বায়ান্নর ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন

শাহ মতিন টিপু

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। ভাষা শহীদদের স্মৃতিবিজড়িত ফেব্রুয়ারি এই দেশের মানুষের চেতনায় এক অনির্বাণ বাতিঘর। ১৯৫২’র ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের মাইলফলক।

যদিও শুরুটা ১৯৪৭ সালের পর থেকেই।  পাকিস্তান কৌশলে বাঙালি জনগোষ্ঠীর ভাষার ওপর প্রথম আঘাত হানে। মায়ের ভাষায় কথা বলাও তারা বন্ধ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র শুরু করে। কিন্তু বাংলার মানুষ সেই ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করতে একবিন্দু পিছু হঠেনি।  শুরু হয় বাংলাভাষা রক্ষার আন্দোলন। প্রতিদিন রাজপথে চলতে থাকে মিছিল সমাবেশ।  আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অনেক চড়াই-উৎরাই পার করে চূড়ান্ত রূপ লাভ করেছিল ৫২’র ২১ ফেব্রুয়ারি।

বায়ান্নর আগুনঝরা সে দিনগুলো বিশ্বের ইতিহাসে চির স্মরণীয়। কেমন ছিল বায়ান্নর ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন। এ সম্পর্কে  ভাষা সংগ্রামী আহমদ রফিক এক স্মৃতিকথনে লেখেন, ‘সে বছর ঢাকায় মাঘের শীতটা বেশি মাত্রায় এসেছিল। মাঘের সে শীত বাঘের গায়ে লাগতে পারে, কিন্তু ঢাকার ছাত্রদের গায়ে তেমন লাগেনি। কারণ একটাই -সাতাশে জানুয়ারি পল্টন ময়দানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন তার দীর্ঘ বক্তৃতায় রাষ্ট্রভাষা প্রসঙ্গে বলেন যে, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দুই হতে যাচ্ছে। এটুকু বলেই তিনি থামেননি। প্রসঙ্গক্রমে তাদের কায়েদে আজমের ভাষা বিষয়ক মতামত, প্রাদেশিকতা, এক রাষ্ট্রে এক রাষ্ট্রভাষা ইত্যাদি বিষয়েও কথা বলেন তিনি এবং উর্দু বিরোধীদের ‘পাকিস্তানের দুশমন’ বলে ঘোষণা করেন। যেমনটা করেছিলেন, পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৮ মার্চে ঢাকা সফরে এসে।’

তিনি লেখেন, ‘বায়ান্ন ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনটি এই মাতৃভাষা রাষ্ট্রভাষার ধারাবাহিকতার ফসল। সে দিনটিতে ছিল ছাত্রাবাসের বাসিন্দাদের মনে ধিকিধিকি জ্বলা ক্ষোভ। ঐ দিনটিতে বিশেষ কিছু না ঘটলেও কিছু ঘটানোর প্রস্তুতি ছিল মনে। ছিল ধারাবাহিকতার দিনপঞ্জিতে পুরনো পাতাগুলো উল্টে দেখার। সবার না হলেও কারো কারো মনে এমন ভাবনারই উথাল-পাতাল চলেছে তখন।’

তিনি আরো লেখেন, ‘পহেলা ফেব্রুয়ারির দিনলিপিতে ভুক্তির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল হাতেগোনা কয়েকটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত ভাষা আন্দোলন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠনের খবর।’

ভাষার মাসের প্রথম দিন আজ। অবশ্য এবছর ভাষার মাসে প্রতিবারের মতো অমর একুশে গ্রন্থমেলার আয়োজন নেই। করোনা পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে সব। যে আয়োজনের জন্য এই মাসটি আমাদের কাছে হয়ে ওঠে চরম ব্যঞ্জনাময়, যে মেলাকে ঘিরে আমরা এক আলাদা দ্যোতনায় উজ্জীবিত হই, দেশাত্মবোধের অন্যরকম এক আবেগ ও উদ্দীপনায় জেগে ওঠে সর্বস্তরের মানুষ। সে আয়োজনটি না থাকা এক মহা কষ্টেরই অনুভূতি।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts