ক’দিন আগে এফডিসির ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। একজন পরিচালক এসে হঠাৎ বললেন, আমি মেহজাবিনকে নিয়ে একটি ছবি নির্মাণ করেছি। জানতে চাইলাম কোন মেহজাবিন? তিনি বললেন, মেহজাবিন আবার কে? আমি তখন চুপ হয়ে গেলাম।
কারণ আমার জানা মতে টিভি নাটকের অভিনেত্রী, যিনি লাক্স সুপার স্টার তিনি কোনো ছবিতে অভিনয় করেননি। এমনকি ইমপ্রেস টেলিফিল্মের একটি ছবিতে কাজ করার অফার থাকলেও সেটা তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন। এরপর আর খবর রাখিনি। হতেওতো পারে এই পরিচালকের কাজ তিনি করেছেন। ভাবলাম মেহজাবিনের কাছ থেকেই ব্যাপারটা জেনে নেই। সে অনুসারে আমি মেহজাবিনকে ফোন দিলাম। তিনি ফোন ধরতেই আমি আমার পরিচয় দিয়ে তার কাছে ছবি নিয়ে জানতে চাইলাম।
তিনি জবাবে বললেন, ‘আপনি সাংবাদিকতো আমার সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়ে তারপর ফোন দেবেন। এখন বিজি আছি।’ বলেই ফোন লাইন কেটে দিলেন। তার এই অশিল্পীসুলভ ও দাম্ভিক আচরণে আমি অবাকই হয়েছি। আমার সাংবাদিকতার বয়স প্রায় ৩৫ বছর। মাঝে ছবি প্রযোজনা করার কারণে কয়েক বছর এ পেশায় ছিলাম না। তবে সাংবাদিক হিসেবে আমার হাত দিয়ে অনেক তারকার আসা-যাওয়া ঘটেছে। মৌসুমী, শাবনূর এবং পপি বলতে গেলে চলচ্চিত্রে এসেছেন আমার উদ্যোগেই।
`টার্গেট’ ছবির লোকেশন কভারেজের জন্য চম্পা আমাকে সঙ্গে নিয়ে গেছেন কলকাতা সন্দ্বীপ রায়ের সেটে। রোমান পোলানস্কি, গৌতম ঘোষ, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, সন্দ্বীপ রায়সহ অনেকের সম্পর্কেই ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে লেখালেখি করেছি। মুম্বাই অভিনেতা ওমপুরী আমাকে মুম্বাই নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন `প্রেম প্রতিজ্ঞা’ ছবির সেটে মাধুরী দীক্ষিত এবং ঋষি কাপুরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে। চম্পাও আমাকে অনুরোধ করেছিলেন ওমপুরীর সঙ্গে যেতে। কিন্তু আমি যাইনি। তারা কেউ আমাকে কোনোদিন বলেননি, তাদের সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়ে কথা বলতে।
একবার নাটকের একটি টিম আমাকে নিমন্ত্রণ করেছিল তাদের নাটকে ক্ল্যাপস্টিক দিতে। লোকেশন ছিল গুলশান দুইয়ের পার্কটি। আমি সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলাম নির্ধারিত সময়ের পনের মিনিট আগে। দেখলাম কেউ নেই। তাই পার্কে হাঁটাহাটি করছিলাম। পেছন থেকে একটি হাত এসে পড়লো আমার কাঁধে। ঘুরতেই দেখলাম বোরখা পরিহিত শাবানা। তারপর অনেক সুখ-দুঃখের কথা।
ক’দিন আগে `মধুর ক্যান্টিন’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য অনজু ঘোষ এসেছিলেন ঢাকায়। এই উপলক্ষ্যে শিল্পী সমিতি একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিল। সেখানে আমিও উপস্থিত ছিলাম। অনজুর পাশে বসা ছিল ইলিয়াস কাঞ্চন, আহমেদ শরীফসহ অনেকেই। অনজুর ১৫ থেকে ২০ মিনিটের এই সংবাদ সম্মেলনে অতীত স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে নয় বার উচ্চারণ করেছেন আমার নাম, যা ইউটিউবে আছে। এমনি আরো অনেক ঘটনা, যা নিয়ে বই লিখবো ভাবছি। কিন্তু সাংবাদিকতার আজ এত বছর পর মেহজাবিনের ‘খোঁজ-খবর’ নেয়ার পরামর্শ শুনে আমার কাছে মনে হচ্ছে, আমার সাংবাদিকতা বার্ধক্যে পৌঁছে গেছে, যদিও সাংবাদিকতার কোনো বয়স নেই।
(ফেসবুক থেকে)
ইমরুল শাহেদ : সিনিয়র সাংবাদিক, চিত্র সমালোচক।