জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ মুজিববর্ষ উদযাপন করতে গিয়ে জনগণকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পাওয়া আমাদের জন্য অত্যন্ত সৌভাগ্যের। তার পরও সরকারের কাছে জনগণের কল্যাণই সবচেয়ে বড়। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপন করা হবে, তবে সেটি ভিন্নভাবে। এমনভাবে উদযাপন করা হবে, যেন জনগণ ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে। দেশের মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়া, তাদের সুস্থ জীবন নিশ্চিত করাই সরকারের দায়িত্ব।

করোনাভাইরাস নিয়ে অহেতুক আতঙ্কিত না হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এটি মোকাবিলায় সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে। আর এটা খুব বেশিদিন থাকবে না, অল্প কিছুদিন থাকবে। তাই এ নিয়ে ভয় পাওয়া কিংবা আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। অহেতুক আতঙ্ক সৃষ্টিরও দরকার নেই। কেবল মানুষকে সচেতন বা সজাগ করার চেষ্টা করতে হবে।

গতকাল সোমবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের জরুরি বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, করোনা মোকাবিলায় ঢাকায় তিনটি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা-উপজেলার প্রতিটি হাসপাতালে করোনা ইউনিট খোলা হয়েছে, আলাদা বেড রাখা হয়েছে। পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স প্রস্তুত  রাখা হয়েছে।

সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাবিশ্বে যখন করোনা এমন আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে, তখন দেশের সব মানুষের স্বাস্থ্যের প্রতি নজর রাখা আমাদের দায়িত্ব-কর্তব্য বলেই মনে করি। সে কারণেই আমরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিয়েছি। এটা নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। সকলকে সচেতন থাকতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভয় পাওয়ার কোনো দরকার নেই। মাস্ক আর স্যানিটাইজার কেনার জন্য মানুষ পাগল হয়ে গেছে। যে যা পারছে, একগাদা করে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এটা পাগলামি ছাড়া আর কিছু নয়। অযথা মাস্ক ও স্যানিটাইজার কিনে জমা করে রাখা, কিছু হলেই জমা করে রাখা- এগুলোর একদমই প্রয়োজন নেই। এগুলো একদম কোনো কাজেই লাগবে না। পরে হয় ফেলে দিতে হবে, নয়তো বেচে দিতে হবে। আর অহেতুক মাস্ক পরে ঘোরাঘুরি কিংবা ঘরে বসে থাকার দরকারও নেই। শুধু এ নিয়ে সতর্ক থাকলেই চলবে, জনসমাবেশ এড়িয়ে চলতে হবে। যদি কেউ সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়, তাহলেও মাস্ক পরে থাকার দরকার এই কারণে- তার মাধ্যমে অন্য কেউ যেন সংক্রমিত না হয়। সেজন্য সাবধান থাকা ভালো।

করোনার কারণে ১৭ মার্চ থেকে শুরু হতে যাওয়া ‘মুজিববর্ষের’ কর্মসূচি পুনর্বিন্যাস করার কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপনে ইতোমধ্যে সরকারি ও দলীয়ভাবে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। তবে করোনা নিয়ে বিশ্বব্যাপী একধরনের শঙ্কা সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি বন্ধ করা হয়েছে। মুজিববর্ষে আমন্ত্রিত অতিথিরা নিজ দেশের বাইরে যেতে পারছেন না। তাই মুজিববর্ষের আয়োজনে কিছুটা পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে।

তিনি বলেন, যেহেতু জনসমাগম এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে, তাই ব্যাপক জনসমাগম হতে পারে এমন কর্মসূচি আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। ব্যাপক জনসমাগম এড়িয়েই জন্মশতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। তবে জাতির পিতার প্রতিকৃতি ও টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং বিভিন্ন প্রকাশনা ও স্যুভেনির প্রকাশসহ অন্য কর্মসূচিগুলোর আয়োজন অব্যাহত রাখা হবে। এটি তো বছরব্যাপী অনুষ্ঠান। স্বল্পপরিসরে আয়োজিত এসব কর্মসূচিতেও জনসমাগম এড়িয়ে চলা হবে। মুজিববর্ষের বড় ধরনের আয়োজনের তারিখ কয়েক সপ্তাহ পর জানানো হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমনকি ২৬ মার্চ শিশুদের যে অনুষ্ঠান আমরা করি, সেটিও স্থগিত করে দিয়েছি। যাতে কোনোভাবে এটা মানুষের ক্ষতি করতে না পারে। তবে আমরা অন্যান্য কর্মসূচি অব্যাহত রাখব। পুষ্পমাল্য অর্পণ ও টুঙ্গিপাড়ায় শিশুদের অনুষ্ঠান সীমিত পরিসরে করব।

