বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ইউটিউব চ্যানেল খোলার ব্যাপারে কেউ যদি আপনাকে বলে- অনেক দেরি হয়ে গেছে, এখন আর খুলে সুবিধা হবে না। তাহলে এ ধরনের কথাকে গুরুত্ব দেবেন না। আপনার দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি ও চেষ্টাই আপনাকে সফল ইউটিউবার হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।
অনেক ইউটিউবার প্রতিমাসে হাজার হাজার ডলার আয় করেন। তারা পারলে আপনি কেন পারবেন না? ইউটিউব থেকে আয় করতে হলে আপনাকে ধৈর্য্য ও মনোবল নিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে হবে। যদি আপনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন ইউটিউবে চ্যানেল খুলবেন, তাহলে কিছু বিষয় বিবেচনা করা উচিত।
আপনার মোটিভেশন কি?
আপনি ইউটিউব চ্যানেল খুলতে চাচ্ছেন। কিন্তু কি কারণে আপনি ইউটিউবে চ্যানেল খুলবেন? অর্থাৎ ইউটিউবে চ্যানেল খোলার জন্য আপনার মোটিভেশন কি? আপনি ইউটিউবে চ্যানেল খুলে যেকোনো বিষয়ে ভিডিও বানাতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, কিভাবে ওয়েব ও মোবাইল অ্যাপস প্রোগ্রাম করতে হয় তা সম্পর্কে জানাতে পারেন। অথবা শর্ট ফিল্ম তৈরি করে ভালো গল্প শেয়ার করতে পারেন। অথবা নতুন ডিভাইস বা ভিডিও গেমসের রিভিউ দিতে পারেন।
আপনি ইউটিউব চ্যানেলে যেকোনোকিছু সম্পর্কে জানাতে পারেন, কিন্তু সফল হতে চাইলে কোনো একটা নির্দিষ্ট বিষয় বেছে নেয়া গুরুত্বপূর্ণ। আপনার মোটিভেশনে তিনটি মূল উপাদান থাকা উচিত: টপিক কভারেজ, টার্গেট অডিয়েন্স ও রিজন ফর এক্সিসটেন্স। প্রত্যেক সফল ইউটিউব চ্যানেলে উপাদানগুলো রয়েছে।
* টপিক কভারেজ হলো আপনার ভিডিওগুলো কোন বিষয়ে হবে।
* টার্গেট অডিয়েন্স হলো কাদের উদ্দেশ্যে আপনার ভিডিওগুলো তৈরি করা হবে।
* রিজন ফর এক্সিসটেন্স হলো ভিউয়াররা কেন আপনার ভিডিওগুলো দেখবে।
উদাহরণস্বরূপ, মেক ইউজ অব নামক ইউটিউব চ্যানেলে গ্যাজেট রিভিউ ও প্রযুক্তির টিউটোরিয়াল আপলোড করা হয়। এ চ্যানেলের ভিডিওগুলো দু’ধরনের ভিউয়ারের উদ্দেশ্যে বানানো হয়: যারা এসব বিষয়ে নিজেকে আরো সমৃদ্ধ করতে চান এবং যারা একেবারে নতুন, কিন্তু জানার আগ্রহ রয়েছে। আপনার চ্যানেল খোলার পূর্বে একটি মোটিভেশন নির্ধারণ করুন। আপনার অনেক বিষয়ে আগ্রহ থাকতে পারে, কিন্তু সফল হতে হলে সেই বিষয়ে ইউটিউব চ্যানেল খোলা উচিত যে বিষয়ে আপনি সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। আপনার মোটিভেশনে উপরোল্লিখিত উপাদানগুলো না থাকলে ইউটিউব চ্যানেল ব্যর্থ হতে পারে।
ইউটিউব চ্যানেলে কতদিন পরপর ভিডিও আপলোড করবেন?
