মৌলভীবাজারের লাঠিটিলায় সাফারি পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনাটি সঠিক নয়: বাপা

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ মৌলভীবাজার জেলার একমাত্র ক্রান্তিয় চিরসবুজ বন ও দেশের অন্যতম জীববৈচিত্র্যপূর্ণ বনভূমি লাঠিটিলায় সাফারি পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনার বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সভাপতি সুলতানা কামাল ও সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল নিম্নোক্ত বিবৃতি প্রদান করেছেন:

গণমাধ্যমে প্রকাশ মৌলভীবাজারের ক্রান্তিয় চিরসবুজ বন ও দেশের অন্যতম জীববৈচিত্র্যপূর্ণ বনভূমি লাঠিটিলায় সাফারি পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে বন বিভাগ। জেলার জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের ওই বনভূমি জেলার একমাত্র সংরক্ষিত বন হিসেবে চিহ্নিত। এ ধরনের বনে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা, এমনকি প্রবেশও নিষেধ। ৯৮০ কোটি টাকার সম্ভাব্য ব্যয় ধরে ওই সাফারি পার্ক নির্মিত হলে সেখান পর্যটকদের জন্য নানা অবকাঠামো, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন, উপকেন্দ্রসহ ভারী অবকাঠামো নির্মিত হবে। আর সেখানে বছরে ৮ থেকে ১০ লাখ দর্শনার্থী আসবেন বলে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সেগুনগাছপ্রধান ওই বনভূমির ৫ হাজার ৬৩১ একরজুড়ে সাফারি পার্ক নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক ও ৫০ কিলোমিটার উত্তরে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। সেখানে বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীদের মধ্যে হাতি, উল্লুক, মায়া হরিণ, উল্টোলেজি বানর, আসামি বানর, মুখপোড়া হনুমান রয়েছে। উক্ত এলাকায় আদিবাসীদের দীর্ঘদিনের বসবাস রয়েছে বলেও জানা যায়।

গত ২৮ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিকে বনের ভিতর সাফারি পার্ক নির্মাণের ফলে সৃষ্ট সম্ভাব্য বিপর্যয়সমূহ এবং বিতর্কিত কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতায় প্রকল্প সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। এরপর স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান সিলেট লাইভ টিভিনামক ফেসবুক পেজে তার সাক্ষাৎকারে সংশ্লিষ্ট সাংবাদকর্মীকে দেশদ্রোহী হিসেবে আখ্যা দেন এবং কয়েক হাজার মানুষ নিয়ে ঐ সাংবাদিকের বাড়ি ঘেরাও করার হুমকি প্রদান করেন, যা একটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় নিন্দনীয় এবং অগ্রহনযোগ্য। এ ধরনের কথাবার্তা উস্কানিমূলক ও পরমতসহিষ্ণুতার প্রতি চরম অশ্রদ্ধার পরিচায়ক এবং উক্ত প্রকল্পের প্রতি কোন কোন মহলের অতিআগ্রহের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে বাপার পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে ব্যাবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করছি

আমরা মনেকরি মৌলভীবাজারের লাঠিটিলার জীববৈচিত্র্যপূর্ণ বনভূমি এবং জেলার একমাত্র সংরক্ষিত বনকে বন বিভাগের সাফারি পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনাটি একটি সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল ধ্বংস করে সাফারি পার্ক নির্মাণ না করে বনটি সঠিকভাবে সংরক্ষণ করে পর্যটন সম্প্রসারিত করা যেতে পারে। যে কোন বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণের পূর্বে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যথাযথ সমীক্ষার মাধ্যমে নিরূপণ করার যে বাধ্যবাধকতা আছে তা মেনে চলতে হবে। লাঠিটিলার সংরক্ষিত বনে সাফারি পার্ক নির্মাণের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহনের পূর্বে  স্থানীয় জনগণ এবং পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতামতকে  গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিতে হবে । একই সাথে দেশ ও জনগণের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যের  অবাধ প্রবাহের বিরুদ্ধে হুমকি প্রদানকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুততম সময়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

Print Friendly

Related Posts