আতিকুর রহমান নগরী
কোরবানি মহান পালনকর্তার তরফ থেকে বান্দার জন্য একটি স্পেশাল নেয়ামত। নবী হযরত ইবরাহিম খলিলুল্লাহ আ. এর ত্যাগের মহিমা মাখা উজ্জল নিদর্শন। প্রভুর হুকুম তামিলে প্রিয়পাত্র হিসেবে নিজপুত্র হযরত ইসমাঈল আ. এর গলায় ছুরি চালিয়ে বিশ্ববাসিকে তাক লাগিয়ে প্রভু প্রেমের অভুতপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করায় পুত্র ইসমাঈল যাবিহুল্লাহ খেতাবে ভূষিত হলেন। তারই ধারাবাহিকতায় মুসলিম উম্মাহ প্রতি বছর দশ জিলহাজ্ব তারিখে প্রভুর নৈকট্য লাভের আশায় পশু কোরবানি করে থাকেন।
কোরবানির দিনে করণীয়:
ঈদের সালাত আদায় করা, এর জন্য সুগন্ধি ব্যবহার, পরিচ্ছন্নতা অর্জন, সুন্দর পোশাক পরিধান করা। তাকবীর পাঠ করা। কোরবানির পশু জবেহ করা ও তার গোশত আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব ও দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা। এ সকল কাজের মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য অর্জন ও সন্তুষ্টি অন্বেষণের চেষ্টা করা। এ দিনটাকে শুধু খেলাধুলা, বিনোদন ও পাপাচারের দিনে পরিণত করা কোনভাবেই ঠিক নয়। কোরবানি পশু উৎসর্গ করা হবে এক আল্লাহর এবাদতের উদ্দেশ্যে যার কোন শরিক নেই। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন শুধু তার এবাদত করার জন্য। যেমন- তিনি বলেন: ‘আমি জিন ও মানুষকে এ জন্য সৃষ্টি করেছি যে তারা শুধু আমার এবাদত করবে।’
আল্লাহ তাআলা সূরা কাওসারে বলেছেন ‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও পশু কোরবানি কর।’ অর্থাৎ তোমার সালাত ও কোরবানি তারই জন্য আদায় কর। কেননা মুশরিকরা প্রতিমার উদ্দেশে প্রার্থনা করে ও পশু জবেহ করে। আর সকল কাজে এখলাস অবলম্বন করতে হবে। এখলাসের আদর্শে অবিচল থাকতে হবে।
হাদিসে এসেছে আবু তোফায়েল থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : আমি আলী ইবনে আবি তালেবের কাছে উপস্থিত ছিলাম। এক ব্যক্তি তার কাছে এসে বলল ‘নবী কারীম স. গোপনে আপনাকে কি বলেছিলেন ?’ বর্ণনাকারী বলেন : আলী রা. এ কথা শুনে রেগে গেলেন এবং বললেন : ‘নবী কারীম স. মানুষের কাছে গোপন রেখে আমার কাছে একান্তে কিছু বলেননি। তবে তিনি আমাকে চারটি কথা বলেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর লোকটি বলল: ‘হে আমিরুল মোমিনীন! সে চারটি কথা কি ? তিনি বললেন, ১. যে ব্যক্তি তার পিতামাতাকে অভিশাপ দেয় আল্লাহ তাকে অভিশাপ দেন। ২. যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে পশু জবেহ করে আল্লাহ তার উপর লা’নত করেন। ৩. ঐ ব্যক্তির উপর আল্লাহ লা’নত করেন যে ব্যক্তি কোন বেদআতীকে প্রশ্রয় দেয়। ৪. যে ব্যক্তি জমির সীমানা পরিবর্তন করে আল্লাহ তাকে লা’নত করেন। এ কাজগুলো এমন, যে ব্যক্তি তা করল সে ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে কুফরির সীমানায় প্রবেশ করল।
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম নবভী রহ. বলেন, আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে পশু জবেহ করার অর্থ এমন, যেমন কোন ব্যক্তি প্রতিমার নামে জবেহ করল অথবা কোন নবীর নামে জবেহ করল বা কাবার নামে জবেহ করল। এ ধরনের যত জবেহ হবে সব নাজায়েজ ও তা খাওয়া হারাম। জবেহকারী মুসলিম হোক বা অমুসলিম।
কোরবানির অর্থ ও তার প্রচলন:
আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য অর্জন ও তার এবাদতের জন্য পশু জবেহ করাকে কোরবানি বলা হয়। আর আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু জবেহ করা তিন প্রকার হতে পারে- ১. হাদী ২. কোরবানি ৩. আকীকাহ। তাই কোরবানি বলা হয় ঈদুল আজহার দিনগুলোতে নির্দিষ্ট প্রকারের গৃহপালিত পশু আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য যবেহ করাকে। ইসলামি শরিয়তে এটি এবাদত হিসেবে সিদ্ধ, যা কোরআন, হাদিস ও মুসলিম উম্মাহর ঐক্যমত দ্বারা প্রমাণিত।
কোরবানির হুকুম:
এ বিষয়ে ইমাম ও ফকীহদের মাঝে দুটো মত রয়েছে। প্রথমত : কোরবানি ওয়াজিব। ইমাম আওযায়ী, ইমাম লাইস, ইমাম আবু হানীফা রাহ. প্রমুখের মত এটাই। আর ইমাম মালেক ও ইমাম আহমদ রহ. থেকে একটি মত বর্ণিত আছে যে তারাও ওয়াজিব বলেছেন। দ্বিতীয় মত: কোরবানি সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। এটা অধিকাংশ উলামাদের মত। এবং ইমাম মালেক ও শাফেয়ী রাহ.’র প্রসিদ্ধ মত। কিন্তু এ মতের প্রবক্তারা আবার বলেছেন, সামর্থ্য থাকা অবস্থায় কোরবানি পরিত্যাগ করা মাকরূহ। যদি কোন জনপদের লোকেরা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সম্মিলিতভাবে কোরবানি পরিত্যাগ করে তবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হবে। কেননা, কোরবানি হল ইসলামের একটি মহান নিদর্শন।
লেখক: আলেম ও সাংবাদিক।