ঈদে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ১৩৫, নিহতের সংখ্যা ১৮৫

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ঈদ-উল-আযহার ছুটিতে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৮৫ জন এবং আহত হয়েছেন ৩৫৫ জন।  সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ১৩৫। গত ১০ আগষ্ট থেকে ১৮ আগস্ট এই ৯ দিনে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে। তবে যা এ বছরের ঈদ- উল ফিতরের তুলনায় কিছুটা বেশি বলে নিরাপদ সড়ক চাই’র পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে।

গতকাল নিসচা আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব লিটন এরশাদ।

শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন মোঃ আবদুল আলীম, শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন সংগঠনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মিরাজুল মইন জয়, স্বাগত বক্তব্য রাখেন যুগ্ম মহাসচিব বেলায়েত হোসেন খান নান্টু। সভা পরিচালনা করেন সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আজাদ হোসেন।
বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টা বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ম. হামিদ ও বিআরটিএর সাবেক চেয়ারম্যান আয়ুবুর রহমান খান। সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শামীম আলম দীপেন।

সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থ সম্পাদক নাসিম রুমি, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক একে আজাদ ও আবদুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক ফিরোজ আলম মিলন, সহ দপ্তর সম্পাদক সাফায়েত সাকিব, কার্যনির্বাহী সদস্য কামাল হোসেন খান, আলাল উদ্দিন, সেকান্দর আলী রিন্টু, সুশীল চন্দ্র বাছার, নজরুল ইসলাম ফয়সাল, মিষ্টি চৌধুরী, সাধারণ সদস্য আবদুল খালেক, আলী আকবর, মান্নান ফিরোজ, সাইদুল আলম বকুল, শাহ আলম সাবু, রাইজিন গাজী, হিমু, মোঃ শাকিব হোসেন, আসাদুল ইসলাম আসাদ, মেহরিন খান, নূরে আলম, শিউলী প্রমুখ।

সম্মেলনে মূল প্রতিবেদনে বলা হয়: ঈদ-উল ফিতরে দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ১২৭, নিহত হন ১৮৪ জন এবং আহত হন ৩৩২জন।  বিভিন্ন পত্রিকা, পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ, স্বতন্ত্র অনলাইন নিউজ পোর্টাল, সংবাদ সংস্থা ও টেলিভিশন চ্যানেলের তথ্য-উপাত্তের উপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। বিশেষ করে নিরাপদ সড়ক চাই’র সারাদেশের ১২০টি শাখা সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাধ্যমেও সড়ক দুর্ঘটনার তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। পুরো পর্যালোচনা ও যাচাই-বাছাইয়ের পর এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

নিসচার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে এ বছরের ঈদ- উল ফিতরে সড়কপথে ঈদযাত্রা ছিল যতটা স্বস্তিদায়ক ছিল ঈদ- উল আযহায় এসে সেই ঈদযাত্রা ভোগান্তিতে পরিণত হয়। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে ঈদযাত্রার মানুষদের বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয়। লম্বা সময়জুড়ে সড়কে যানবাহনকে ঠায় বসে থাকার সংবাদ প্রকাশ হয়েছে।

তবে নৌপথে দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়াও ঈদযাত্রা ছিল অনেকটা স্বস্তিদায়ক। নৌপথে বেশকিছু নতুন লঞ্চ বহরে যুক্ত হয়েছে, এবারও ঈদের আগের দিন সদরঘাট টার্মিনালে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামলাতে পারেননি কর্তৃপক্ষ। এসব বিষয়ে আগামীতে নজর দিলে নিসচা মনে করে নৌপথ আরও যাত্রীবান্ধব হয়ে উঠবে।
পাশাপাশি রেলপথেও বেশ কয়েক জোড়া নতুন ও বগি সংযুক্ত হলেও রেলপথে সিডিউল বিপর্যয় টিকিট কালোবাজারির কারণে যাত্রী হয়রানি বেড়েছে। অনলাইনে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রিতে এবারও প্রযুক্তিগত সমস্যা ও সিডিউল বিপর্যয়ের কারণে রেলের যাত্রীদের বিড়ম্বনা পোহাতে হয়েছে।

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এ বছর ঈদ উল আযহার সময় সারাদেশে সড়ক পথে গাড়ী চলাচল নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে এই রিপোর্ট প্রকাশ করছে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে এই ঈদে উত্তর বঙ্গের সড়কে দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডে তিনটি সেতু (কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতী) খুলে দেওয়ার ফলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামসহ পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন জেলায় যানজট হয়নি বললেই চলে এবং সড়ক দুর্ঘটনা এসকল অঞ্চলে তুলনামুলকভাবে কম হয়েছে। তবে খুলনা ও যশোর অঞ্চলে সড়ক দুর্ঘটনা কমেনি, বরং বেড়েছে।

