বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক॥ আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে ২২৪ রানে হেরে গেছে সাকিব আল হাসানের বাংলাদেশ। প্রথমদিন থেকে শুরু হওয়া ব্যর্থতা পঞ্চমদিনেও অব্যাহত রেখে আফগানিস্তানের কাছে টেস্টটা শেষ পর্যন্ত হেরেই গেল টাইগাররা।
বৃষ্টির কারণে শেষদিন ৯০ ওভারের জায়গায় কমে আসে খেলা, তাতে ২০ ওভারেরও কম সময় টিকতে পারল স্বাগতিকরা। ব্যর্থতার ষোলোকলা পূর্ণ করা সাকিব-সৌম্যদের ১৭৩ রানে অলআউট করে দিয়ে আফগানরা মাতল উল্লাসে।
পঞ্চম ও শেষদিনে মাত্র ২০ ওভার বল মাঠে গড়ায়। তাতেই লিখে দেয় চট্টগ্রাম টেস্টের ভাগ্য। নিজেদের ইতিহাসে তিননম্বর টেস্ট খেলতে নেমে দ্বিতীয় জয় তুলে নিল আফগানিস্তান।
ভারতের কাছে অভিষেক টেস্টে বিপর্যয়কর হারের পর দ্বিতীয় টেস্টে আয়ারল্যান্ডকে তাদেরই ঘরের মাঠে হারিয়ে নিজেদের জাত চেনায় আফগানরা। এবার বাংলাদেশকেও নিজের মাটিতে হারিয়ে দিল তারা। একইসঙ্গে জয় দিয়ে টেস্ট ক্রিকেট থেকে মোহাম্মদ নবিকে বিদায় দিল আফগানরা।
আফগানরা টাইগারদের সামনে ছুঁড়ে দিয়েছিল ৩৯৮ রানের বড় লক্ষ্য। যে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে চতুর্থ দিন শেষে ৬ উইকেটে ১৩৬ রান নিয়ে শেষ করে সাকিব আল হাসানের দল। শেষদিন চার উইকেট হাতে রেখে করতে হত আরও ২৬২ রান। বাকি চার উইকেট হারিয়ে ৩৭ রান যোগ করে ১৭৩ রানেই শেষ হয় ইনিংস।
এই টেস্ট জয়ের সঙ্গে নতুন রেকর্ড স্পর্শ করেছেন রশিদ খান। প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নেয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে নেন ৬ উইকেট। সব মিলিয়ে ১১ উইকেট নিয়ে বসে পড়েছেন ইমরান খান ও অ্যালান বর্ডারের পাশে। একই টেস্টে অধিনায়ক হিসেবে ১০ বা তার বেশি উইকেটের সঙ্গে ফিফটি করা তৃতীয় ক্রিকেটার এখন রশিদ।
চতুর্থদিন থেকেই হারের মুখে থাকা বাংলাদেশের হয়ে লড়াই শুরু করে বৃষ্টি। হারের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা টাইগারদের আশীর্বাদ হয়ে আসে এই বৃষ্টি। সারারাত ধরেই হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হয়।
পরে একটু বন্ধ হলেও সকালে ৮টার আগ দিয়ে আকাশ কালো করে নামে আবারও বৃষ্টি। যে কারণে খেলোয়াড়রা হোটেল থেকে নির্ধারিত সময়ে সকাল ৮টায় বের হননি।
তবে নির্ধারিত সময়ে বের না হলেও সকাল ৯টার একটু আগেই মাঠে চলে যায় আফগানিস্তান দল। বাংলাদেশ দল রয়ে যায় টিম হোটেলে। দুপুর ১২টার দিকে রওনা হয় টাইগাররা।
বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টি হতেই থাকে। তবে মাঝেমধ্যে রোদও দেখা যায়। কখনো একটু রোদ উঠে তো, পরে আবার তা মেঘে ঢেকে যায়। পিচ রাখা হয় কভারে ঢেকে।
অবশেষে বৃষ্টি থামলে খেলার শুরুর প্রস্তুতি নেয়া হয়। তখন সেশন কাটছাঁট করে দিনের খেলা ৬৩ ওভারে নির্ধারণ করা হয়। ঠিক একটায় খেলা শুরু হয়। ব্যাট করতে নামেন আগেরদিনের অপরাজিত দুই ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসান ও সৌম্য সরকার।
কিন্তু ১৩ বল খেলা হতেই আবার শুরু হয় বৃষ্টি। এই ১৩ বলে বাংলাদেশ রান নেয় সাতটি। যার মধ্যে সাকিব পাঁচ ও আগেরদিন খাতা না খোলা সৌম্য করেন ২ রান।
দ্বিতীয় দফায় দিনের খেলা নির্ধারিত হয় ১৮.৩ ওভার। এই কয়টা ওভার কাটিয়ে দিতে পারলেই ম্যাচ বেঁচে যেত। কিন্তু এই দফার প্রথম বলেই ‘অবিবেচকের’ মতো শট খেলে আউট হন সাকিব। জহির খানের অফস্টাম্পের বাইরের বল অযথা কাট করতে গিয়ে উইকেটকিপারের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। সেইসঙ্গে তার লড়াই আর দলীয় সর্বোচ্চ ৪৪ রানের ইনিংস বিফলে যায়।
সৌম্যর সঙ্গে ম্যাচ বাঁচানোর আশা দেখান মেহেদী হাসান মিরাজ। কিন্তু রশিদ খানের ঘূর্ণিতে পড়ে এলবিডব্লিউ হন তিনি (১২)। মিরাজ ফেরার পর আফগানিস্তানের জন্য জয়টা হাতে নাগালে চলে আসে। সফরকারীদের সামনে একমাত্র কাঁটা তখন সৌম্য।
৫৮ বল খেলে অপরাজিত ক্রিজে থাকা সৌম্যর দিকে তখন তাকিয়ে পুরো বাংলাদেশ। দিনের খেলা তখন আর মাত্র চার ওভার বাকি। কিন্তু যে সৌম্যর ওপর সবার ভরসা, তাকে আউট করেই জয় নিশ্চিত করে আফগানিস্তান। রশিদ খানে জোরের উপর দেয়া বল ঠেকাতে গেলে ক্যাচ উঠে যায়, সৌম্যর ঘাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা ইব্রাহিম জাইদি আস্থার সঙ্গে লুফে নেন সেই ক্যাচ। সঙ্গে সঙ্গেই জয়ের আনন্দে মেতে ওঠে আফগানরা। ৫৮ বলে শেষ পর্যন্ত ১৫ রান করে আউট হন সৌম্য।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: আফগানিস্তান-৩৪২ ও ২৬০, বাংলাদেশ-২০৫ ও ১৭৩