তবে, হাট ঘুরে দেখা গেছে, হাটে বিভিন্ন জাতের পশু রয়েছে। ভিড়ও বেশি। কিন্তু বিক্রি কম। হাটে পর্যাপ্ত দেশি গরু ও ছাগল রয়েছে। পশুরহাটে আসা অধিকাংশই স্থানীয়ভাবে খামারে লালন-পালন করা দেশি গরু। ক্রেতারা এগুলো পছন্দও করছে।
হাটে পর্যাপ্ত পশু। অনেক ক্রেতা মনে করছেন শেষ দিনে দাম পড়ে যাবে। তখন কোরবানির পশু সস্তায় কেনা যাবে।
রাজধানীর সবচেয়ে বড় দু’টি পশুর হাট উওরা ১৭ নম্বর সেক্টর বৃন্দাবন ও আশিয়ান সিটির পশুর হাট ঘুরে ক্রেতা বিক্রেতা, ইজারাদার, বিভিন্ন পেশার মানুষের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের শনির আখড়া পশুর হাটেও একই চিত্র দেখা যায়।
জানা গেছে, হাটে আবার এক শ্রেণির সচেতন মানুষ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে পশুহাটে যাচ্ছে না। তারা অনলাইন পশুর হাটে পশু ক্রয় করেছেন। দরদামে বনিবনা হয়ে গেলেই মোবাইল অথবা অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পছন্দসই পশু কিনেছেন। মূলত কোরবানির হাটে ন্যূনতম কোনো স্বাস্থ্যবিধি না মানায় তারা পশুর হাটে যাচ্ছে না।
উওরা ১৭ নম্বর সেক্টর বৃন্দাবন ও আশিয়ান সিটির পশুর হাট সরেজমিনে ঘুরে ও লোকজনের সাথে আলাপ করে জানা যায়, প্রতি বছর এমন সময় পশুহাটের কেনাবেচা জমজমাট হয়ে ওঠে। মাঝারি ও ছোট আকৃতির গরুর চাহিদাই বেশি। বড় গরু নিয়ে যারা হাটে এসেছেন তাদের কাছে ক্রেতারা ভিড়ছেন না। তবে, হাটে কোরবানির জন্য তৈরি করা বড় গরুগুলোও এসেছে। কিন্তু দাম একটু বেশি। বর্তমানে হাটে দেশি গরুই বেশি।
দুই গরু ব্যবসায়ি বলেন, এবছর পশুর হাটে ভারতীয় গরু নেই বললেই চলে। হাটে যেসব ক্রেতা আসছে তারা দেশীয় জাতের গরু এবং স্বাভাবিক খাবার দিয়ে খামারে লালন-পালন করা গরুই বেশি পছন্দ করছে। উওরার হাটগুলোতে গরুর সরবরাহ বেড়েছে। দক্ষিণ সিটির হাটগুলোতে একই চিত্র দেখা গেছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ হাটে এলেও দরদাম করেই অনেকে চলে যাচ্ছে।
উওরার হাটে পাবনা থেকে গরু নিয়ে আসা নাসির উদ্দীন নামে এক খামারি বলেন, পরিবহনে করে গরুর নিয়ে আসা, হাটে তোলা, খাওয়ানো ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলা এই পুরো সময়টা জুড়ে তাদের হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হয়।
তিনি জানান, এসময় মুখে নাকে-মুখে মাস্ক পড়ে থাকা তাদের জন্য কষ্টসাধ্য। যে কারণে হাটে আসা অধিকাংশ ব্যবসায়ি ও খামারিই নাকে-মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে পারছে না। এছাড়া সব সময় গরুর দড়ি ধরে থাকা, তাকে সামলানো এবং গরুর গোবর তোলাসহ নানা কারণে তাদের হাতও পরিচ্ছন্ন রাখা যাচ্ছে না।
তুরাগের স্থায়ী বাসিন্দা রুমন মোস্তাফিজ বলেন, গত বছর ছোট গরু ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা, মাঝারি আকৃতির গরু থেকে ৭৫ থেকে ১ লাখ টাকা এবং বড় আকৃতির গরু দেড় লাখ থেকে শুরু করে সর্বোচচ ১৩ লাখ টাকার মধ্যেই বিক্রি হয়েছে।
উওরার বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন সিরাজী নামে এক ব্যক্তি জানান, এবছর পশুর হাটে পাইকার ও গরু ব্যবসায়িরা গরুগুলো আকৃতি হিসেবে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে বেশি দাম চাইছে।
উওরা ১৭ নম্বর সেক্টর বৃন্দাবন পশুর হাটের ইজারাদার হলেন তুরাগ থানা আওয়ামী লীগের অর্থ বিষয় সম্পাদক মো, নূর হোসেন বলেন, হাটে এবার দেশি গরুর প্রাধান্যই বেশি। প্রচুর পরিমাণ গরু উঠেছে।
কুষ্টিয়া, যশোর ও পাবনা থেকে পশুর হাটে বড় আকৃতির ২৫টি গরু নিয়ে এসেছেন ইসলাম, মিজান ও মারুফ নামে তুরাগের তিন ব্যবসায়ি।
কুষ্টিয়ার মো, কুতুব উদ্দিন নামে এক পাইকার বলেন, ‘এক-একটি গরুতে ১২ থেকে ১৫ মণ মাংস হবে। দাম চাচ্ছি সাড়ে চার লাখ, তিন লাখ, আর বাকি দু’ডো আড়াই লাখ করে। কিন্তু লোকজন বড়টার দাম কয় ২ লাখ। এতে গরু বেচা হবে নানে। কাইটে বেঁচলেও সাড়ে ৪ এর বেশি বেচা যাবে।’
ফরিদপুরের সদরপুর এলাকা থেকে ১৭টি গরু নিয়ে উত্তরার এই হাটে এসেছেন ব্যাপারি শেখ জাকারিয়া। তিনি বলেন, গরুর বাজার ভালো না। ছোট গরু বিক্রি করে লাভ নাই। ক্রেতারা অনেক কম দাম বলে। এখন দেখা যাচ্ছে লোকসানে পড়তে হবে।
আশিয়ান সিটির গরুর হাটে মো. আমিনুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি জানান, এই বাজারে প্রচুর গরু আছে কিন্তু বিক্রেতারা দাম চাইছে অনেক বেশি। আমাদের বাজেটের বাইরে চলে যাচ্ছে। মাঝারি সাইজের গরুর দাম চাইছে দেড় লাখের বেশি। আর ছোট গরুগুলো ৮০ হাজার।
শনির আখড়ায় পশুরহটে জামালপুরের ব্যবসায়ি জামসেদ জানিয়েছেন, তিনি ২০টি গরু নিয়ে ঢাকায় এসেছেন, এরমধ্যে পনেরটি বিক্রি হয়েছে। তবে খুব বেশি লাভ হয়নি। সবায় লাভের আশায় গ্রাম থেকে গরু নিয়ে আসে। কিন্তু এবার তেমন লাভ হবে না বলেও জানান তিনি।