বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটসহ সকল তামাকপণ্যে সুনির্দিষ্ট করারোপের মাধ্যমে মূল্যবৃদ্ধির জন্য এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী তামাকমুক্ত বাংলাদেশ ২০৪০ গঠনে একটি শক্তিশালী তামাক শুল্ক-নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য সম্প্রতি ৩৩৬ জন সংসদ সদস্যদেরকে চিঠি দিয়েছেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন (ডাম)-এর সভাপতি কাজী রফিকুল আলম।
প্রত্যেক সংসদ সদস্যকে আলাদা আলাদা ভাবে দেয়া এই চিঠিতে কাজী রফিকুল আলম বলেন, ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান সরকারের ধারাবাহিকতায় ব্যাপক আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমও ব্যাপকভাবে জোরদার করা হয়েছে। সরকারের তামাকবিরোধী নানাবিধ কার্যক্রমের ফলে তামাক ব্যবহার ২০০৯ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে ১৮.৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। স্বল্প সময়ে তামাকের এই ব্যবহার হ্রাস সরকারের সাফল্যের স্বাক্ষর বহন করলেও বাংলাদেশে এখনও প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক (ধূমপান ও ধোঁয়াবিহীন) ব্যবহার করেন ও ধূমপান না করেও প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বিভিন্ন পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র ও পাবলিক পরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন (গ্যাটস্ ২০১৭)। তামাক ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লক্ষ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করে (ট্যোবাকো এ্যাটলাস, ২০২০)। এছাড়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা।
কাজী রফিকুল আলম তার চিঠিতে আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে তামাক-কর ও দাম বৃদ্ধির জন্য ৩টি প্রস্তাবনা রাখেন। সেগুলো হলো-
১। সকল সিগারেট ব্রান্ডে অভিন্ন করভারসহ (সম্পূরক শুল্ক চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৬৫%) মূল্যস্তরভিত্তিক সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ (সম্পূরক) শুল্ক প্রচলন করা অর্থাৎ, নিম্ন স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৩২.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ; মধ্যম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৭০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ; উচ্চ স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১১০ টাকা নির্ধারণ করে ৭১.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ; এবং প্রিমিয়াম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৪০ টাকা নির্ধারণ করে ৯১ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।
২। ফিল্টারযুক্ত ও ফিল্টারবিহীন বিড়িতে অভিন্ন করভারসহ (সম্পূরক শুল্ক চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৪৫%) সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ (সম্পূরক) শুল্ক প্রচলন করা অর্থাৎ, ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১১.২৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ; এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৯ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।
৩। জর্দা এবং গুলের কর ও দাম বৃদ্ধিসহ সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ (সম্পূরক) শুল্ক প্রচলন করা অর্থাৎ, প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৪৫ টাকা নির্ধারণ করে ২৭ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক (৬০%) আরোপ; এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক (৬০%) আরোপ করা।
আগামী বাজেট অধিবেশনে তামাকপণ্যে সুনির্দিষ্ট করারোপের মাধ্যমে মূল্যবৃদ্ধির জন্য সমর্থন দেয়া ও অর্থমন্ত্রীর প্রতি অফিসিয়াল প্রস্তাবনা পত্র (ডিও লেটার) দেবার জন্য ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সভাপতি কাজী রফিকুল আলম সংসদ সদস্যদের প্রতি আহবান জানান।
উল্লেখ্য, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সভাপতি কাজী রফিকুল আলমের আহবানে সাড়া দিয়ে ইতিমধ্যে ডিও লেটার প্রদান করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ এবাদুল করিম।