অর্থনৈতিক প্রতিবেদক: দেশব্যাপী কর্মসংস্থানের স্বপ্ন দেখাচ্ছে দেশবন্ধু গ্রুপ। দেশের উত্তরাঞ্চলের মঙ্গা পীড়িত একটি জেলা থেকে উঠে আসা দেশবন্ধু গ্রুপের কর্ণধার মানুষকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন একের পর এক প্রকল্প চালুর মাধ্যমে। দেশবন্ধু গ্রুপের ৩০ বছর পূর্তি উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী এসব কথা বলেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর সেনামালঞ্চে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম।
এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবীদ, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও সাংবাদিক নেতারা।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশবন্ধু গ্রুপের কর্ণধাররা দেশের পিছিয়ে পড়া অঞ্চল থেকে ওঠে এসেছেন। মানুষ উত্তরবঙ্গের মানুষকে বলেন আয়োডিনের অভাবে বুদ্ধি কম। সেখান থেকে দেশের শিল্প-বাণিজ্যে অবদান রাখা ব্যতিক্রম ঘটনা। এই অঞ্চলের মানুষের সমস্যা-চাপার জোর নেই। ৩০ বছরে দেশবন্ধু গ্রুপ যেভাবে উঠে এসেছে তা সত্যিই অবাক করার মতো। দেশবন্ধু গ্রুপ কতদূর যাবে, তা জানিনা, তবে তারা দেশে যে কর্মসংস্থান তৈরি করেছে তা সত্যিই সম্মানের যোগ্য।
বাণিজ্যমন্ত্রী আরো বলেন, উত্তারাঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য দেশবন্ধু গ্রুপ নীলফামারীতে ডেনিম কারখানা তৈরি করেছে। সেখানে অসংখ্য মানুষ কর্মরত রয়েছেন।
তিনি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের একটি উক্তি বর্ণনা করে বলেন, মাহাথিরের উন্নয়নের পেছনে শক্তি কী ছিল? সেটির উত্তরে বলেছিলেন, কর্মসংস্থান, কর্মসংস্থান, কর্মসংস্থান। কর্মসংস্থান তৈরি করেছিল বলে মালয়েশিয়া আজ উন্নত বিশ্বে উপনীত হয়েছে। তেমনটি দেশবন্ধু গ্রুপও আজ কর্মসংস্থান তৈরি করছে।
টিপু মুন্সী বলেন, পেঁয়াজের সংকট যাতে দেশে না হয় সেজন্য দেশবন্ধু গ্রুপ উন্নতমানের কোল্ডস্টোরেজ তৈরি করার পরিকল্পনা করছেন। এটি নির্মিত হলে পেঁয়াজ দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। দেশে ভালো কিছু করার মানসিকতা দেশবন্ধু গ্রুপের রয়েছে।
গতকাল সকাল থেকেই ধাপে ধাপে গ্রুপের ২৭টি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানের আরও উন্নয়নে কিভাবে ভূমিকা রাখা যায়, সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সভা করেন। আগামী দিনের দিক-নির্দেশনা দিয়ে বক্তব্য রাখেন দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম রহমান।
আগত সবার অংশ গ্রহন করেন মধ্যাহ্ন ও নৈশ ভোজ। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে র্যাফেল ড্রয়ের আয়োজন ছিল। সবশেষে আগতদের বিনোদন হিসেবে সুরের ঝড় তোলেন সংঙ্গীত শিল্প আঁখি আলমগীর ও আতিক হাসানসহ দেশের বরেণ্য শিল্পীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে ট্রেডিং ও সার আমদানির মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে দেশের অন্যতম শিল্প গ্রুপ ‘দেশবন্ধু’।
তারপর থেকে দেশের এই প্রতিষ্ঠিত শিল্প গ্রুপটিকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। হাঁটি হাঁটি পা পা করে আজ গ্রুপটি অগ্রগতির ৩০ বছর উদযাপন করছে। বর্তমানে চিনিশিল্প, সিমেন্টশিল্প, সার কারখানা, শপিং মল, শিপিং, টেক্সটাইল মিল, তৈরি পোশাক কারখানা, পলিমার, কনজ্যুমার, বেভারেজ, ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্ট, আবাসন ও লজিস্টিকসহ চালকল থেকে শুরু করে মিডিয়া সবই রয়েছে দেশবন্ধু গ্রুপের।
একইসঙ্গে দেশবন্ধু ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে দেশবন্ধু গ্রুপের কর্ণধার গোলাম মোস্তফার বাবা-মায়ের নামে সাহেরা-ওয়াসেক হাসপাতাল। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে প্রতিষ্ঠিত এই হাসপাতালের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ সেবা পাচ্ছেন।
গোলাম মোস্তফার পিতা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও নাগেশ্বরীতে স্বাধীনতার প্রথম পতাকা উত্তোলনকারী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আবদুল ওয়াসেক আহমেদ।
দেশবন্ধু গ্রুপ দীর্ঘ ৩০ বছরে শুধু নিজেদের ব্যবসার সম্প্রসারণই করেনি, গ্রুপটি দেশের বিভিন্ন আর্থিক ও সেবামূলক কর্মকান্ডে অংশ নিয়ে দেশের মানুষের সেবা করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে দেশবন্ধু গ্রুপের অধীনে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিভিন্ন ধরনের ২৭টি কোম্পানি। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৭ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছেন। প্রতিষ্ঠানগুলো সম্প্রসারণের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত মানুষের কর্মসংস্থান বাড়ছে।
দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট শিল্পপতি গোলাম মোস্তফা। শিল্প ও বাণিজ্যে বিশেষ অবদানের জন্য ২০০৮ সালে বাংলাদেশ সরকার গোলাম মোস্তফাকে সিআইপি (ব্যবসায়িক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি) নির্বাচিত করে। তারই ধারাবাহিতকায় তার সহোদর গোলাম রহমান ২০১৩ সালে রপ্তানিতে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার সিআইপি নির্বাচিত করে। গোলাম রহমান দেশবন্ধু গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। দেশবন্ধু গ্রুপের ব্যবসার হাল ধরতে এগিয়ে এসেছেন নতুন প্রজন্ম। বিদেশে উচ্চশিক্ষা নেওয়া গোলাম মোস্তফার একমাত্র কন্যা তাবাসসুম মোস্তফা দেশবন্ধু গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠান জিএম হোল্ডিংস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।
দেশবন্ধু গ্রুপের ব্যবসা শুরু, পরিধি বাড়ানো, নতুন বিনিয়োগ এবং ব্যবসার বৈচিত্র্য বাড়ানো কোনোটিই এককেন্দ্রিক নয়। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চলছে গ্রুপের কার্যক্রম। নিজ জেলা কুড়িগ্রামে মায়ের নামে সাহেরা অটো রাইস মিলস, সিরাজগঞ্জে সিমেন্ট ও ফাইবার কারখানা, নীলফামারীতে টেক্সটাইল মিলস, নরসিংদীর পলাশে দেশবন্ধু সুগার মিলস, দেশবন্ধু পলিমার, দেশবন্ধু ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, দেশবন্ধু পাওয়ার প্লান্ট এবং দেশবন্ধু ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট কারখানায় চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। রাজধানীর উত্তরখানে সাউথ-ইস্ট সোয়েটার্স, দক্ষিণখানে জিএম হোল্ডিংস, ধানমন্ডিতে রাপা প্লাজা, মতিঝিলে দেশবন্ধু ট্রেডিং কোম্পানি, বনানীতে লজিস্টিক ও মিডিয়া প্রতিষ্ঠান দৈনিক আজকালের খবর পত্রিকার কার্যক্রম চলছে।
এ ছাড়া দেশবন্ধু ফাইবার, ফার্টিলাইজার মার্কেটিং করপোরেশন, কমোডিটি ট্রেডিং কোম্পানি, দেশবন্ধু শিপিং, দেশবন্ধু এনার্জি, দেশবন্ধু এসেস্ট ম্যানেজমেন্ট, দেশবন্ধু সিকিউরিটি সার্ভিস, দেশবন্ধু ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট, দেশবন্ধু ডিস্টিলরিস, জিএম শিপিং, দেশবন্ধু ট্রেডিং, দেশবন্ধু ইডিবয়েল অয়েল ও দেশবন্ধু পার্সেল অ্যান্ড লজিস্টিক সুনামের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করছে।
অনেক কষ্ট ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আজকে দেশের অন্যতম শিল্প প্রতিষ্ঠান দেশবন্ধু গ্রুপকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে জন্মগ্রহণ করা গোলাম মোস্তফা। তার প্রতিষ্ঠিত ২৭টি কোম্পানি কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ দেশের চলমান উন্নয়নে অনেক বড় অবদান রাখছে, যা আর্তমানবতার সেবায় গোলাম মোস্তাফার জীবনের স্বপ্নপূরণ হয়েছে। তিনি জাতির পিতার অঙ্গীকার ও লালিত স্বপ্ন ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মাণে নিয়োজিত এবং বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে কাজ করছেন।
দেশবন্ধু গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের চাহিদা পূরণ করে উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রফতানির মাধ্যমে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভকে সমৃদ্ধ করছে। এই গ্রুপের রফতানির তালিকায় রয়েছে, চিনি, ভোজ্য তেল, তৈরি পোশাক, বেভারেজ ও কনজ্যুমার পণ্য। চিনি ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রফতানি করে ৫০০ কোটি টাকার সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছে দেশবন্ধু। এই গ্রুপের তৈরি পোশাক করাখানা দেশের গ্রিন ফ্যাক্টরিগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই ফ্যাক্টরি গত বছর ২০০ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করেছে।
নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে স্থাপিত ‘দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলস’ ডেনিম উৎপাদনে এককভাবে দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কারখানা, যার দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ৬২ হাজার পিস। ২০২০ সালে রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ১২০০ কোটি টাকা এবং এখানে পাঁচ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।