আ হ ম ফয়সল
দেশের আকাশে এবার ঘরে ঘরে উড়ানো হয়েছে বাংলার লাল সবুজের পতাকা। দেশের জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান আর শ্রদ্ধা ভরে লাখো শহীদদের স্মরণ করতে ঘরে ঘরে পৌছে দেয়া হয়েছে জাতীয় পতাকা। বিজয় দিবসে ঠাকুরগাঁওয়ের প্রতিটি ঘরে ঘরে উড়ানো হয় লাল সবুজের এই পতাকা। স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস ও নতুন প্রজন্মকে দেশ প্রেমিক হিসাবে গড়ে তুলতে এই উদ্যোগ নেন ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার মানবাধিকার কর্মী ও লেখক জুঁই জেসমিন।
শিক্ষা সৈনিক মরহুম তসলিম উদ্দিন আহমেদের মেয়ে জুঁই জেসমিন পিতার মতই উদ্যোগী। নিজ গ্রাম রায়মহলে তার বাবা প্রতিষ্ঠা করেন রায়মহল উচ্চ বিদ্যালয়। তাই বাবার আদর্শে দেশ প্রেমে জাগ্রত হয়ে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঘরে ঘরে পতাকা পৌছে দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন এবং গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলে বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধাকে উদ্বুদ্ধ করেন ঘরে ঘরে পতাকা দিতে। পাঁচ উপজেলার বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধা তার ইচ্ছেকে সম্মান জানিয়ে এগিয়ে আসেন নিজ নিজ খরচে পতাকা বিতরণে। পঞ্চগড় জেলা সদর হতে নারী মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া বেগমও এগিয়ে আসেন।
আর এবারের ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে তার এই কাজে সার্বিক সহায়তা করেন ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ঠাকুরগাঁও সদর, পীরগঞ্জ, বালিয়াডাঙ্গী, রানীশংকৈল ও হরিপুর উপজেলায় ৪ হাজার ৫শ পরিবারের মাঝে জাতীয় পতাকা বিতরণের উদ্যোগ সফল হয়। পার্শবর্তী পঞ্চগড় জেলা সদর উপজেলাতেও তার উদ্যোগটি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসে স্থানীয় প্রশাসন।
বিজয় দিবস ছাড়াও স্বাধীনতা দিবস ও একুশে ফেব্রুয়ারিতেও এই পতাকা ঘরে ঘরে উত্তোলন করা হবে বলে জানায় জেলা প্রশাসন।
‘রাখি বাংলার মান, রাখি মুজিবের মান, রাখি পতাকার মান’ এই শ্লোগান নিয়ে স্থানীয় নারী লেখিকা ও সাংস্কৃতিক কর্মী জুঁই জেসমিনের আয়োজনে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় ১৬ ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগে থেকেই সদর উপজেলার জলেশ্বরীতলা এলাকায় ঘরে ঘরে জাতীয় পতাকা বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন- ঠাকুরগাঁওয়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নুর কুতুবুল আলম। সে সময় সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন, প্রেসক্লাব সভাপতি মনসুর আলী, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি সেতারা বেগম উপস্থিত ছিলেন। পরে ওই এলাকার ঘরে ঘরে জাতীয় পতাকা বিতরণ করা হয়।
জাতীয় পতাকা হাতে পেয়ে জলেশ্বরী তলার শিল্পি বেগম, বাদশা মিয়া, দবির আলী বলেন, এধরনের উদ্যোগ কেউ কখনো নেয়নি। এটা নি:সন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। মন্দির পাড়ার শুকান্ত রায় বলেন, বিজয় দিবসে জাতীয় পতাকা উড়বে প্রতিঘরে ঘরে এটাতো সকলের উচিত নিজ উদ্যোগে পতাকা তৈরি করে উড়ানো। এতে নতুন প্রজন্মের মাঝে দেশপ্রেম গড়ে উঠবে বলে মনে করেন তিনি।
সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার আব্দুলাহ আল মামুন বলেন, আগামীতে এ ধরনের উদ্যোগ আরো বড় পরিসরে করা হবে। এজন্য সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নুর কুতুবুল আলম বলেন, জুঁই জেসমিনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। তার এই কার্যক্রম বাস্তবায়িত হলে মুক্তিযুদ্ধে চেতনায় উদ্বুদ্ধ হবে নতুন প্রজন্ম।
এ প্রসঙ্গে মূল উদ্যোগী জুঁই জেসমিন বলেন, দেশ প্রেমিক হিসাবে এ প্রজন্মকে তৈরি করতেই এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাংলার আকাশে বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস ও একুশে ফেব্রুয়ারিতে ঘরে-ঘরে উড়বে জাতীয় পতাকা। পতাকার প্রতি সম্মান আর শ্রদ্ধা আসবে, আসবে দেশের প্রতি ভালবাসা। এ জন্য তিনি সকলের সহায়তা কামনা করেন এবং পেয়েছেন। গত ১৫ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম নিজ কার্যালয়ে জুঁই জেসমিনকে সাথে নিয়ে বেশ কয়েক জনের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দেন ।
জুঁই জেসমিনের উদ্যোগ সম্পর্কে জেলা প্রশাসক বলেন, জুঁই জেসমিন কিছু দিন আগে আমার অফিসে এসেছিল তার একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমার সহযোগিতা চাওয়ার জন্য। তার পরিকল্পনা জেনে বেশ ভালো লেগেছিল। বিজয় দিবস উপলে সে ঘরে ঘরে জাতীয় পতাকা বিতরণ করবে এবং বিজয় দিবসে সকলের বাড়িতে সেই পতাকা উড়বে। ইউএনওদের বলেছিলাম পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জুঁইকে সহযোগিতা করার জন্য। ৫টি উপজেলার ইউএনও সার্বিক সহযোগিতায় এবং জুই জেসমিন তার অদম্য ইচ্ছা শক্তির বলে অনেক শ্রম দিয়ে তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে সম হয়েছে। সে উপজেলায় উপজেলায় গিয়ে উৎসব মুখর পরিবেশে জাতীয় পতাকা বিতরণ করেছে। দেখে খুব ভালো লাগছে। এবার হয়তো শতভাগ হয়নি, শুরু যখন হয়েছে আগামীতে নিশ্চয়ই শতভাগ সফল হবে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিজয় দিবস অনুষ্ঠানের মধ্যমণি থাকবেন একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং পতাকা উত্তোলনের পর সব শিক্ষার্থী মুক্তিযোদ্ধার মুখে শুনবেন দেশ যুদ্ধের ঘটনা। এমন একটা সময় আসবে, মুক্তিযোদ্ধা পাওয়া যাবেনা। তাই ৭১ এর প্রকৃত ইতিহাস জানার জন্য মূলত জুঁই জেসমিনের এ উদ্যোগ। এবার ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে স্থানীয় খোঁচা বাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর ইসলাম জুঁই জেসমিনের স্বপ্ন উদ্যোগ বাস্তবায়নে নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে মধ্যমণি হিসেবে রেখেছিলেন বালিয়াডাংগী উপজেলা কমান্ডার আব্দুস সুবহান বীর মুক্তিযোদ্ধাকে। এ ভাবেই এক-এক করে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে জাতীয় দিবসে ঘরে ঘরে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের চর্চা, এমনটাই স্বপ্ন দেখেন জুঁই জেসমিন।
লেখক: সাংবাদিক ও উন্নয়ন কর্মী।