আরিফুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের বাসাইলে যথাযথ ধর্মীয় রীতি ও স্বাস্থবিধি অনুসরণ করে ঘাতক ব্যাধি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক মৃত ব্যাক্তির লাশ ঐ ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার নিজ গ্রামের কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করে মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন বাসাইল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফজলে এলাহী।
মৃত ব্যাক্তি উপজেলার ফুলকি ইউনিয়নের দোহার গ্রামের মৃত আহমদ আলীর ছেলে গাজিউর রহমান গনি (৭২)।
গত শনিবার ৬ জুন রাতে এসিল্যান্ড ফজলে এলাহি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা.আতিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি মেডিক্যাল টীম ও বাসাইল থানার এসআই মোশারফ হোসেনের নেতৃত্বে একটি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি টীম নিয়ে উপজেলার ফুলকি ইউনিয়নের দুর্গম এলাকা দোহার গ্রামে উপস্থিত হয়ে দোহার সামাজিক কবরস্থানে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি ও ধর্মীয় রীতি অনুসরণ করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে জানাজা শেষে এ দাফন কার্য সম্পন্ন করেন। সর্বোচ্চ সতর্কতার সহিত সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে রাত সাড়ে ১১টায় লাশ দাফন কাজ শেষ হয়।
এসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে দাফন কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতা করেন ফুলকি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বাবুল, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মজনু মিয়া, ফুলকি ইউনিয়ন করোনা প্রতিরোধ স্বেচ্ছাসেবক কমিটির সদস্য সচিব ও ৭ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আলী ইমরান আরিফ।
গ্রামের সাধারন মানুষের মধ্যে করোনার ভয় ও আতংকের কারনে, গ্রামের গোরস্থানে দাফন করা নিয়ে কিছুটা জটিলতা দেখা দিলেও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তা তাৎক্ষনিকভাবে নিরসন হয়।
মৃত গাজিউর রহমানের পারিবারিক সূত্রে জানা যায় রাজধানীর তেজগাঁও এর বাসায় গত ২৫ মে করোনার মৃদু উপসর্গ নিয়ে স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টাই পালনকালে অবস্থার অবনতি ঘটলে ১ জুন সোমবার তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৪ জুন তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা ল্যাবে পাঠানো হয়। ৫ জুন শুন্রবার সকালে তার করোনা ভাইরাস পজেটিভ রিপোর্ট আসে। ৬ জুন শনিবার কুর্মিটোলা জেলারেল হাসপাতালের পজেটিভ ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মূলত তিনি প্রায় দুই সপ্তাহ যাবত জীবনবদকারি ঘাতক ব্যধি করোনা ভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করে অবশেষে হেরে গেলেন মৃত্যুর কাছে। সেখান থেকে রাত পৌনে ১১টারর দিকে লাশ গ্রামের বাড়ি দোহারে নিয়ে আসে তার স্বজনরা।
মৃত গনি মিয়ার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী মিসেস নাহার জানান কর্মজীবনে তিনি সরবারি চাকুরী জীবি ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ পরিসংখ্যাণ ব্যুরোর পরিসংখ্যাণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বছর দশেক আগে তিনি অবসরে আসেন। সরকারি চাকরি শেষ করেই তিনি ওয়াল্টন গ্রুপে চাকরিতে যোগদান করেন। তার স্ত্রী রেনু বেগমও ভূমি জরিপ কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি জীবন শেষ করেছেন। তাদের কোন সন্তানাদি নেই। নিঃসন্তানী এই ব্যাক্তি মৃত্যুকালে তার স্ত্রী, ভাই-বোনসহ অনেক আত্মীয় স্বজন রেখে যান।তিনি রাজধানীর তেজগাঁ এলাকায় তার নিজস্ব বাসায় বসবাস করতেন।
মেডিক্যাল টীম প্রধান ডা. আতিকুল ইসলাম বলেন, করোনায় আক্রান্ত কিংবা মৃত ব্যাক্তি কোন অপরাধী নয়। তারাও মানুষ।তাদের প্রতি মানবিক আচরণ করা আমাদের দায়িত্ব। সে দায়িত্ববোধ থেকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুুসণ করে দাফন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ফজলে এলাহি গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের প্রতিটা ব্যাপারেই মানবিব হতে হবে।”মানুষ মানুষের জন্য, কার, কখন, কিভাবে মৃত্যু হবে কেউ জানেনা। আর করোনা কোন ভয় বা অতংক নয়। যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেইনটেইন করে চললেই আমরা সবাই করোনাকে জয় করতে পারব ইনশাআল্লাহ।দাফনের ব্যাপরে তিনি বলেন মেডিক্যাল টীমের স্বাস্থ্যবিধি পালন করেই দাফন কার্যক্রম সুন্দর ভাবেই সম্পন্ন করা হয়েছে।তিনি বলেন,মৃত ব্যাক্তির স্ত্রী রানু বেগম, ভাই সোহরাব, সুরুজ্জামান,ভাতিজা নাহিদসহ ৭ জনকে ১৫ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে অবস্থান করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।