কিভাবে ভিডিও বানাতে হয়? কোন ধরনের কনটেন্ট তৈরি করবেন? কারা এ ভিডিওগুলো দেখবে? এ তিনটি প্রশ্নের সমাধান হয়ে গেলে আপনি কাজ শুরু করতে দিতে পারেন। কিন্তু মনে প্রশ্ন আসতে পারে- আপনি কতদিন পরপর নতুন ভিডিও আপলোড করবেন? এটি সাধারণত নির্ভর করে কন্টেন্টের ধরনের ওপর: ভ্লগ বা ভিডিও গেমস খেলার ভিডিও প্রতিদিন আপলোড করা যেতে পারে, কোনো বিষয়ে গবেষণা করে নির্মিত ছোট ভিডিও প্রতিসপ্তাহে আপলোড করা যেতে পারে এবং উচ্চমানের শর্টফিল্ম বা ব্যঙ্গাত্মক ভিডিও প্রতিমাসে আপলোড করা যেতে পারে।
কতদিন পরপর ভিডিও আপলোড করবেন? এ বিষয়ে বাস্তববাদী হোন ও দূরদর্শী চিন্তা করুন। আপনার হয়তো এখন প্রতিদিন একটি করে ভিডিও বানানোর সামর্থ্য বা মনোবল রয়েছে। কিন্তু আপনি কি ছয়মাস বা এক বছর পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত রাখতে পারবেন? প্রথম প্রথম ঘনঘন ভিডিও আপলোড করে পরবর্তীতে ভিডিও আপলোডের সংখ্যা কমিয়ে ফেললে আপনার ভিউয়াররা অসন্তুষ্ট হতে পারে, যার ফলে তারা আপনার চ্যানেলকে আনসাবস্ক্রাইব করতে পারে, অর্থাৎ চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার কমে যেতে পারে। তাই দূরদর্শী চিন্তা করে শুরু থেকেই একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর ভিডিও আপলোড করার কথা বিবেচনা করুন।
ইউটিউব চ্যানেলের সফলতা মান ও স্টাইলের ওপর নির্ভরশীল
অনেকে আপনাকে বলতে পারে সফলতার জন্য মানের চেয়ে স্টাইলের প্রয়োজনীয়তা বেশি। কিন্তু তাদের এ ধারণা ভুল। সফলতার অন্যতম পূর্বশর্ত হলো মান ও স্টাইল উভয়ই। ইউটিউব ভিউয়াররা খায় চোখ দিয়ে, তাই স্টাইলে প্রলুব্ধ করলেও ভিডিও মানহীন হলে তারা পরবর্তী ভিডিও দেখতে আগ্রহী হবে না। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম: কিছু খাবার দেখতে এত বেশি লোভনীয় যে সবটুকু খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে হবে, কিন্তু এসব খাবার এতই বিস্বাদ যে দ্বিতীয়বার মুখে নেয়ার কথা ভাবা যায় না।
একটি সফল ইউটিউব চ্যানেলে অনেকগুলো উপাদান থাকে, তার মধ্যে এ তিনটি হলো স্টাইলের অন্তর্গত: সুন্দর টাইটেল, সামঞ্জস্যপূর্ণ ফরম্যাট ও আকর্ষণীয় ভিডিও থামনেল। ভিডিওর অডিও সেকশনের ক্ষেত্রে আপনাকে শুদ্ধ উচ্চারণ ও মার্জিত কণ্ঠস্বর বজায় রাখতে হবে এবং কথা বলার বিরক্তিকর প্যাটার্ন এড়িয়ে চলতে হবে। ক্যামেরায় কাজ করার ক্ষেত্রে আপনাকে স্থিরভাবে দাঁড়াতে হবে, ক্যামেরার দিকে তাকাতে হবে, মুখে হাসি রাখতে হবে ও বিরক্তিকর মুভমেন্ট এড়িয়ে চলতে হবে।
বিভিন্ন উপায়ে আপনার উপস্থাপনা উন্নত করতে পারেন: আপনাকে জনবহুল স্থানে কথা বলার মতো চ্যালেঞ্জ নেয়ার সাহস অর্জন করতে হবে, পাবলিক স্পিকিংয়ের ভয় কাটাতে হবে, টেড টকস দেখে ভালো বক্তারা কিভাবে কথা বলে তা শিখতে হবে এবং যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে হবে। আপনার ভিডিওগুলো ভালোভাবে এডিট করারও প্রয়োজন হবে। একাজে ভালো ভিডিও এডিটিং অ্যাপসের সাহায্য নিতে পারেন। নিশ্চিত হোন যে কোয়ালিটি ও ফ্রেম রেট যথেষ্ট উচ্চ। ভিডিও থেকে সকল অপ্রয়োজনীয় অংশ কেটে ফেলুন।