বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ মায়ের জন্য মিনারেল ওয়াটার আনতে গিয়ে চুড়িহাট্টার আগুনে পুড়ে অঙ্গার হলো ছেলে ওয়াসি উদ্দিন মাহিদ (২১)। গত বুধবার রাতে একমাত্র ছেলে ওয়াসি উদ্দিন মাহিদ চুড়িহাট্টার আগুনে পুড়ে মারা যাওয়ার পর বাড়িতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
মো. নাসিরুদ্দিন চকবাজারের একজন ব্যবসায়ী। তিন মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে তার সুখের সংসার। তবে সংসারে প্রথম কষ্ট এসেছিল ২০১১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আগে বড় মেয়ে আজরীন (২২) ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর। তারপরেও দুই মেয়ে আনহা (২৬), সারজা (১৫) ও একমাত্র ছেলে মাহিদকে নিয়ে কেটে যাচ্ছিল তাদের জীবন।
একমাত্র ছেলে আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার পর ক্ষণে ক্ষণে মুর্ছা যাচ্ছিল পরিবারের সদস্যরা।
ওয়াসি উদ্দিন মাহিদ নবকুমার ইনস্টিটিউটে এইচএসসিতে লেখাপড়া করত। সম্প্রতি বাবার সঙ্গে ব্যবসায় মনোনিবেশ করেছিল মাহিদ। চকবাজারের চুড়িহাট্টা, উর্দু রোডসহ রহমতগঞ্জে সুপরিচিত ছিল মাহিদ। বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ আর উচ্ছ্বাসেই মেতে থাকত সে।
অশ্রুসজল চোখে মাহিদের সমবয়সী চাচাতো ভাই আলীম উদ্দিন সঙ্গীত বলেন, মাহিদ ছিল অত্যন্ত মিশুক ও প্রাণবন্ত। আমি নিজ হাতে আমার ভাইয়ের কবর দিয়েছি। আমি কোনভাবেই মেনে নিতে পারছি না মাহিদ আর নেই।
সঙ্গীত বলেন, ও শুধু আমার ভাই খুব ঘনিষ্ট বন্ধুও ছিল। গত দিন ধরে আমাদের দেখা হয় না। আমাদের সঙ্গে ইজতেমায় যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু বাইক চালাতে গিয়ে হাতে ব্যথা পায় তাই ইজতেমায় যেতে পারেনি। ও আমাকে বলেছিল, ‘আমি যেতে পারছি না, আমার জন্য দোয়া করিস ভাই’।
মাহিদের বাবা মো. নাসিরুদ্দিন বলেন, আমার ছেলে মাহিদ মায়ের জন্য মিনারেল ওয়াটার কিনতে বাসা থেকে বের হয়, বোধহয় চুড়িহাট্টার মোড় পর্যন্তও আসতে পারেনি, গাড়ি বিস্ফোরণের সময় হয়তো ও মারা যায়, আমরা মাহিদের মরদেহ মোটামুটিভাবে ভাল পেয়েছি। এটাই আমার স্বান্তনা।
ছেলে হারানোর শোকে কাতর নাসিরুদ্দিন বলেন, অগ্নিকাণ্ডের মিনিট পাঁচেক আগেও আমি চুড়িহাট্টার মোড়ে, আমি পাশে এলাকা রহমতগঞ্জে গেলাম আর বিস্ফোরণের শব্দ পেলাম। আমি বুড়া হয়ে গেছি আমি। মারা গেলেও হতো কিন্তু কেন আমার তরুণ ছেলেকে মরতে হবে। এই বয়সে আমি আর কতো সহ্য করব, ২০১১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ব্লাড ক্যান্সারে আমার বড় মেয়েকে হারাই। ও আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিল। বিস্ফোরণে কেন আমার মৃত্যু হলো না।