সশস্ত্র বাহিনী দিবসের কর্মসূচিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া উপস্থিতি হওয়ায় নিজেকে ‘সৌভাগ্যবান’ ও ‘সম্মানিত’ বোধ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে এই সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়, যেখানে এক যুগ পর উপস্থিত হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। ইউনূসের পাশের আসনেই বসার ব্যবস্থা হয় তার। ছবিতে দুই জনকেই হাস্যোজ্জল দেখা গেছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘‘আজ আমরা বিশেষভাবে সৌভাগ্যবান এবং সম্মানিত, বাংলাদেশের তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ এখানে আমাদের মধ্যে উপস্থিত আছেন।
‘‘একযুগ ধরে তিনি এই মহাসম্মিলনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পান নাই। আজকে সুযোগ পেয়েছেন, আমরা সবাই আনন্দিত এবং গর্বিত, যে আমরা এই সুযোগ দিতে পেরেছি আপনাকে। শারীরিক অসুস্থতা স্বত্বেও এই বিশেষ দিবসে সবার সঙ্গে শরিক হওয়ার জন্য আপনাকে আবারও ধন্যবাদ, আমরা তার আশু রোগমুক্তি কামনা করছি এবং এই অনুষ্ঠানে বিশেষভাবে স্বাগত জানাচ্ছি।”
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা সম্মিলিতভাবে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণের সূচনা করে। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে প্রতিবছর দিনটি ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’ হিসেবে পালন করে বাংলাদেশ।
এক সময় সেনাকুঞ্জের এ অনুষ্ঠান আলোচনায় থাকত অন্য রাজনৈতিক কারণে। দেশের দুই বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা হিসেবে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া দুজনেই এ অনুষ্ঠানে যেতেন। চির বৈরী এ দুই নেতার সারা বছর দেখা না হলেও সেনাকুঞ্জে তাদের সাক্ষাৎ হওয়ার সম্ভাবনা থাকত।
সর্বশেষ ২০১২ সালে নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যেও সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন দুই নেত্রী। তবে সেদিন তাদের কথা হয়নি।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর সর্বশেষ ২০০৯ সালে সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল।
গণ অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের সরকার সরকার পতনের পর গত ৫ অগাস্ট ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। জুলাই-অগাস্টের ‘গণহত্যার’ মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বুধবার খালেদা জিয়াকে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার আমন্ত্রণ পৌঁছে দেন সেনাবাহিনীর কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে সেনা বাহিনীর প্রটোকল পাহারাতেই তিনি রওয়ানা হন।
এই অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর বর্তমান ও সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, রাজনীতিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশের ‘নক্ষত্রসমূহকে’ এক যোগে এই মহাসম্মিলনে আনতে পেরেছেন, সেটা দেখে অবাক লাগছে আজকে। অত্যন্ত আনন্দিত বোধ করছি আপনাদের সবাইকে দেখে।
“আর যে ‘নক্ষত্ররা’ শরিক হতে পারেন নাই, জায়গার অভাবে জায়গা দিতে পারেন নাই তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। যেই নক্ষত্র সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে আছে তাদেরকে এখানে সবার পক্ষ থেকে সালাম জানাচ্ছি।”
ছয় বছর পর প্রকাশ্যে কোনো অনুষ্ঠানে দেখা গেল খালেদা জিয়াকে; সেনাকুঞ্জে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের পাশের আসনে বসে তিনি উপভোগ করলেন সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান।
বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা ৩৫ মিনিটে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে পৌঁছান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গত এক যুগের মধ্যে এই প্রথম তিনি সেনাকুঞ্জের বার্ষিক এ আয়োজনে এলেন।
সেখানে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন তাকে অভ্যর্থনা জানান।
বিএনপি চেয়ারপারসনের সাথে তার প্রয়াত ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান এবং ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন অনুষ্ঠানে আসেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদসহ আমন্ত্রিত জ্যেষ্ঠ নেতারা আগেই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পৌঁছেছিলেন।