লিভারপুলের অবিশ্বাস্য জয়

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ প্রথম লেগে তিন গোলে এগিয়ে থাকার সুবিধা নিতে পারল না বার্সেলোনা। ঘরের মাঠে স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নদের কাঁদিয়ে প্রত্যাবর্তনের ইতিহাস গড়ে টানা দ্বিতীয়বারের মত উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠেছে লিভারপুল।

মঙ্গলবার লিভারপুলের আনফিল্ড স্টেডিয়ামে সফরকারীদের ৪-০ গোলে হারায় ইয়ুর্গুন ক্লপের দল। রবার্তো ফিরমিনো ও মোমাম্মেদ সালাহর অভাব বুঝতে দেননি ডিভক অরিগি ও জর্জিও ভিনালডাম। দুজনেই করেছেন জোড়া গোল। দুই লেগ মিলে ৪-৩ ব্যবধানে এগিয়ে মাদ্রিদে অনুষ্ঠিতব্য ফাইনালের মঞ্চে নাম লেখাল ‘অল রেড’ খ্যাত দলটি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ যুগে সেমিফাইনালে প্রথম লেগে তিন গোলের ব্যবধানে পিছিয়ে থেকেও ফাইনালে যাওয়ার অনন্য কীর্তি গড়ল লিভারপুল।

গত বুধবার ন্যু ক্যাম্পে প্রথম লেগের ম্যাচে ৩-০ গোলে জিতেছিল বার্সা। এই হারে ট্রেবল জয়ের স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল স্প্যানিশ জায়ান্টদের। ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় ইংলিশ কোনো ক্লাবের কাছে বার্সার এটি সবচেয়ে বড় ব্যবধানে পরাজয়।

লিওনেল মেসিকে এদিন মনে হয়েছে ক্লান্ত পথিক। জর্র্ডি আলবা-অ্যালেক্স ভিদাল-সার্জিও বুসকেটসরা সাজিয়ে বসেন ভুল পাসের প্রদর্শনী। ফিলিপ কুতিনহো ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। গোলের সুযোগ হারিয়েছেন মেসি-সুয়ারেজরা। যেন পরিকল্পনাহীন এক ম্যাচ খেলল আর্নেস্তো ভালভার্দের শিষ্যরা।

অন্যদিকে প্রথম লেগের মত প্রতিপক্ষকে নিচ থেকে গুছিয়ে আক্রমণে উঠতে না দেয়ার পরিকল্পনায় এ যাত্রায় সফল ক্লপ। অটুট রক্ষণের বিপরীতে ভয়ঙ্কর সব আক্রমণে ম্যাচের শুরু থেকেই বার্সার রক্ষণে হামলে পড়ে স্বাগতিকরা। ফল মেলে ম্যাচের সপ্তম মিনিটেই। বার্সার রক্ষণের ভূলে বল পেয়ে যান হেন্ডারসন। ভিতরে ঢুকে ইংলিশ মিডফিল্ডারের নেয়া শট ফিরিয়ে দেন গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগেন, ফিরতি বল জালে ঠেলে দেন ডিভক ওরিগি। প্রতিযোগিতায় এটি তার প্রথম গোল।

গোল খাওয়ার পর নিজেদের গুছিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে বার্সা। দুই মিনিটের ব্যবধানে দুবার সুযোগও তৈরি করে তারা। ১৫তম মিনিটে মেসির বাড়ানো বলে নেওয়া ফিলিপ কুতিনহোর কোনাকুনি শট ঝাঁপিয়ে রক্ষা করেন আলিসন। দুই মিনিট পর ফাঁকায় বল পেয়ে শট নিতে দেরি করে ফেলেন মেসি। সোজাসুজি নেওয়া শট সহজেই প্রতিহত করেন গোলরক্ষক। প্রথমার্ধের অন্তিম সময়ে প্রতি আক্রমণে মেসির রক্ষণচেরা পাস নাগালে পেয়েও আলিসনকে ফাঁকি দিতে পারেননি জর্ডি আলবা।

দ্বিতীয়ার্ধেও শুরু থেকে প্রতিপক্ষকে চেপে ধরে লিভারপুল। ৫০তম মিনিটে কর্নার থেকে ভেসে আসা বলে ভার্গিল ফন ডিকের ব্যাকহিল দারুণভাবে রুখে দেন স্টেগেন। সেই বল ধরে প্রতি আক্রমণে ওঠে বার্সা। এবার সুয়ারেজের নেয়া সোজাসুজি নেওয়া শট রুখে দেন আলিসন।
এরপর দুই মিনিটের ঝড়ে জোড়া গোলে স্কোরলাইন ৩-০ করে দেন দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে চোটে পড়া রবার্টসনের বদলি নামা জর্জিও ভিনালডাম।

৫৪তম মিনিটে আলবার কাছ থেকে বল কেড়ে ডানপ্রান্ত থেকে গড়ানো ক্রস নেন আলেক্সান্ডার আরনল্ড। ডি বক্সের মধ্য থেকে ডান পায়ের জোরালো গড়ানো শটে টের স্টেগেনকে পরাস্ত করেন ভিনালডাম। দুই মিনিটের মাথায় বাম প্রান্ত থেকে নেওয়া জর্দান সাকিরির ক্রসে অনেকটা লাফিয়ে হেডে বল জালে পাঠান ডাচ মিডফিল্ডার।

৭৯তম মিনিটে অরিগির গোলে দুই লেগ মিলে ৪-৩ ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়ার আনন্দে মাতে স্বাগতিক সমর্থকরা। বার্সার রক্ষণ তখন অপ্রস্তুত। আলেক্সান্ডার অরনল্ডের দ্রুত নেওয়া কর্নার ডি বক্সের মধ্য থেকে প্লেসিং শটে মহামূল্যবান গোলটি করেন ২৪ বছর বয়সী বেলজিয়ান ফরোয়ার্ড।

বাকি সময়ে অনেক চেষ্টা করেও লিভারপুলের অটুট রক্ষণ গলাতে পারেনি বার্সা। গত মৌসুমে শেষ আটের প্রথম লেগে ঘরের মাঠে ৪-১ গোলে জিতেও দ্বিতীয় লেগে রোমার কাছে ৩-০ গোলে হেরে বিদায় নিয়েছিল কাতালান দলটি।

আগামী ১ জুন মাদ্রিদের ওয়ান্দা মেত্রোপলিতানোতে হবে ফাইনালে। শিরোপা লড়াইয়ে গতবারের রানার্সআপদের প্রতিপক্ষ টটেনহ্যাম হটস্পার ও আয়াক্সের মধ্যকার আরেক সেমি-ফাইনালের বিজয়ীরা।

Print Friendly

Related Posts