সড়ক দুর্ঘটনার দিক দিয়ে ঈদ-উল ফিতরে মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেশি থাকলেও এবার তা কমেছে সামান্য। বেড়েছে বাস দুর্ঘটনার সংখ্যা। একথা বলতেই হয় নিসচার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে এখনও সড়কে মোটর সাইকেল বিধ্বংসী বাহন হয়ে উঠেছে চালকের খেয়ালীপনাসহ নানা কারণে। সড়কে যখনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার সমন্বিত উদ্যোগ চলছে তখন মোটর সাইকেলের দৌরাত্ম ও এর চালকদের বেপরোয়া হয়ে উঠায় ভাবতে হবে সকল মহলকে। বিশেষ করে অভিভাবকদের মোটর সাইকেল সন্তানের হাতে তুলে দেয়ার আগে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে ভাবতে হবে, সেই সাথে সংশ্লিষ্ট মহলেরও ভাবতে হবে। কারণ এবার ৪০টি মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ২৯জন (চালক ও আরোহী)। গত ঈদ-উল ফিতরে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ৪৫ এবং নিহতের সংখ্যা ছিল ৩৮। মটরসাইকেল দুর্ঘটনা কমলেও আমরা এখনওশংকিত। সড়ক দুর্ঘটনায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এই বাহনের অবস্থান। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে দুর্ঘটনায় আহত নিহতরা বেশির ভাগই তরুণ। তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাবই অন্যতম কারণ। এছাড়া মটরসাইকেল দুর্ঘটনার অধিকাংশ ঘটেছে দ্রুতগতি, ট্রাফিক আইন না মানা আর একের অধিক যাত্রী নেওয়ার কারণে।

নিসচা চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন আমাদের মাধ্যমে সড়কে মোটর সাইকেলের দৌরাত্ম্য ও সেচ্ছাচারিতা বন্ধে মোটর সাইকেল চালকদের দুই মাসের ওরিয়েন্টেশন কোর্স চালু ও অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করেছেন। তিনি মোটর সাইকেল কিনতে গেলে ড্রাইভিং লাইসেন্স সহ এই কোর্সের সাটর্টিফিকেট প্রদর্শণ বাধ্যতামূলক করা এবং নিয়মিত মনিটরিং করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

ঈদের সময় সিডিউল রক্ষা করতে গিয়ে বাসগুলো অতিরিক্ত গতিতে বেপরোয়া ভাবে চালানোর কারণে এবার বাস দুর্ঘটনার সংখ্যা প্রথমস্থানে চলে আসে। তাছাড়া ঈদযাত্রায় যাত্রীদের কাছ থেকে সবধরণের যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রবণতা, নৈরাজ্য, যানজটের ভোগান্তি নিসচার পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মহলের এসব অনিয়ম বন্ধে তৎপরতাও চোখে পড়েছে।
তবে আশংকার কথা হচ্ছে উবার ও পাঠাও’র মত ইন্টারনেটভিত্তিক রাইড শেয়ারিং করা বাহনগুলোর সেচ্ছাচারিতা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে এ্যাপের কলিংয়ে সাড়া না দিয়ে অতিরিক্ত ভাড়ায় যাত্রী বহনের প্রবণতা তাদের মাঝে বেশি লক্ষ্য করা গেছে। এ বিষয়ে নিসচা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এসব সেচ্ছাচারিতা বন্ধের এবং মনিটরিংয়ের আহবান জানাই। নিসচা মনে করে যদি এসব সেচ্ছাচারিতা বন্ধ করা না হয় তাহলে সিএনজি চালকদের মত এরাও বেপরোয়া হয়ে উঠবে। এতে করে যাত্রীদের বিড়ম্বনাও বেড়ে যাবে।

আশার কথা হচ্ছে এবারও ঈদ যাত্রায় নিসচা’র সারাদেশের অধিকাংশ শাখা নেতৃবৃন্দ প্রশাসনের সাথে সড়ক ও মহাসড়কে নির্বিঘ্নে যানবাহন চলাচলে সেচ্ছাসেবকের ভূমিকা পালন করে। নিসচা চেয়ারম্যান এসব সড়কযোদ্ধাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন।

নিরাপদ সড়ক চাই-এর পক্ষ থেকে জনগণসহ  সংশ্লিষ্ট সকলকে আরোও সচেতন, সাবধান ও সতর্কতা অবলম্বনেরও আহবান জানানো হয়েছে।

Print Friendly

Related Posts