বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ স্বাগত ১৪২৭। ১৪২৬ সনকে বিদায় জানিয়ে এলো বাংলা নতুন বছর। আবহমানকাল ধরেই চলছে বৈশাখ বরণের আনুষ্ঠানিকতা। এবার নাইবা হলো উৎসব কিংবা বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান, এবার হোক নিজেকে সুরক্ষার মন্ত্রপাঠ।
বাংলা নববর্ষ ও বৈশাখের ইতিহাসে চোখ ফেরালে দেখা যায়, বাংলা নববর্ষের সঙ্গে সবচেয়ে নিবিড় সম্পর্ক কৃষির। এ সম্পর্কের সূত্রেই বাংলা সাল প্রবর্তন করেন সম্রাট আকবর। তার আমলেই প্রবর্তন হয় বাংলা সাল।
এবারের বৈশাখে রমনার বটমূলে ছায়ানট নেই। মঙ্গল শোভাযাত্রা নেই। মানুষের ঢল নেই রমনা শাহবাগে, ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবরে। কোন আয়োজন না থাক, তবু ভোরের প্রথম আলো রাঙিয়ে দেবে নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে। যে প্রত্যাশায় থাকবে করোনাভাইরাস মুক্ত নতুন বিশ্ব আর নতুন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।
আমরা ঘরে বসেই এবারের নববর্ষের আনন্দ উপভোগ করবো। গাইবো কবিগুরুর কালজয়ী গান ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো/মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’
সোমবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘করোনাভাইরাসের যে গভীর আঁধার আমাদের বিশ্বকে গ্রাস করেছে, সে আঁধার ভেদ করে বেরিয়ে আসতে হবে নতুন দিনের সূর্যালোকে।’
তিনি কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ভাষায় উচ্চারণ করেন :
মেঘ দেখ কেউ করিসনে ভয়/ আড়ালে তার সূর্য হাসে,/হারা শশীর হারা হাসি/অন্ধকারেই ফিরে আসে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সমগ্র বাংলাদেশে এবং প্রবাসে বাঙালিরা বাংলা নববর্ষ আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপন করে থাকেন। রাজধানীতে রমনা পার্ক, চারুকলা চত্বর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ নগরীর নানা স্থান মানুষের ভিড়ে মুখরিত থাকে এ দিনটি। গ্রামীণ মেলা, হালখাতাসহ নানা অনুষ্ঠানে গোটা দেশ মেতে উঠে।এবার সবাইকে অনুরোধ করবো- কাঁচা আম, জাম, পেয়ারা, তরমুজ-সহ নানা মৌসুমী ফল সংগ্রহ করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাড়িতে বসেই নববর্ষের আনন্দ উপভোগ করুন। আপনারা বিনা কারণে ঘরের বাইরে যাবেন না। অযথা কোথাও ভিড় করবেন না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করুন, পরিবারের সদস্যদের রক্ষা করুন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে আঁধার আমাদের চারপাশকে ঘিরে ধরেছে, তা একদিন কেটে যাবেই। বৈশাখের রুদ্র রূপ আমাদের সাহসী হতে উদ্বুদ্ধ করে। মাতিয়ে তোলে ধ্বংসের মধ্য থেকে নতুন সৃষ্টির নেশায়। বিদ্রোহী কবির ভাষায় তাই বলতে চাই:
ঐ নূতনের কেতন ওরে কাল-বোশেখীর ঝড়।
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!
ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর? প্রলয় নূতন সৃজন-বেদন!
আসছে নবীন- জীবন হারা অ-সুন্দরে করতে ছেদন!
এর আগে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে পহেলা বৈশাখের সমাগমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। সারাদেশে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি চলছে। এটা ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। এবার তাই কোন রকম আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই নতুন বর্ষকে বরণ করে নেয়া হবে।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীসহ বাঙালিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
আজ যা নতুন, সময়ের ছুটে চলায় তা পেছনে পড়ে। পুরোনো হয়। সেই অমোঘ নিয়মে পুরোনো হলো আরো একটি বছর।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ভাষায়- ‘বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/ যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে যাওয়া গীতি/ অশ্রুবাষ্প সুদূরে মেলাক…।’