বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ দেশে করোনাভাইরাস ডিজিজ শনাক্তের দুই মাস পর আক্রান্তের সংখ্যার পাশাপাশি ক্রমেই বাড়ছে মৃত্যুর মিছিলও। বুধবার পর্যন্ত এতে আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ হাজার ৮২২ জন। আর মৃত্যু সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৬৯ জন।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়। তার ১০ দিন পর ১৮ মার্চ তাতে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজন রোগীর মৃত্যু হয়। এরপর করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কিছুটা কমলেও চলতি মাসে সেই সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে।
গত ৭ মে থেকে ১২ মে পর্যন্ত মাত্র ৬ দিনে মৃত্যু হয়েছে ৭২ জনের। অর্থাৎ এ সময় গড়ে প্রতিদিন ১২ জনের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর তালিকায় শিশু থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ কেউই বাদ পড়েনি।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত ১৯ জনের মধ্যে ১৩ জনই রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা। তাদের একজনের ঠিকানা লেখা রয়েছে পাবনা। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জের একজন, মুন্সিগঞ্জ একজন, খুলনা বিভাগে একজন (নড়াইল), চট্টগ্রাম বিভাগের তিনজন (চট্টগ্রামে দুজন ও কুমিল্লায় একজন)।
বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মৃত ১৯ জনের মধ্যে ১০ বছর বয়স পর্যন্ত একজন মেয়েশিশু রয়েছে। ৩১ থেকে ৪০ বছরের একজন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৭ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ৫ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৫ জন রয়েছেন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘আপনার সুরক্ষা আপনার হাতে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে সামনের দিনগুলোতে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতির হতে পারে।’
বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইউনিসেফ জানায়, বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের জরুরি স্বাস্থ্য সেবা প্রাপ্তি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ২০১৯ সালের মার্চের তুলনায় ২০২০ সালের মার্চে সেবা গ্রহণ ২৫ শতাংশ কমেছে।
শিশুদের নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের এই প্রতিষ্ঠানটি আরো বলছে, মাতৃ ও নবজাতকের স্বাস্থ্য সেবা প্রাপ্তিও ব্যাপকহারে প্রায় ১৯ শতাংশের মতো কমেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০১৯ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরের তুলনায় ২০২০ সালের জানুয়ারি-মার্চে মায়েদের গর্ভকালীন সেবার জন্য স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যাওয়া এবং সন্তান জন্মের পর স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে গিয়ে চেকআপের মতো জরুরি মাতৃ স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ ব্যাপক মাত্রায় কমেছে, এছাড়া স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে সন্তান জন্ম দান ২০১৯ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরের তুলনায় ২০২০ এর জানুয়ারি-মার্চে ২১.২ শতাংশ কমেছে।
মহামারীর কারণে বাংলাদেশে হাম ও রুবেলের টিকাদান ক্যাম্পেইন স্থগিত করা হয়েছে, যেখানে ৯ মাস থেকে ৯ বছর বয়সী তিন কোটি ৪০ লাখ শিশুকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছিল। শিশুদের নিয়মিত টিকাদান চালু থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ে টিকা দেওয়া হচ্ছে না এবং লকডাউনের কারণে স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রগুলোতে টিকা পরিবহনও চ্যালেঞ্জের হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নতুন এক গবেষণায় আভাস দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ আরও কমে গেলে আগামী ছয় মাসে মহামারীর পরোক্ষ প্রভাবে সম্ভাব্য সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে পাঁচ বছরের কম বয়সী অতিরিক্ত ২৮০০০ শিশুর মৃত্যু হতে পারে। উচ্চতার অনুপাতে ওজন কম হওয়া, যা অপুষ্টির একটি ধরন, পাঁচ বছরের কম বয়সী এসব শিশুর মৃত্যুর ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা রাখবে।
ইউনিসেফ জানায়, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মনোযোগ মহামারী মোকাবেলার দিকে চলে যাওয়ায় মা, নবজাতক ও শিশুর নিয়মিত বা রুটিন স্বাস্থ্য সেবাসমূহ অব্যাহত রাখার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করছে ইউনিসেফ, যা শিশু ও মাতৃ স্বাস্থ্যের জন্য সমানভাবে জরুরী। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ইতোমধ্যেই ২,০০০ ডাক্তার ও ৫,০০০ অতিরিক্ত নার্স নিয়োগ দিয়েছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সুদৃঢ় করতে অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি এই সময়ে স্বাস্থ্য খাতে বৃহত্তর বিনিয়োগ প্রয়োজন।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি তোমো হোযুমি বলেন, “মহামারীর কারণে স্বাস্থ্য সেবা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেলে প্রতিরোধযোগ্য ও আরোগ্য লাভ করা সম্ভব এমন অবস্থা থেকে হাজার হাজার শিশু মারা যেতে পারে। নারী ও শিশুদের জন্য জীবনরক্ষাকারী সেবা সহজলভ্য, নিরাপদ এবং সেবা গ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে ইউনিসেফ।”