খান মাইনউদ্দনি, বরিশাল: সংগঠনকে গতিশীল ও শক্তিশালী করতে সারাদেশে নতুন কমিটি গঠন করছে বিএনপির ‘ভ্যানগার্ড’ খ্যাত ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। কিন্তু বরিশালে দেড়যুগ পর পুনর্গঠন করা ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিটে ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের বাদ দিয়ে অছাত্র, নেশায় আসক্ত, বিবাহিত, এক্স-রে অপারেটর, ঢাকায় চাকরিজীবী এবং ছাত্রলীগের কর্মীদের নিয়ে কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে।
গত এক যুগ ধরে পুলিশের মামলা-হামলায় বিপর্যস্ত কারাবরণকারী ছাত্রত্ব আছে এমন কর্মীদের উপেক্ষা করা হয়েছে। ছাত্রদলের কমিটিতে স্থান পেতে সর্বনিম্ন ২০০৫ সালে এসএসসি পাস, অবিবাহিত এবং সব শেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের প্রত্যয়নপত্রসহ জীবন বৃত্তান্ত জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু নতুন কমিটিতে স্থান পাওয়া অনেকের ক্ষেত্রে এই শর্ত উপেক্ষিত হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত ৭ জানুয়ারি বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্রদলের কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। এই কমিটির সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল মিশন জেলা ছাত্রলীগের এক সহ-সভাপতির ঘনিষ্ঠ কর্মী। ওই নেতার সঙ্গে ছাত্রলীগের মিছিলেও ছবি রয়েছে তার। এই কমিটির আহবায়ক ফয়সালুর রহমান ইমনের ছাত্রত্ব নেই। বরিশাল সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রদলের সদ্য গঠিত কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়ে গত ৩১ জানুয়ারি দুপুরে নগরীর সদর রোড অশ্বিনী কুমার হল সংলগ্ন বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন সংগঠনের একাংশের নেতারা।
একই দিন (৭ জানুয়ারি) বিএম কলেজের অনুমোদনকৃত ছাত্রদলের কমিটিতে মাজাহারুল ইসলাম বাবুকে আহবায়ক ও সজল তালুকদারকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বাবুর ছাত্রত্ব নেই। ছাত্রদলের কর্মসূচিতেও বিগত দিনে তাকে দেখা যায়নি। আহবায়ক পদ পাবার জন্য ছাত্রদলের ফরমের তথ্যও পূরণ করেননি তিনি। স্থানীয় দুই ছাত্রদল নেতার অনুসারী হিসেবে পরিচিত ঢাকায় বেসরকারি চাকরিজীবী বাবু পেয়েছেন বিএম কলেজ আহবায়ক পদ। এই কমিটির ২১ সদস্যের ৫ জন ছাত্রদলের রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। নতুন এ কমিটিতে অছাত্র, কর্মজীবী ও বিবাহিতদের পদায়ন করা হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে কমিটি পুনর্গঠনের দাবি জানিয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সংগঠনের পদবঞ্চিত নেতারা।
সরকারি বরিশাল কলেজ ছাত্রদলের আহবায়ক রফিকুল ইসলাম টিপুও বিবাহিত বলে অভিযোগ রয়েছে। নগরীর ১ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের কমিটিতে জিয়াদ হাওলাদাকে আহবায়ক ও এসএম আরাফাত রহমানকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী জিয়াদের বয়স ১৫ বছর। শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রাথমিক পাস। আরাফাত বিএম কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর অধ্যয়নরত। বয়সে এবং শিায় কম যোগ্যতাসম্পন্ন জিয়াদের সঙ্গে রাজনীতি করতে আপত্তি আছে আরাফাতের। ৩ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের আহবায়ক আবু তাহের। তিনি চারটি মাদক মামলার আসামি। ৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সদস্য সচিব মাহিন ইসলাম মারুফ দলে নিষ্ক্রিয়। ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ছাত্রদলের আহবায়ক আশিক হাওলাদার রানার চেয়ে সদস্য সচিব তারেক রহমান সম্রাট পাঁচ ব্যাচ সিনিয়র। অভিযোগ রয়েছে, ৯ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের আহবায়ক সুজন খানের শিাগত যোগ্যতা নেই। অথচ ওই ওয়ার্ডে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণির অনেকে ছাত্রদলের পদপ্রত্যাশী ছিলেন। ১১ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের আহবায়ক আওয়ামী লীগ পরিবারের আজাদ সরদার। তার বাবা ওয়াহেদ সরকার পদ্মা অয়েল কোম্পানির শ্রমিক লীগ নেতা। ১৯ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের আহবায়ক ঢাকায় চাকরি করেন অছাত্র তারিকুল ইসলাম সবুজ। ২১ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের আহবায়ক নোমান হোসেন অছাত্র। বিবাহিত এক সন্তানের জনক ও অছাত্র নূরে আলম ২৬ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের আহবায়ক। ২৭ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের আহবায়ক পারভেজ হোসেন পাভেল। তিনি বিবাহিত ও দুই সন্তানের জনক এবং নগরীর সদর রোডের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এক্স-রে অপারেটর। তবে ত্যাগী নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের কমিটিতে মূল্যায়ন করা না হলে নতুন প্রজন্ম ছাত্রদলের রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মহানগর ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির।
কমিটির ব্যাপারে মহানগর ছাত্রদল সভাপতি রেজাউল করিম রনি বলেন, দীর্ঘ ১৫-১৬ বছর পর মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও কলেজ ছাত্রদলের কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতৃবৃন্দ সমন্বয় করে কমিটি দিয়েছে। প্রত্যাশিত পদ না পেয়ে অনেকের রাগক্ষােভ থাকতে পারে।