নতুন বাজেটে জীবন ও জীবিকাকে সর্বাধিক গুরুত্ব

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’ শিরোনামে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট বৃহস্পতিবার (৩ জুন) বিকালে সংসদে পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

এবারের বাজেটে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে জীবন ও জীবিকা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, কর্মসংস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কৃষি খাত।

নতুন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত এই ব্যয় বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি। টাকার ওই অংক বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১৭.৫ শতাংশের সমান।

বিদায়ী অর্থবছরে মুস্তফা কামালের দেওয়া বাজেটের আকার ছিল ২০১৯-২০ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটের ১৩.২৪ শতাংশ বেশি এবং জিডিপির ১৭.৯ শতাংশের সমান।

বৃহস্পতিবার বিকালে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। তার আগে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর ওই প্রস্তাবে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

গতবারের মত এবারও অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালকে বাজেট দিতে হয়েছে করোনাভাইরাস মহামারীর সঙ্কটে টিকে থাকার পাশাপাশি অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার কঠিন চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে।

২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য ঠিক করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের আগের বাজেটগুলোতে উন্নয়ন খাত বরাবরই বেশি গুরুত্ব পেয়ে আসছিল। কিন্তু মহামারীর ধাক্কায় গতবছর থেকে সেই ধারায় কিছুটা ছেদ পড়েছে।

এবারের ৬ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকার বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ১৪ শতাংশ বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা।

এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। এরই মধ্যে এডিপি অনুমোদন করা হয়েছে।

এবার পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত অনুন্নয়ন বাজেটের চেয়ে প্রায় ১২ শতাংশ বেশি।

এর মধ্যে ৬৯ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধেই যাবে, যা মোট অনুন্নয়ন ব্যয়ের প্রায় ১৯ শতাংশের বেশি।

মহামারীর প্রথম ধাক্কা সামলে অর্থনীতির চাকা সচল হতে শুরু করেছিল এ বছর শুরুর দিকে। কিন্তু সংক্রমণ সামাল দিতে আবারও সরকারকে লকডাউনের পথে যেতে হয়েছে।

দুই বছর ধরে ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাভাবিক গতি না থাকায় রাজস্ব আহরণে লক্ষ্যের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে এনবিআর। কামাল আশা করছেন, নতুন অর্থবছরের সম্ভাব্য ব্যয়ের ৬৪ শতাংশ তিনি রাজস্ব খাত থেকে পাবেন।

তার প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। এই অংক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত রাজস্ব আয়ের প্রায় ১১ শতাংশ বেশি।

এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে ৩ লাখ ৩০ হাজার ৭৮ কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে আশা করছেন কামাল। ফলে এনবিআরের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ৯.৭ শতাংশ। টাকার ওই অংক মোট বাজেটের ৫৫ শতাংশের মত।

গতবারের মত এবারও সবচেয়ে বেশি কর আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে, ১ লাখ ২৭ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। এই অংক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১১ শতাংশের মত বেশি।

বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা। লক্ষ্য পূরণ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে তা ১ লাখ ১৫ হাজার ২১৭ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

আয়কর ও মুনাফার উপর কর থেকে ১ লাখ ৪ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়ার আশা করা হয়েছে এবারের বাজেটে। বিদায়ী সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা।

নতুন বাজেটে আমদানি শুল্ক থেকে ৩৭ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা, সম্পূরক শুল্ক থেকে ৫৪ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা, রপ্তানি শুল্ক থেকে ৫৬ কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক থেকে ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর ও শুল্ক থেকে ১ হাজার ৫০ কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী।

এছাড়া বৈদেশিক অনুদান থেকে ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা পাওয়া যাবে বলে বাজেট প্রস্তাবে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।

বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা, আদায় সন্তোষজনক না হওয়ায় তা সংশোধন করে ৩ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

২০২০-২১ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। সংশোধনে তা ৫ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে।

নতুন অর্থবছরের জন্য অর্থমন্ত্রী যে বাজেট প্রস্তাব সংসদের সামনে তুলে ধরেছেন, তাতে আয় ও ব্যয়ের সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে রেকর্ড ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকার মত, যা মোট জিডিপির ৬.২ শতাংশ।

Print Friendly

Related Posts