হাওরে নতুন পানি, খুশি পাড়ের জেলেরা

আল আমিন: হাওরাঞ্চলে নতুন পানি আসায় মাছের দেখা মিলেছে। দীর্ঘ প্রায় পাঁচ মাসের মধ্যে দেশি মাছের দেখা না পাওয়ায় হতাশায় ছিলেন হাওরপাড়ের জেলেরাসহ স্থানীয়রা। নতুন পানি আসায় সেই হতাশা দূর হয়েছে তাদের।

নতুন পানি ও মাছ হাওরাঞ্চলের মানুষের জন্য একটি আর্শিবাদ। নতুন পানিতে বাঁশজালে মাছ ধরছেন জেলে ও স্থানীয়রা। মাছ পেয়ে খুশি তারা।  এবার আষাঢ় মাসেও অতিবৃষ্টি না হওয়ায় হাওরে দেশি মাছ প্রজনন ও উৎপাদন নিয়ে জেলাজুড়ে শঙ্কা ছিল জেলে ও মৎস্য অফিসের কর্মকতাদের। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ২৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সুরমা নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ৩৭ সে.মি. এবং যাদুকাটায় ১০০ সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের লালপুর এলাকায় খরচার হাওরে একটি অংশে প্রায় শতাধিক জেলে ও স্থানীয়রা বাঁশজাল ফেলে মাছ ধরছেন। অন্যদিকে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা সদর, চালবন্দ পয়েন্ট, কাটাকালি বাজার এলাকাসহ অনেক জায়গায় একইভাবে নারী পুরুষসহ মাছ ধরছেন তারা। এসময় তারা জানালেন, নতুন পানিতে মাছ পাওয়া যাচ্ছে। আগে সারাদিনেও জাল দিয়ে এক বেলার মাছ পাওয়া যাচ্ছিল না। নতুন পানিতে তাদের জালে দেশি মাছ টেংরা, পুটি, কই, ভেদাসহ নানা প্রজাতির মাছ ধরা দিচ্ছে। মাছ পেয়ে তারা এখন খুশি।

জানা গেছে, গত বছর আষাঢ় মাসে পানিতে টইটম্বুর ছিলো এখানের হাওর ও নদ-নদী। গত তিন বছর ধরে জুন-জুলাই মাসে বেশিরভাগ সময় এ জেলার সুরমা-কুশিয়ারাসহ প্রায় সকল পাহাড়ি নদীর বিপদসীমার উপরে ছিল। এমনকি মরা নদীগুলির পানিও সমতল ছিলো। বর্তমান সময়ের যে পানি আছে তার চাইতে দেড় দুই মিটার পানি বেশি ছিল নদী ও হাওরগুলোতে। গত বছরের ২৬ জুন নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ৭০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিলো। এর আগের বছর একই সময়ে বন্যায় প্লাবিত ছিলো। তবে এবার আষাঢ় মাসের ১৪ তারিখে (২৯ জুন) একটু পানি এসেছে হাওরাঞ্চলে।

এদিকে ভারতের হিমালয় পাদদেশের মেঘালয়, আসাম, ও ত্রিপুরা প্রদেশ অঞ্চলে গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে মাঝারি ও ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে এর প্রভাব পরেছে জেলার নদ-নদী ও হাওরে, জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। সেখানে ভারি বৃষ্টিপাত হলে জেলার সুরমাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে কতিপয় স্থানে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়নি।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার কাটাকালি এলাকায় বাঁশজাল দিয়ে মাছ ধরছিলেন খাচিরগাতি এলাকার বাসিন্দা ফজিলা বেগম। এসময় তিনি বলেন, নতুন পানি আসছে। পানির সাথে মাছও পাওয়া যাচ্ছে। দুইলা (দুইটা) মাছ ধরতে পারতেছি। শান্তি মতে এক বেলা খাইতে পারবো।

একই এলাকার শামছুল আলম বলেন, হাওরের মানুষ আমরা। দেশি মাছ খাই (খেয়ে) থাকি সবসময়। বাজারে গেলে ফিশারির মাছ ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায় না। গত পাঁচ মাস ধরে দেশি মাছ পাইনি। মাছ পাইলেও বেশি দাম দিয়ে বাজার থেকে কিনে আনার সামর্থ্য নেই আমাদের। খেতেও পারিনি। নতুন পানি আসায় জাল দিয়ে মাছ ধরতে এসেছি। মাছ ধরা দিচ্ছে। নতুন পানি আমাদের হাওরবাসীর জন্য আর্শিবাদ হয়ে আসছে।

জেলা মৎস্য অফিসার শুনীল মন্ডল বলেন, মা ও পোনা মাছ না ধরতে জেলেদেরকে নিষেধ করা হয়েছে। বাঁশজাল দিয়ে যারা মাছ ধরছেন তাদেরকেও নিষেধ করা হয়েছে। বিভিন্ন উপজেলায় জেলেদেরকে সচেতন করা হচ্ছে এবং মাইকিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারা যেন নতুন পানিতে আসা মা ও পোনা মাছ ধরা থেকে বিরত থাকেন। তবে নতুন পানিতে কিছুটা হলেও মাছের দেখা পাওয়া যাচ্ছে।

 

Print Friendly

Related Posts