গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পাঁচ বছর

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ঢাকা’র গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলার পাঁচ বছর পূর্ণ হলো। ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাত পৌনে ৯টার দিকে কূটনৈতিক এলাকা গুলশানের হলি আর্টিজানের ওই ঘটনায় ২ পুলিশ কর্মকর্তা, জাপানি, ইতালি, বাংলাদেশি বংশোদ্ভতু আমেরিকানসহ ১৮ বিদেশি ও ২ বাংলাদেশি এবং ৬ জঙ্গিসহ মোট ২৮ জন নিহত হন।

অভিযান চালাতে গিয়ে জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাউদ্দিন খান নিহত হন। সেদিন রাতের বিভিন্ন সময় তিন বাংলাদেশিসহ ২০ জন জিম্মিকে হত্যা করে জঙ্গিরা। পরদিন সকালে যৌথ বাহিনী কমান্ডো অভিযান চালায়। এতে ৬ হামলাকারী নিহত হয়। জীবিত উদ্ধার করা হয় ১৩ জিম্মিকে।

ওই দিনের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে সন্ত্রাস বিরোধ আইনে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করে। মামলাটি তদন্ত করে ৮ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করা হয়। এরপর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরু করেন। হামলার তিন বছর চার মাস ২৬ দিন পর ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল। রায়ে ৮ আসামির মধ্যে ৭ জনের মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে খালাস দিয়েছেন আদালত।

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- রাজীব গান্ধী, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, হাতকাটা সোহেল মাহফুজ, হাদিসুর রহমান সাগর, রাশেদ ইসলাম ওরফে আবু জাররা ওরফে র‌্যাশ, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন। আর খালাস পাওয়া আসামির নাম মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান।

তবে এ ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রায় কার্যকর এখনো সম্ভব হয়নি। ফাঁসির রায় কার্যকর করতে উচ্চ আদালতের দিকে তাকিয়ে আছেন সংশ্লিষ্টরা।

করোনার মধ্যেও এই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য পেপারবুক তৈরি শেষ হয়েছে। আশার কথা শুনিয়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে গত বছর মার্চ মাস থেকে স্বাভাবিক আদালত হচ্ছে না। সে কারণে এ মামলার শুনানিতে দেরি হচ্ছে। তবে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের পেপারবুক তৈরি হয়েছে। এটি এখন আদালতে উঠবে। এর পাশাপাশি কেউ যদি আপিল করে থাকে, সেটি ব্যক্তিগত আইনজীবী বা জেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমেই হোক না কেন, তা শুনানি হবে। শুনানি শেষে উচ্চ আদালত যে নির্দেশনা বা আদেশ দেবেন, তাই প্রতিপালন করা হবে। চলতি বছরের মধ্যেই মামলাটির আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানি করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’

সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, ‘ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য ২০২০ সালের ১৬ আগস্ট আলোচিত এ মামলার পেপারবুক প্রস্তুত হয়ে হাইকোর্টে পৌঁছায়। এক হাজার ৯০০ পৃষ্ঠার এই পেপারবুক শুনানির জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। এখন আনুষঙ্গিক কাজ শেষ হলে ডেথ রেফারেন্সটি শুনানির জন্য যেকোন একটি বেঞ্চে যাবে।’

২০১৬ সালের ৪ জুলাই নিহত ৫ জঙ্গিসহ অজ্ঞাতদের আসামি করে গুলশান থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দায়ের করেন গুলশান থানার এসআই রিপন কুমার দাস।

২০১৮ সালের ২৩ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম বিভাগের পরিদর্শক হুমায়ূন কবিরের দেওয়া চার্জশিটে ৮ জনের নাম থাকলেও হামলায় জড়িত ২১ জনকে চিহ্নিত করা হয়। তবে ১৩ আসামি বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত হওয়ায় তাদের নাম চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়। আর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক হাসনাত রেজা করিমকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়। ওই বছরের ৮ আগস্ট আট আসামির বিরুদ্ধে দাখিল করা চার্জশিট গ্রহণ করেন আদালত। আর হাসনাত রেজা করিমের বিরুদ্ধে ওই ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ২৬ নভেম্বর ৮ আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত। ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক।

 

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts