বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ রাজধানীর ওয়ারীর কে এম দাস রোডের একটি বাসা থেকে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সজীব হাসান (৩৫) নামের এক যুবকের লাশের পাঁচ টুকরা উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় লাশের টুকরার পাশে বসা থাকা শাহনাজ পারভীন (৫০) নামের এক নারীকে আটক করা হয়।
পুলিশ বলেছে, সজীবের সঙ্গে শাহনাজের সম্পর্ক ছিল। শাহনাজই ছুরি মেরে সজীবকে হত্যা করেন। পরে লাশ পাঁচ টুকরা করে স্বামীকে ফোন করে নিজের অবস্থান জানান ওই নারী।
জানা গেছে, তিন দিন ধরে ওই নারী নিখোঁজ ছিলেন। পরে ওই নারীর স্বামীর ফোন পেয়ে উদ্ধার করতে গিয়ে পাঁচ টুকরা লাশের পাশে থাকা শাহনাজকেও পাওয়া যায়। নিহত সজীব বুটিকসের কাজ করতেন।
ওয়ারী বিভাগের পুলিশ জানায়, শাহনাজের সঙ্গে সজীবের পাঁচ বছর আগে সম্পর্ক হয়। তখন শাহনাজকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে সজীব ১৭/১ কে এম দাস লেনের চতুর্থ তলায় বাসা ভাড়া নেন। শাহনাজের বাসাও একই এলাকায়। তখন থেকে সজীবের বাসায় নিয়মিত যেতেন। শাহনাজ সজীবের বাসায় বুটিকসের কাজ শিখছেন বলে তাঁর স্বামীকে বলে যেতেন। তাঁর স্বামী একজন ব্যবসায়ী। তাঁর দুই ছেলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন এবং একমাত্র মেয়ে কলেজে পড়েন।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, শাহনাজ তিন দিন আগে কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে উধাও হয়ে যান। তাঁর মুঠোফোনটি বন্ধ করে দেন। বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করে তাঁর সন্ধান পায়নি পরিবার। ওই ঘটনায় শাহনাজের স্বামী ওয়ারী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শাহনাজ তাঁর স্বামীকে ফোন করে বলেন, ‘আমি সজীবের বাসায় বিপদে আছি, আমাকে উদ্ধার করো।’
শাহনাজের স্বামী বিষয়টি ওয়ারী থানায় জানালে পুলিশ তাঁকে নিয়ে ওই বাসায় যায়। এ সময় পুলিশ ওই বাসায় ঢুকে দেখে, মেঝেতে উপুড় হওয়া দুই হাত-পা বিচ্ছিন্ন সজীবের পাঁচ টুকরা লাশ পড়ে আছে। পরে লাশের টুকরাগুলো ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়। রক্তমাখা ছুরিসহ শাহনাজ পারভীনকে আটক করে ওয়ারী থানায় নেওয়া হয়।
পুলিশের ওয়ারী অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার কামরুল ইসলাম বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে শাহনাজ পারভীন পুলিশ কর্মকর্তাদের বলেন, তিন দিন আগে ব্যাগভর্তি কাপড়চোপড় নিয়ে সজীবের বাসায় স্থায়ীভাবে থাকার জন্য উঠেছিলেন। তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক থাকলেও সজীব আরেকজনের সঙ্গে সম্পর্ক করার চেষ্টা করেন। এ নিয়ে আজ সকালে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে সজীব তাঁকে লাঠিপেটা করেন। এরপর সজীব ছুরি নিয়ে তাঁকে আঘাত করেন। ধস্তাধস্তির সময় তাঁর হাতে ছুরির আঘাত লাগে।
পুলিশ কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, শাহনাজের ভাষ্য, সজীবের কাছ থেকে তিনি ছুরি কেড়ে নিয়ে তাঁকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করেন। এতে সজীব মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান। এরপর ছুরি দিয়ে সজীবের দুই হাত ও পা বিচ্ছিন্ন করা হয়। পরে তিনি তাঁর স্বামীকে ফোন করেছিলেন। সজীবকে একাই হত্যা করেছেন বলে দাবি শাহনাজের।
ওয়ারী থানার পুলিশ জানায়, সজীবের বাড়ি ঝিনাইদহে। তাঁর স্বজনদের কাছে খবর পাঠানো হয়েছে। তাঁরা ঢাকায় পৌঁছালে এ ব্যাপারে শাহনাজের বিরুদ্ধে ওয়ারী থানায় হত্যা মামলা হবে।