বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ কবি নজরুল তার প্রত্যয়ী ও বলিষ্ঠ লেখনীর মাধ্যমে এদেশের মানুষকে মুক্তি সংগ্রামে অনুপ্রাণিত ও উদ্দীপ্ত করেছিলেন। তার গান ও কবিতা সব সময় যে কোনো স্বাধীনতা আন্দোলনে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে তিনি এ কথা বলেন। বাংলা ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে তিনি জন্মেছিলেন।
নজরুল সাহিত্যের বিচিত্রমুখী সৃষ্টিশীলতা আমাদের জাতীয় জীবনে এখনো প্রাসঙ্গিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কবি নজরুলের সাহিত্য ও সংগীত শোষণ, বঞ্চনা ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে মুক্তিরও দীক্ষা স্বরূপ। তার ক্ষুরধার লেখনীর স্ফুলিঙ্গ যেমন ব্রিটিশ শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিলো, তেমনি তার বাণী ও সুরের অমিয় ঝর্ণাধারা সিঞ্চিত করেছে বাঙালির হৃদয়কে। তিনি প্রকৃতই প্রেমের এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার কবি।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কবি কাজী নজরুল ইসলাম ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে মানবতার জয়গান গেয়েছেন, নারীর অধিকারকে করেছেন সমুন্নত। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি যিনি ব্রিটিশ অধীনতা থেকে ভারতকে মুক্ত করার জন্য স্বরাজের পরিবর্তে পরিপূর্ণ স্বাধীনতার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন। সকল জাতি, ধর্ম ও সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সাহসের প্রতীক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতীয় জাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ কবি নজরুল শুধু একজন কবি, সাহিত্যিক বা সংগীতজ্ঞই নন, তিনি ছিলেন বাঙালি জাতির রাজনৈতিক মুক্তি-সংগ্রামের অকুতোভয় সৈনিক। অসামান্য ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী কবি নজরুলের আজীবন সাধনা ছিলো সমাজের শোষিত ও নিপীড়িত মানুষের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি এবং মানুষের সামাজিক মর্যাদার স্বীকৃতি অর্জন। তার সাহিত্যকর্মে উচ্চারিত হয়েছে পরাধীনতা, সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামের বাণী।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় কবির জীবনাদর্শ একই দর্শনের ধারাবাহিক রূপ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনিও দেশের জন্য, জাতির জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করেছেন এবং দীর্ঘদিনের জন্য কারাবরণ পর্যন্ত করেছেন। মহান মানবতাবাদী কবি নজরুলের সংগ্রামশীল জীবন এবং তার অবিনাশী রচনাবলী জাতির জন্য অন্তহীন প্রেরণার উৎস।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে কবি নজরুলকে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে আনা হয়। পরে তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবির মর্যাদা দেওয়া হয়। নজরুল যে অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন তারই প্রতিফলন আমরা পাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সংগ্রাম ও কর্মে। বিদ্রোহী কবির জীবনাদর্শ অনুসরণ করে একটি অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, শান্তিপূর্ণ, সুখী-সমৃদ্ধ ও আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রয়াস অব্যাহত রাখতে হবে।’