এ রোগে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যার পরিসংখ্যান তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, করোনাভাইরাস একধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগ। এ রোগে মৃত্যুর হারও সামান্য, মাত্র ৩ শতাংশ। ৬০ হাজারের বেশি মানুষ চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। এর পরও বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ এবং যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রোগ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য বিমানবন্দরসহ দেশে প্রবেশের সব স্থল ও নৌবন্দরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

যেসব দেশে ভাইরাস দেখা দিয়েছে সেসব দেশ থেকে বাংলাদেশে আসার অন-অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, এ রোগে চিকিৎসা নিলেই সুস্থ হওয়া সম্ভব। কাজেই এ নিয়ে দুশ্চিন্তার দরকার নেই। কারও মধ্যে কেবল সন্দেহ হলেই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। তবে ব্যতিব্যস্ত হওয়ারও কিছু নেই। সাধারণত ঋতুবদলের সময় বা শীত শেষে গরম আসার সময় মানুষের সর্দি-কাশি হয়। সাধারণ সর্দিজ্বরকে ভয় পাওয়ার দরকার নেই। আর সাধারণ সর্দি-কাশি হলেই চিকিৎসকের কাছে ছোটাছুটিরও প্রয়োজন নেই। এগুলো ওষুধেই সেরে যাবে।

দেশের মানুষকে সরকার নির্দেশিত অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু একটু পরিস্কার- পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। খুব বেশি জনসমাগম হয় সেখানে না যাওয়া- সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। হাঁচি, কাশি দিতে গেলে রুমাল বা টিস্যু ব্যবহার করতে হবে। কাপড় দিয়েও রুমাল তৈরি করা যায়। এসব ব্যবহারের পর যেখানে-সেখানে না ফেলা। ময়লা রাখার আলাদা ব্যাগ বা বিন রাখা দরকার।

হাত ধোয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, বাইরে গেলে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে যথাযথভাবে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। খাবার মুখে দেওয়ার আগে হাত ভালো করে ধুয়ে দিতে হবে। বেশি বেশি পানি ও ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খাওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, হাঁচি-কাশির সময় হাতের বদলে বাহু ব্যবহার করা যেতে পারে। সূচনা বক্তব্যের পর শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মুজিববর্ষ ও মার্চ মাসের বিভিন্ন কর্মসূচিসহ সাংগঠনিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

মন্ত্রিসভায় করোনা নিয়ে আলোচনা, জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর :করোনাভাইরাস ও মুজিব শতবর্ষ সম্পর্কে অপ্রাসঙ্গিক কথা না বলার জন্য মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, করোনাভাইরাস নিয়ে দেশবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই। করোনা মোকাবিলায় সরকারের সকল প্রস্তুতি রয়েছে। জনগণকে সচেতন করতে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা প্রতিনিয়ত কথা বলছেন। এর বাইরে জনগণ আতঙ্কিত হয় এমন কথা বলা থেকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এমনকি এমপিদের বিরত থাকতে হবে। একইসঙ্গে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সকলকে জনসমাগম এড়িয়ে চলারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে তার তেজগাঁও কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক শেষে অনির্ধারিত আলোচনায় শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। বৈঠক সূত্র এ তথ্য সমকালকে নিশ্চিত করেছে। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম।

সূত্র জানায়, বৈঠকে করোনাভাইরাসের কারণে মুজিব শতবর্ষের জনসমাবেশ স্থগিতের বিষয়ে আলোচনা হয়। কেউ কেউ এ বিষয়ে ভিন্নভাবে বলার চেষ্টা করলে প্রধানমন্ত্রী তাদের থামিয়ে দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে মুজিব শতবর্ষের জনসমাবেশের কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। সে সম্পর্কে সংশ্নিষ্ট কমিটি বিস্তারিত জানিয়েছে। আমন্ত্রিত বিদেশি অতিথিরা কেন আসতে পারছেন না সে সম্পর্কেও বলেছেন। সুতরাং এর বাইরে ভিন্নভাবে কথা না বলার জন্য মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। চীনে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্য বিভাগ সকল প্রস্তুতি শুরু করেছে। এটি ছোঁয়াচে রোগ। তাই ইতোমধ্যে তিন স্তরের কর্মকৌশল নেওয়া হয়েছে। এটি যাতে দেশে প্রবেশ করতে না পারে প্রথমে সেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। দ্বিতীয়ত, এসে পড়লে কীভাবে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা হবে এবং তৃতীয় স্তর হলো প্রাদুর্ভাব হলে কীভাবে ম্যানেজ করা যাবে।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব বলেন, এ ভাইরাসের প্রকৃতিটা একটু জানা দরকার। ভাইরাস যদি থাকে তবে সঙ্গে সঙ্গে জ্বর আসবে না, ধরা পড়বে না বা উপসর্গ দেখা দেবে না। ১৪ দিন পর্যন্ত উপসর্গ নাও দেখা দিতে পারে। যখন তিনি দেশে এসেছেন কোনো উপসর্গ ছিল না।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts