আশরাফুল ইসলাম আকাশ: ১ম সমাবর্তন ঘিরে প্রাণ ফিরে পেয়েছে ভালোবাসার জবি ক্যাম্পাস। রঙিন দিনের পুরনো সব চিরচেনা মুখ ফিরেছে ক্যাম্পাসে।
শহীদ মিনার, শান্ত চত্বর, কাঁঠালতলা, বিবিএ ফ্যাকাল্টি, সায়েন্স বিল্ডিং, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, পুরাতন কলাভবন সর্বত্রই কোলাহল, হারানো বন্ধুদের মিলনমেলা আর স্মৃতি রোমন্থন। হাজারো দিনের স্মৃতিরা যেন পাখা মেলেছে রঙিন ডানায়। প্রাণে প্রাণে তৈরি হয়েছে প্রেমময় মেলবন্ধন। প্রাণের উচ্ছ্বাসে আনন্দে মেতেছে সবাই।
বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই গান ‘পুরোনো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়, ও সেই চোখের দেখা, প্রাণের সখা, সে কি ভুলা যায়’ . . . যেন গুঞ্জরিত হচ্ছে কালো গাউনের ছেয়ে যাওয়া জবি ক্যাম্পাসে।
২০০৫ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা। এরপর থেকে অভাব-অনটন, সমস্যা-সংকট যেন পিছু ছাড়েনি বিশ্ববিদ্যালয়টির। বছরের পর বছর বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন হয়েছে। অবশ্য আন্দোলন ছাড়া শিক্ষার্থীদের কপালে ভালো কিছু জোটেনি। আন্দোলনের ফলে কিছু সমস্যার সমাধান হয়েছে। আরো কিছু সমাধানের পথে। আবাসনের সমস্যা সমাধানের দাবি ছিলো দীর্ঘদিনের। তবে কেউ দাবি না করা সত্ত্বেও প্রকৃত সমস্যা অনুভব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০একর জমি এবং প্রয়োজনীর অর্থ বরাদ্দ দিয়ে কেরাণীগঞ্জে পুর্ণাঙ্গ ক্যাম্পাসের অনুমোদন দিয়েছেন। অত্যাধুনিক ক্যাম্পাস এখন নির্মাণাধীন।
এদিকে দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফলে প্রতিষ্ঠার ১৪বছর পরে ১ম সমাবর্তন হচ্ছে। তাই জবিয়ানদের কাছে এটা নিছক সমাবর্তন নয়, এটা শিক্ষার্থীদের মহাবিজয় উৎসব।
জবির ১ম সমাবর্তন ১১জানুয়ারি ২০২০ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার গ্রাজুয়েট। ব্যস্ততার শেকলে বাঁধা জীবনে স্মৃতিময় মধুর অতীত রোমন্থন করার খানিক অবসর জোটানো খুবই কঠিন। তবে সমাবর্তনের সুযোগে কালো গাউন আর মাথায় ক্যাপ পরে গ্র্যাজুয়েটরা যেন আরেকবার ফিরে যাচ্ছেন পুরনো দিনের আড্ডায়-আনন্দে। এই আনন্দে বাড়তি যোগ হয়েছে শিশুরা, বাবা-মায়ের সাথে যেন তাদেরও সমাবর্তন!
হারানো দিনের বন্ধুকে কাছে পেয়ে উচ্ছ্বাস-আনন্দে একে অপরকে জড়িয়ে ধরছেন। হৈ-হুল্লোড়ে ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি হচ্ছেন। সবার চোখে-মুখে অবারিত আনন্দ। তাদের জন্য দিনটি শুধুই নির্ভার আনন্দ ধারায় ভাসার। বহুদিন পর শিক্ষা জীবনের নানা স্মৃতি রোমন্থনে কেটে যাচ্ছে সময়। স্মৃতির পাতায় আরো নতুন কিছু সুখ স্মৃতি জমা হচ্ছে। ব্যস্ততা আর বাস্তবতায় আবার হারিয়ে যাবে সবাই। হয়তো আবারো দেখা হবে; হয়তোবা আর দেখা হবে না . . .
হয়তো এ সুখ স্মৃতিগুলো উঁকি দিবে বৃদ্ধ বয়সের অলস সময়ে, একাকিত্বে। স্মৃতিগুলো রোমন্থন হবে কোনো এককালে সন্তান অথবা নাতি নাতিনদের কাছে। স্মৃতিগুলোই হয়তো সুখানুভূতির সঞ্চার করবে, মনের অজান্তে চোখের কোণে জল এনে দিবে। আবারো ফিরে যেতে ইচ্ছে করবে স্মৃতির শহরে, রঙিন দিনে। কিন্তু সময় তো বয়ে যায়। বয়সের ভারে, সময়ের টানে সবাই হারিয়ে যায়! নতুনের জন্য স্থান ছেড়ে দিতে হয়। নতুনের অবগাহন, পুরাতনের বিদায়।