আড়াই টাকা অনিয়মের মামলা থেকে ৪০ বছর পর মুক্ত

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ আড়াই টাকা অনিয়মের অভিযোগের মামলা থেকে ৪০ বছর পর পুরোপুরি মুক্ত হয়ে আনন্দে আত্মহারা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ওবায়দুল আলম আকন।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ সোমবার (২৮ জুন) বীর মুক্তিযোদ্ধা ওবায়দুলের সাজা বাতিল সংক্রান্ত রাষ্ট্রপক্ষের রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেয়। ফলে তিনি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে হারানো চাকরির জন্য ১৯৮২ সাল থেকে অবসরকালীন বয়স পর্যন্ত সব বেতন ও সুযোগ সুবিধাও পাবেন।

দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে উচ্ছ্বসিত ৬৮ বছর বয়সী ওবায়দুল। রায় দেখে যাবেন এমনটা নাকি তিনি ভাবতেও পারেননি বলে গণমাধ্যমকে তার প্রতিক্রিয়ায় জানান।

ওবায়দুল আলম জানান, মিথ্যা মামলায় সরকারি চাকরি হারিয়ে পরিবারসহ দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হয়েছে তাকে।

তিনি বলেন ‘তখন আমার একটি সন্তান ছিল। তার বয়স ছিল মাত্র ৯ মাস। এ অবস্থায় আমার স্ত্রী নিদারুণ কষ্টে জীবনযাপন করে। সাজা কেটে জেল থেকে বের হয়ে দিশাহারা হয়ে যাই।

ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরে ওবায়দুল আলম বলেন, ‘হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ মার্শাল ল জারি করে ১৯৮২ সালে। তখন পুরো দেশ ৫টি অঞ্চলে বিভক্ত করেন। আমি তখন যশোরের (কুষ্টিয়ার) কুমারখালীতে চাকরি করতাম। পাট সম্প্রসারণ সহকারী হিসেবে। সেখানে মার্শাল ল প্রধান ছিলেন মেজর দাউদ। সেখানে ইউনিয়ন থেকে (দাউদ) একজন ইইউ একমণ পাট বীজ চাইলে আমি তা দিতে অস্বীকার করি। তখন ওই ব্যক্তি আমাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। এরপর এক চাষি দিয়ে একটা মামলা সাজায়। তাতে বলা হয়, এক প্যাকেট পাটের বীজের দাম দুই টাকা। তাতে পাঁচ প্যাকেটের দাম আসে ১০ টাকা। কিন্তু আমি নাকি তার কাছে আড়াই টাকা করে নিয়েছি। প্যাকেট প্রতি নাকি আট আনা করে বেশি নিয়েছি।’

ওবায়দুল বলেন, এই অভিযোগ দিয়ে মামলা করে। তখন সংক্ষিপ্ত সামরিক আদালত যশোর-১৯ আমাকে ১ হাজার টাকা জরিমানা এবং ২ মাসের জেল দেয়। এ রায় পাওয়ার পর পাট সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আমাকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করে। এরপর আমার দুর্বিষহ জীবন নেমে আসে। আমি তো সরকারি কোনো টাকা আত্মসাৎ করিনি। তারপরও এমন সাজায় আমার সব উল্টাপাল্টা হয়ে যায়।

ভুক্তভোগী ওবায়দুল বলেন, ‘তখন আমার একটি সন্তান ছিল। তার বয়স ছিল মাত্র ৯ মাস। এ অবস্থায় আমার স্ত্রী নিদারুণ কষ্টে জীবনযাপন করে। সাজা কেটে জেল থেকে বের হয়ে দিশাহারা হয়ে যাই। উপায়ন্ত না দেখে টিউশনি করে যা আয় হতো তাই দিয়ে সংসার চলে। অন্যদিকে আমার স্ত্রী মেট্রিক পাস থাকায় সে একটি প্রাইমারি স্কুলে চাকরি করে। তখন সে ৩০০ টাকা বেতন পেত। তার বেতন আর আমার টিউশনির টাকা দিয়ে কোন রকম করে সংসার চালিয়েছি।’

দীর্ঘ বছর পর ২০১১ সালে জিয়া-এরশাদের সব সামরিক শাসন বাতিল হয়ে যায় সংবিধানের সপ্তম সংশোধনীতে। এটি দেখেই নিজের ওপর ঘটে যাওয়া অবিচারের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে নামেন ওবায়দুল আলম।

তিনি জানান, হাইকোর্টে এসে রিট দায়ের করি। ওই রিটের শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর আমার পক্ষে রায় আসে। হাইকোর্ট তার রায়ে আমার বিরুদ্ধে সাজা বাতিল করে চাকরি সংক্রান্ত সব সুযোগ সুবিধা প্রদানের নির্দেশ দেয়। এরপর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে পাট সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আপিল করলে ২০২০ সালের ৮ মার্চ আপিল বিভাগও আমার বিরুদ্ধে সাজা বাতিল করে দেয়। তবে পাওনাদির বিষয়ে আদেশ সংশোধন করে দেয়। এরপর ওই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। আজকে সেই রিভিউ আবেদনটি খারিজ করে দিয়ে সব ধরেন সুযোগ সুবিধা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

Print Friendly

Related Posts