পয়লা আষাঢ়

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ‘রিমঝিম রিমঝিম ঘন দেয়া বরষে। /কাজরি নাচিয়া চল, পুর-নারী হরষে।’ এভাবেই বর্ষা অনুভব করেছিলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

আষাঢ়ের রিমঝিম বৃষ্টি গ্রীষ্মের ধুলোমলিন জীর্ণতাকে ধুয়ে ফেলে গাঢ় সবুজের সমারোহে প্রকৃতি সাজে পূর্ণতায়। রঙিন হয়ে পুকুর-বিলে ফোটে শাপলা-পদ্ম। কেয়ার বনেও কেতকীর মাতামাতি। ১৪২৮ বঙ্গাব্দের পয়লা আষাঢ় শুরু হলো আজ।

রাজধানীতে ভোরের এক পশলা বৃষ্টি দিয়ে প্রেমময়-উচ্ছল বর্ষা ঋতু শুরু হলো। সকাল থেকেই আকাশ গুরুগম্ভীর। এ যেন আষাঢ়েরই যথার্থ রূপ।

আবহাওয়াবিদরা মঙ্গলবার থেকে তিন দিন ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছেন। আবহাওয়াবিদরা যাই বলুন না কেনো ঋতুতে আষাঢ়ের আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে বর্ষাকাল শুরু হয়ে গেছে। মৌসুমের রীতি অনুযায়ী ঋতুটি বৃষ্টি বাদলেই মুখর থাকবে।

এটা অমোঘ সত্যি যে, গ্রীষ্মের খরতাপের ধূসর নাগরিক জীবন আর প্রকৃতিতে প্রাণের স্পন্দন জাগায় বর্ষা। পুষ্প-বৃক্ষে-পত্রপল্লবে নতুন প্রাণের সঞ্চার করে নতুন সুরের বার্তা নিয়ে এসেছে বর্ষা। রবিঠাকুরের ভাষায় ‘ঐ আসে ঐ ঘন গৌরবে নবযৌবন বরষা, শ্যাম গম্ভীর সরসা…’

বর্ষাবিহীন বাংলাদেশ ভাবাই যায় না। বর্ষা ঋতু তার বৈশিষ্ট্যের কারণে স্বতন্ত্র। বর্ষার প্রবল বর্ষণে নির্জনে ভালোবাসার সাধ জাগে, চিত্তচাঞ্চল্য বেড়ে যায়।

বর্ষা বাঙালি জীবনে নতুন প্রাণসঞ্চারকারী। পল্লীকবি জসীমউদদীন লিখেছেন- ‘বনের ঝিয়ারি কদম্বশাখে নিঝঝুম নিরালায়, / ছোট ছোট রেণু খুলিয়া দেখিছে, অস্ফুট কলিকায়।’ বৃষ্টিস্নাত কদম ফুলের সৌন্দর্য্য যে দেখেছে, মুগ্ধ নয়নে চেয়ে না থেকে পারেনি।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘আষাঢ় কবিতায় বলেছেন, ‘বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর, আউশের ক্ষেত জলে ভরভর, কালি-মাখা মেঘে ও পারে আঁধার ঘনিছে দেখ্ চাহি রে। ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।’ এখন মানুষ অনেক ব্যস্ত জীবন কাটাচ্ছে। ঘরের বাহির না হওয়ার সে সুযোগ নেই। রাজধানীতে আষাঢ়ের প্রথম দিনের সকালে বৃষ্টি মাথায় নিয়েই বেরিয়ে পড়েছেন কর্মজীবী মানুষ।

বৃষ্টি হলে গ্রামের নদী নালা পুকুরে জল জমে থই থই করে। নদীর তীর উপচে কখনও বা ধেয়ে আসে বন্যা। তখন গ্রামের সাধারণ লোকজনের কষ্টের শেষ থাকে না। তারপরও বর্ষা মানুষের কাছে আকাঙ্ক্ষার। কারণ, সবুজের সমারোহে, মাটিতে নতুন পলির আস্তরণে বর্ষা আনে জীবনেরই বারতা। তাই বর্ষাকে স্বাগতম।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts