মেট্রো নিউজ : খবরটি এইচআইভি বহনকারীদের ভরসা যোগাবে নিঃসন্দেহে। বিশেষ করে যেখানে এইডস রোগীদের ছড়াছড়ি সেসব এলাকায় খবরটি খুবই স্বস্তির। খবরটি হচ্ছে- মানবশরীরে এমন একটি জিন আবিস্কৃত হয়েছে, যে জিনটি দেখলেই পালাচ্ছে এইডস ভাইরাস এইচআইভি।
মানবশরীরে ওই জিনটি সদ্যোজাত। শরীরে এই জিন থাকলে মানুষের কোষ, কলার ত্রিসীমানায় আসার সাহস পায় না এইচআইভি। চমকে দেওয়ার মতো তথ্যটি দিয়েছে সাম্প্রতিক একটি জিন-গবেষণার ফলাফল।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফিউচার অফ হিউম্যানিটি ইনস্টিটিউটে’র অধিকর্তা, জিন-তাত্ত্বিক ও বিবর্তন তত্ত্ববিদ নিক বোস্ট্রমের ওই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে ‘প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস’ জার্নালে। সম্প্রতি তা ছাপা হয়েছে ‘এভোলিউশান’ জার্নালেও। খবর আনন্দবাজার অনলাইনের।
গবেষণা জানাচ্ছে, আমাদের শরীরেই গড়ে উঠতে শুরু করেছে এইডস-প্রতিরোধী জিন। তা উত্তরোত্তর বেড়ে উঠছে। ইতিমধ্যেই সেই জিন ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে আফ্রিকার একাংশে। একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে। চট করে এইডসের ওষুধ বা প্রতিষেধকের আবিষ্কার না হলে, হয়তো আর ২০/২৫ বছরের মধ্যেই ওই এইডস-প্রতিরোধী জিন গোটা আফ্রিকা মহাদেশে বেশির ভাগ মানুষের শরীরেই গড়ে উঠবে। কালে-কালে সেই জিনের বিকাশ ও বিস্তার ঘটতে পারে ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়ায়।
শরীরে সদ্য গড়ে ওঠা ওই জিনটির নাম ‘সিসিএলআর-৫’। বলা যায় এইডস রোখার এটাই প্রথম প্রাকৃতিক ওষুধ। যা, বিবর্তনের স্বাভাবিক নিয়মে আমাদের শরীরে গড়ে ও বেড়ে উঠতে শুরু করেছে।
গবেষণাপত্রে বোস্ট্রম দেখিয়েছেন, প্রযুক্তি ও পরিবেশ কী ভাবে আমাদের শরীরের জিনকে প্রভাবিত করে। আর, তার দৌলতে আমরা কীভাবে দ্রুত বদলে গিয়েছি দশ হাজার বছর ধরে। তাতে দেখা যাচ্ছে, জিনের মধ্যেই ধীরে ধীরে ম্যালেরিয়া-প্রতিরোধী ব্যবস্থা গড়ে উঠছে। এমনকী, আফ্রিকার একাংশে এইডস-প্রতিরোধী নতুন একটি জিনও মানবশরীরে গড়ে ও বেড়ে উঠতে শুরু করেছে।
ওই গবেষকদলের অন্যতম সদস্য, নেদারল্যান্ডসের ‘রাবাউন্ড ইউনিভার্সিটি নিমেজেনে’র জিনতত্ত্ববিদ উর্মিমালা মিশ্র জানান, ‘চট করে এইডসের ওষুধ বা প্রতিষেধক আবিষ্কার না হলে, ‘সিসিএলআর-৫’-এর মতো এইডস-প্রতিরোধী জিন গোটা আফ্রিকার একটি বড় অংশের মানুষের শরীরে গড়ে উঠতে বড়জোর আড়াই-তিন দশক লাগবে। আর, সেটা হলে এডস-আক্রান্তের সংখ্যায় এখন এক নম্বরে থাকা মহাদেশ (‘হু’র রিপোর্ট অনুযায়ী) আফ্রিকায় ৩০ বছর পর এইডস হয়তো বিরল রোগ হয়ে উঠবে।’
এইডস-প্রতিরোধী জিন কীভাবে শরীরে গড়ে উঠছে- এ সম্পর্কে উর্মিমালা জানান, ‘বিবর্তনের স্বাভাবিক নিয়মে এটা হচ্ছে। বোস্ট্রমের গবেষণা দেখিয়েছে, প্রকৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে ও দুরারোগ্য রোগের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে, বিবর্তনের স্বাভাবিক নিয়মে আমাদের শরীরে জিনের বিকাশ ও রূপান্তর ঘটেছে দশ হাজার বছরে। এমনকী, নতুন জিনও শরীরে গড়ে উঠেছে।
‘সিসিএলআর-৫’ তেমনই একটি জিন। যা, আদতে একটি প্রোটিন। এটি শরীরে থাকলে এইডসের ‘এইচআইভি’ কিছুতেই কোষের প্রাচীর ফুঁড়ে ঢুকতে দেয় না। ওই প্রোটিনের সংস্পর্শে এলে ‘এইচআইভি’ মরে যায়। ফলে, ওই জিন যত বেশি করে মানুষের শরীরে গড়ে উঠবে, তত দ্রুত হারে এইচআইভিরও বংশ নাশ হবে।’