বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ গৃহবধূ পুতুল ‘নিখোঁজ’ হলো। কিছুদিন পর একই এলাকায় একটি অর্ধগলিত (লাশ) কঙ্কাল মিললো। ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে তাকে নারী বললেও ডিএনএ রিপোর্ট তাকে ‘পুরুষ’ বলল।
ঘটনার শুরু ২০১৫ সালের ১৯ অক্টোবর। ওইদিন সিলেটের জৈন্তাপুরে বাবার বাড়িতে থাকা গৃহবধূ পুতুলের মোবাইল একটি কল আসে। সে কলের পর ঘর থেকে বের হয়ে পুতুল নিখোঁজ হন। এরপর ওই বছরের ৩ নভেম্বর পুতুলের মা মেয়ে নিখোঁজের ঘটনায় থানায় একটি জিডি করেন। একপর্যায়ে পুলিশ পুতুলের স্বামী ওমর ফারুক দোলনকে গ্রেপ্তার করে। এরপর ওই বছরের ৪ নভেম্বর সিলেটের জৈন্তাপুর থানায় মামলা করেন নিহতের মা আনোয়ারা বেগম।
সে মামলার অভিযোগে বলা হয়, ‘নিখোঁজের দিন টেলিফোনে ডেকে নিয়ে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে পুতুলকে হত্যা করে তার স্বামী।’ এই মামলার পরদিন ওই বছরের ৫ নভেম্বর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয় ওমর ফারুক।
অন্যদিকে, ওই বছরের ৩১ অক্টোবর সিলেটের জাফলং ভ্যালী বোর্ডিং স্কুল পার্শ্ববর্তী পাহাড়ী নালার পাশের জঙ্গল থেকে একটি ‘অর্ধগলিত কঙ্কাল’ উদ্ধার করে জৈন্তাপুর থানা পুলিশ। পরে ময়না তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য ‘অর্ধগলিত কঙ্কাল’টি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এটি ২-৩ মাস আগে মৃত কোন নারীর লাশ বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান।’
তবে পরিচয় নিশ্চিত হতে ‘অর্ধগলিত কঙ্কালটির ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হাসপাতালে পাঠানো হয়। ২০১৬ সালের ৪ ডিসেম্বর ডিএনএ রিপোর্ট দেওয়া হয়। সে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, কঙ্কালটি কোনো পুরুষের। আর এই ডিএনএ’র সাথে পুতুলের বাবা-মায়ের জৈবিক কোন মিল নেই। এমন বাস্তবতায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সেই কঙ্কালটির ডিএনএ পুনরায় পরীক্ষা করার উদ্যোগ নেন বলে উল্লেখ করেন। তবে কঙ্কালটির কবর চিহ্নিত করতে না পারায় পুনরায় ডিএনএ পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি।
একপর্যায়ে ২০১৭ সালের ১২ মার্চ পুতুলের স্বামী ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। বর্তমানে সিলেটের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।
সর্বশেষ এই মামলায় জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন ওমর ফারুক। সে আবেদনের শুনানি নিয়ে রোববার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওমর ফারুককে জামিন না দিয়ে পুতুল হত্যা মামলাটি ৬ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। সেই সাথে এবিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। রোববার আদালতে আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।