বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক॥ আজ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৪তম প্রয়াণ দিবস। ১৩৮৩ সালের ১২ ভাদ্র শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (সাবেক পিজি হাসপাতাল) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। এখানেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।
তার জন্ম ১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে। চুরুলিয়াতে তিনি দুখু মিয়া৷ তিনিই আবার বাংলা সাহিত্যের ঝড়ের কবি৷ তারুণ্য, বিদ্রোহের পূজারী কাজী নজরুল ইসলাম৷ বর্ধমান জেলার খনি শিল্পাঞ্চলের সেই রুক্ষ মাটিতেই বাংলা সাহিত্যের ঝড় লুকিয়েছিল৷ ক্রমে তা ছড়িয়ে পড়ে৷ অসামান্য জীবন৷ কখনও লেটো দলের গায়ক৷ কখনও আসানসোলের চা-রুটির দোকানের কর্মী৷ এসব ছাড়িয়ে বিশ্ব রণাঙ্গনে (প্রথম বিশ্বযুদ্ধ) জড়িয়ে পড়া এক বাঙালি সৈনিক৷ কাজী নজরুল ইসলামের এই বিচিত্র জীবনে জড়িয়ে বর্ধমান৷
যুদ্ধ থেকে ফিরে অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন নজরুল৷ ছিলেন সাম্যবাদী চিন্তাধারী৷ ভারত জুড়ে চলছে তীব্র ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন৷ সেই আন্দোলনের এক ধারা-সাম্যবাদী পথ৷ বামপন্থায় আকৃষ্ট হন নজরুল৷ কখনও বিপ্লবের কথা৷ কখনও কমিউনিস্ট ভাবধারা তো কখনো চিরন্তন প্রেমের কথা সবেতেই সমান সাবলীল তিনি৷
বাংলার সাহিত্য মহলে ধূমকেতুর মতো আবির্ভাব তাঁর৷ যৌবনের ঝড় নিয়ে এসেছিলেন৷ ভেঙেছিলেন কারার ওই লৌহ কপাট৷ নজরুলের ভাষায় আপ্লুত হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ৷ এমনই বিপ্লবের কবি রচিত শ্যামা সঙ্গীত ও ইসলামি সঙ্গীত প্রবল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে৷
রক্তাক্ত জাতি সংঘর্ষের পথেই ভারত ভাগ হয়৷ কবি নজরুল ভারতেই থেকে যান৷ অনেক পরে তিনি যখন বার্ধক্যে আক্রান্ত৷ তখনও রক্তাক্ত হয়েছিল কবির প্রিয় স্থান পূর্ব বাংলা৷ ১৯৭১ সালে এক রক্তাক্ত সংঘর্ষের পর পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তৈরি হয় বাংলাদেশ৷ ১৯৭২ সালে ভারত সরকারের অনুমতিতে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের বিশেষ উদ্যোগে কবি নজরুল ইসলামকে সেদেশে নিয়ে যাওয়া হয়৷ এরপর কবির বাকি জীবন বাংলাদেশেই কাটে৷ তাঁকে জাতীয় কবির মর্যাদা দেয় বাংলাদেশ৷
বাংলাদেশে তার অনেক স্মৃতিবিজড়িত স্থান রয়েছে। তার সাহিত্যকর্মের উপজীব্য বিষয়গুলোও অনেকখানি এই বাংলাকেন্দ্রিক। বাংলাদেশে তার স্মৃতিবিজড়িত বেশ কয়েকটি স্থান রাষ্ট্রীয় তদারকিতে সংরক্ষিত হয়েছে। ঢাকায় নজরুল ইনস্টিটিউট, ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনসহ বিভিন্ন স্থানে কবি নজরুলের স্মৃতি সংরক্ষণ করা হয়েছে। তার পরও বলতে হয়, নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত দুই বাংলায় এখনও তাঁর পূর্ণাঙ্গ জীবনী রচিত হয়নি।