন্তু আমি তাকে থামিয়ে দিই, বলি এতো নিচে নামা সম্ভব নয়। এই ঠান্ডা জলে তুমি গোসল করলে, তোমার শরীর খারাপ হতে পারে।

বেলা পড়ে যাচ্ছে, সন্ধ্যার আবছায়া নেমে আসছে। সুবর্ণকে বলি, বাবা তুমি এখানে একটু দাঁড়াও। কে শুনে আমার কথা, দেখি বড় ছেলে সৌহার্দও উপস্থিত। দুজনেই নিচে নামবে। আসলে জলের এমন প্রবাহিত গতি এবং জল পতনের মিষ্টি শব্দ আর সেই সাথে গরমের মধ্যে হিমহিম একটা ঠান্ডা আবহাওয়া আমাদের সকলের ভালো লাগছিল। উচু পাহাড়ী বনের ভেতর দিয়ে নেমে আসা তিন ঝর্ণার মিলনস্থল শৈলপ্রপাত বান্দরবান জেলার জিরোপয়েন্ট থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। শহর থেকে এখানে আসতে মাত্র আধা ঘন্টা সময় লাগে।

ঝর্ণার জল রাস্তার অনেক নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যদিও নিচে যাবার জন্যে বান্দরবান জেলা প্রশাসকের নির্মিত একটি সিঁড়ি রয়েছে। কিন্তু শিশুদেরকে নিয়ে এমন সিঁড়ি দিয়ে নামা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হবে। শেষ পর্যন্ত অন্যপথ ধরে ধীরে ধীরে সুবর্ণকে নিয়ে নিচে নামি। সৌহার্দ সিঁড়ি দিয়েই নামে। ততক্ষণে আমাদের ভ্রমণযাত্রী অনেকেই গাড়ি থেকে নেমে উপর থেকেই ছবি তোলার কাজ শুরু করে দিয়েছে।
image2

প্রবাহিত জলের যতটা সম্ভব কাছে গিয়ে আমিও কয়েকটা ছবি ক্যামেরাবন্দী করি। অন্যদিকে টেব দিয়ে সৌহার্দও ভিডিও ধারণ করে। তাকে ধন্যবাদ দিই। সে এর মধ্যে ছবি তোলা, ভিডিও করা এবং ব্লু টুথ এর মাধ্যমে শেয়ার করা শিখে নিয়েছে। অবশ্য সেও চেয়েছিল শৈলপ্রপাতের জলে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে। কিন্তু ঝর্ণার আশপাশের পাথরগুলো পিচ্ছিল। দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে গিয়ে পড়ে যাবার সম্ভাবনা আছে। অথচ এখানকার আধিবাসী নারী-পূরুষ ও স্থানীয় বাঙালীরা পাথর জলে দাঁড়িয়ে গোসল এবং নিত্য প্রয়োজনীয় কাজ সহজেই করে যাচ্ছে।

প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি ঝর্ণার সৌন্দর্য অবলোকন শেষে সুবর্ণ ও সৌহার্দকে নিয়ে ফিরে আসি উপরে। এই শৈলপ্রপাত, বান্দরবান জেলার একটি দর্শনীয় স্থান। এর আশপাশে পাহাড়ী বম সম্প্রদায় বাস করে। রাস্তার পাশে বমদের পরিচালিত কয়েকটি দোকান রয়েছে। এ সব দোকানে বমদের তৈরী নানা পণ্য পাওয়া যায়। তবে এমন একটি দর্শনীয় স্থানে পর্যটকদের গাড়ি পার্কিং এর কোন ব্যবস্থা নেই। ঝর্ণার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য কোন বসার বেঞ্চ নেই। তা ছাড়া কোন ভালো খাবারের হোটেলও নেই। এমন একটি স্থানকে পর্যটকদের নিকট আকর্ষনীয় করার লক্ষে বান্দরবান জেলা প্রশাসককে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া উচিত।

শিউল মনজুর: কবি ও কথাসাহিত্যিক।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts