শিউল মনজুর
বইটিতে রয়েছে ৩২টি কবিতা। পড়তে পড়তে মনে হয়েছে এক একটি কবিতা যেনো চাঁদের কণা। আবার কখনো মনে হয়েছে প্রভাতের আলোর মতো নরম কোমল সুন্দর। কখনো বা আবার মনে হয়েছে, পাতার আড়ালে বিকেলের স্নিগ্ধ আলোর খেলা।
তৃপ্তি গাঙ্গুলীর সোনার ফাঁসের কবিতার বই পড়তে পড়তে আমার এমনই হয়েছে নান্দনিক অভিজ্ঞতা। যদিও এটি তৃপ্তি গাঙ্গুলীর প্রথম কবিতার বই কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে তাঁর কবিতায় গল্প আছে, গল্পের ভেতরে একটা মোচড় আছে যা পাঠককে সম্মোহন করে রাখার ক্ষমতা আছে। মনেই হয়নি একজন কবির প্রথম কবিতার বই পড়ছি। বরং কবিতার বর্ণনায় সহজ সাবলীল, সাথে সাথে পরিশীলতাও লক্ষণীয়। মেদহীন কবিতাগুলি বেশ ঝরঝরে। এই বইটির এমন কয়েকটি কবিতার অংশ বিশেষ এখানে উল্লেখ করছি, যা পাঠকদের মনে দোলা দেবে সহজেই;
এক. সুযোগ বুঝে একটা চাকু / ঢুকিয়ে দিলাম ওর হৃদপিন্ড বরাবর / তাকিয়ে দেখি / টপটপ করে রক্ত ঝরছে / আমারই বুকে (কবিতার শিরোনাম বুমেরাং, পৃষ্ঠা-১১)
দুই. রাত্রিকে সিজারিয়ান করে / জন্ম নেয় ভোর / কষ্টের রক্তপাতে / জন্ম নেয় ভালোবাসা (কবিতার শিরোনাম- জন্ম নেয়, পৃষ্ঠা-১০)
তিন. চৈত্রের কোনো দাবদাহে / আমাকে টেনে হিঁচড়ে মমতাজ উদ্দীন কলাভবনে / প্রচন্ড ক্ষোভে-রাগে বলতে পারতে / এসব পাগলামি করতে নেই / আমি তোমাকে ভালোবাসি (কবিতার শিরোনাম তোমার অক্ষমতা, পৃষ্ঠা-৩৮)
কবিতার এসব পঙক্তির ভেতর দিয়ে কবির জীবন ও দ্রোহের চেতনা আমরা উপলব্দি করতে পারি। সেই সাথে, পড়তে পড়তে কবিতার ভেতরের সারাংশ আমাদের চেতনার তীরে সমুদ্র জলের মতো আছড়ে পড়ে। বইটিতে আরও বেশ কিছু কবিতা আছে যে গুলি পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করবে বলে আমি নির্দিধায় বলতে পারি।
যেমন, তিন প্রহর (পৃষ্ঠা-৩১), আমার চুল খোলা (পৃষ্ঠা-০৯), মাথা নিচু করে থাকে (পৃষ্ঠা-১৫), দিনাজপুরে এসো (পৃষ্ঠা-৪০), তুমি আছো (পৃষ্ঠা-৩৯) প্রভৃতি কবিতা তৃপ্তি গাঙ্গুলীর শক্তিমত্তাকে ঘোষণা করে।
প্রকৃতপক্ষে যারা কবিতায় মানবতাবোধ, জীবনবোধ কিংবা প্রেম ভালোবাসা ও ঘটনার শিল্পময় পরিসমাপ্তি পাঠ করে তৃপ্তিবোধ করেন তাদেরকে তৃপ্তি গাঙ্গুলীর তৃপ্তিময় কবিতার পুস্তক, সোনার ফাঁস পড়তে বলবো।
সোনার ফাঁস’র সোনালি প্রচ্ছদ এঁকেছেন মোস্তাফিজ কারিগর। প্রতিটি কবিতার সাথে মানানসই রেখাচিত্রও রয়েছে যা পাঠককে বাড়তি তৃপ্তি দেবে বলে আশা করি।
শিউল মনজুর : কবি ও কথাসাহিত্যিক।