বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদন শিল্পের পথিকৃৎ ওয়ালটনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এস এম নজরুল ইসলামের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ।
ওয়ালটনের স্বপ্নদ্রষ্টা এই মানুষটি ২০১৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর না ফেরার দেশে চলে যান। রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। পরদিন ১৮ ডিসেম্বর তাঁর নিজ গ্রাম গোসাই জোয়াইরে পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হন তিনি।
সুদূরপ্রসারি চিন্তাশীল এই মানুষটি তার গ্রাম গোসাই জোয়াইরকে অনেক ভালোবাসতেন। তাই দেশের বৃহৎ ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের প্রতিষ্ঠাতা হয়েও গ্রামেই জীবন যাপন করতেন। তার প্রতিষ্ঠিত ওয়ালটন এখন বিশ্বের কাছে শিল্পসমৃদ্ধ বাংলাদেশের ইতিবাচক ইমেজ তুলে ধরছে। বাংলাদেশও যে পারে বিশ্বের কাছে সেটিই প্রমাণ করছে মেড ইন বাংলাদেশ খ্যাত ওয়ালটন পণ্য।
কর্মজীবনে সফল ব্যক্তিত্ব আলহাজ এসএম নজরুল ইসলাম ৭ মে, ১৯২৪ সালে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার গোসাই জোয়াইর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম এস এম আতাহার আলী তালুকদার এবং মাতার নাম মোসাম্মৎ শামছুন নাহার।
ইলেকট্রনিক্স শিল্পে এই মহৎ মানুষটির সাফল্য’র গল্প একেবারেই ব্যতিক্রম। ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেন রেজভী অ্যান্ড ব্রাদার্স, সংক্ষেপে আরবি গ্রুপ। রেজভী তাঁর বড় ছেলে। পাঁচ ছেলে আর দুই মেয়ের পিতা তিনি। যে ব্যবসাতেই হাত দিয়েছেন, সফলতা পেয়েছেন সেখানেই। সৎ, নিষ্ঠাবান ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন সব মহলে ।
‘ওয়ালটন’ ছাড়াও এই শিল্প গ্রুপের আরেকটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ‘মার্সেল’। পারিবারিক বৈঠকে এই দু’টি নাম ঠিক হয়। আরবি গ্রুপই এখন ওয়ালটন গ্রুপ। এর সাফল্যে যাতে বিশাল ভূমিকা রাখেন তাঁর মেধাবী সন্তানরা। দেশে এখন ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয় ওয়ালটন পণ্যের। এই দু’টি ব্র্যান্ডের পণ্যের সুনাম ও খ্যাতি আজ দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
২০০৬ সালে গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটনের নিজস্ব কারখানা নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। ২০০৮ সালে নিজস্ব কারখানায় উৎপাদিত হয় ওয়ালটন ফ্রিজ। সাশ্রয়ী মূল্যে উচ্চমানের পণ্য এবং সেবা দিয়ে জয় করে নেন গ্রাহকের আস্থা। পর্যায়ক্রমে শুরু হয় টেলিভিশন, মোটরসাইকেল এবং এয়ারকন্ডিশনার উৎপাদন প্ল্যান্ট। সবকিছুতেই ওয়ালটন পাইওনিয়ার।
শুধু দেশেই বাজারজাত নয়, ওয়ালটন পণ্য এখন বিশ্বের ২০টিরও অধিক দেশে যাচ্ছে ওয়ালটন পণ্য। মেড ইন বাংলাদেশ লেখাটি এখন বিশ্বের মানুষের কাছে সম্মান আদায় করে নিতে সক্ষম হচ্ছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন রকমের হোম, কিচেন ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যাপ্লায়েন্স উৎপাদন শুরু হয়েছে।
এরপর ‘সময় এখন বাংলাদেশের’ স্লোগান নিয়ে যাত্রা শুরু করে দেশের প্রথম মোবাইল ফোনের কারখানা। পরবর্তী সময়ে ল্যাপটপও উৎপাদন শুরু করে ওয়ালটন। এর মধ্য দিয়ে ওয়ালটন কারখানা কমপ্লেক্স হয়ে উঠেছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ প্রযুক্তি পণ্যের উৎপাদন ও গবেষণাগার। প্রায় ৩০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। তৈরি হচ্ছে দক্ষ জনশক্তি।
বর্তমানে বাংলাদেশে শিল্পায়নের মডেল হয়ে উঠেছে ওয়ালটন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা ওয়ালটন কারখানা পরিদর্শন করে মুগ্ধ হয়েছেন। অনেক বিশেষজ্ঞ ওয়ালটনের উদ্যোগকে অভিহিত করেছেন আসল শিল্প হিসেবে।
ব্যবসায়িক সাফল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডেও আলহাজ এসএম নজরুল ইসলামের অবদান অনেক। তিনি টাঙ্গাইল জেলা সমবায় ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক, টাঙ্গাইল জেলা সার ডিলার সমিতির সভাপতি, টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের পরিচালক এবং টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় জমি বন্ধকি ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি তাঁর গ্রামে এসএম নজরুল ইসলাম কারিগরি বিদ্যালয় নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া, মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এতিমখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত সাহায্য-সহযোগিতা দিতেন। অসুস্থ ও দরিদ্র মানুষের জন্য তাঁর হৃদয় কাঁদতো। তিনি গ্রামের দুস্থ, বৃদ্ধ ও মহিলাদের জন্য বয়স্কভাতা প্রকল্প চালু করেছেন।
এস এম নজরুল ইসলামের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে ওয়ালটন গ্রুপ ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো আজ এই মহৎপ্রাণ মানুষটিকে বিশেষভাবে স্মরণ করছে।