বিডি মেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ক্যান্টন ফেয়ারে বিশ্ব ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে বাংলাদেশী ব্র্যান্ড ওয়ালটন। ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের ক্রেতারা ভূয়শী প্রসংশা করেছেন ওয়ালটন পণ্যের। তাদের অনেকেই কারখানা পরিদর্শন এবং পণ্য ক্রয়ের ব্যাপারে খুবই আগ্রহী।
ওয়ালটন কর্তৃপক্ষের প্রত্যাশা- কিছুদিনের মধ্যেই মিলবে বিশাল অংকের রপ্তানি আদেশ।
ওয়ালটন সূত্রমতে, সবচেয়ে বড় রপ্তানি আদেশ আসতে পারে অস্ট্রেলিয়া থেকে। সেখানকার ওমেগা প্রাইভেট লিমিটেড এর প্রতিনিধিদল ওয়ালটন কারখানা পরদির্শন করেছেন। শিগগীরই তারা আরো বড়সর টিম নিয়ে বাংলাদেশে আসছেন। তারা কারখানা পরিদর্শন করে অর্ডার দেবেন। আমেরিকার মিচা লুইচ কোম্পানির স্বত্ত্বাধিকারী মিস্টার মিচাও ওয়ালটন কারখানা ভিসিট করবেন।
এছাড়া প্রতিবেশী দেশসমূহ, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকাসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে শিগগীরই রপ্তানি আদেশ পাওয়ার অপেক্ষায় আছে ওয়ালটন।
ক্যান্টন ফেয়ারকে বলা হয় দুনিয়ার সবচেয়ে বড় বানিজ্য মেলা। চীনের গুয়াংজু শহরে বছরে দুবার অনুষ্ঠিত হয় ওই মেলা। যদিও এর অফিসিয়াল নাম ‘চায়না এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ফেয়ার’। প্রথমবারের মতো এতে অংশ নিয়েছিলো বাংলাদেশী কোনো ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যাল পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন।
এখানে সফল অংশগ্রহণের মাধ্যমে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ খ্যাত ওয়ালটন ব্র্যান্ডের পণ্যের প্রতি মনোযোগ আকৃষ্ট হয়েছে উন্নত বিশ্বের ক্রেতাদের। পাওয়া গেছে অভূতপূর্ব সাড়া। কয়েক হাজার পটেনশিয়াল বায়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন ওয়ালটন পণ্য ক্রয়ের ব্যাপারে।
জানা গেছে, এবারের মেলায় পৃথিবীর প্রায় ২ শ’টি দেশের ৩ লক্ষাধিক ক্রেতা অংশ নেন। এর বাইরে আরো প্রায় ৩ লাখ ছিলেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও প্রতিনিধি। পৃথিবীর প্রায় সকল শীর্ষ ব্র্যান্ডের পণ্য প্রদর্শিত হয় এখানে। আসেন বিভিন্ন দেশের শীর্ষ ক্রেতা-ব্যবসায়ীরা। সব মিলিয়ে যেন বানিজ্যের এক মহাযজ্ঞ।
মেলায় এরিয়া বি এর আন্তর্জাতিক হলে ছিলো ওয়ালটনের মেগা প্যাভিলিয়ন। মোট ৮ টি স্টলের সমপরিমান জায়গা নিয়ে দৃষ্টিনন্দন এবং অভিজাত ডিজাইনে তৈরি হয় ওয়ালটনের প্যাভিলিয়ন। আন্তর্জাতিক হলের বাইরে তিনটি গুরুত্বপূর্নস্থানে ছিলো ওয়ালটনের বিশাল বিলবোর্ড। ভিডিও স্ক্রিনে প্রদর্শিত হয় ওয়ালটনের বিজ্ঞাপন ও তথ্যচিত্র। সবমিলিয়ে আন্তর্জাতিক হলের মুল ফোকাস ছিলো ওয়ালটন প্যাভিলিয়ন।
১১৯তম আন্তর্জাতিক ক্যান্টন ফেয়ার চলে এপ্রিলের ১৫ থেকে ১৯ তারিখ পর্যন্ত। মেলায় প্রদর্শিত হয় ওয়ালটনের ফ্রস্ট ও নো ফ্রস্ট রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, এলইডি টেলিভিশন, এয়ার কন্ডিশনার, রিচার্জেবল ফ্যান, ইলেকট্রিক সুইস-সকেট, এলইডি বাল্ব, ইন্ডাকশন কুকার, ব্লেন্ডার, এসিড লেড রিচার্জেবল ব্যাটারি ইত্যাদি।
ওয়ালটন প্যাভিলিয়নের মূল আকর্ষণ ছিলো ‘ইন্টিলিজেন্ট ইনভার্টার’ প্রযুক্তির নো ফ্রস্ট ফ্রিজ কর্নার। যেসব ফ্রিজে সংযোজিত হয়েছে প্রযুক্তির বিস্ময় হিসেবে পরিচিত ন্যানো টেকনোলজি। সেইসঙ্গে গুনগত মান এবং সাশ্রয়ী মূল্যের কারনে বিশ্ব ক্রেতাদের ঝোঁক এখন বাংলাদেশের দিকে।
চায়না সরকারের বিশেষ আমন্ত্রণে মেলায় গিয়েছিলেন ঢাকা চেম্বারের সাবেক পরিচালক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সৈয়দ হাবিবুর রহমান। তিনি জানান, মেলার হাজার হাজর স্টল-প্যাভিলিয়ন ঘুরে ওয়ালটন ফ্রিজের মতো মান সম্পন্ন এবং আকর্ষণীয় ডিজাইনের পণ্য আর কোথাও দেখা যায় নি। বিদেশীরা ওয়ালটন দেখে মুগ্ধ।
যে কারনে ইন্টারন্যাশনাল হলে ওয়ালটন প্যাভিলিয়নে সবচেয়ে বেশি ভিড় ছিল। তিনি আরো বলেন, একজন বাংলাদেশী হিসেবে বাংলাদেশের একটি ব্র্যান্ডকে এখানে দেখে আমি গর্বিত।
ওয়ালটনের ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং বিভাগের প্রধান রকিবুল ইসলাম রাকিব জানান- ক্যান্টন ফেয়ারে ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, এশিয়া ও আফ্রিকার অসংখ্য ক্রেতা ওয়ালটন প্যাভিলিয়ন পরিদর্শন করেছেন। তারা প্রায় প্রতিটি পণ্য ভালো করে দেখেছেন। গুনগত মান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন। সর্বোপরি তারা ওয়ালটন পণ্যের ভূয়শী প্রসংশা করেছেন।
তিনি বলেন, ক্রেতারা সাধারণত কারখানা পরিদর্শন করে, পণ্যের স্পেসিফিকেশন এবং মূল্য ঠিক করে অর্ডার দেন। তিনি আশা করছেন, কয়েক মাসের মধ্যে ১০ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আদেশ পাওয়া যাবে।
ওয়ালটনের অপারেটিভ ডিরেক্টর উদয় হাকিম বলেন, ইলেকট্রনিক্স খাতের জায়ান্টরা নড়েচড়ে বসেছে ওয়ালটনকে এই মেলায় দেখে। ওয়ালটনের উত্থান তাদেরকে আশান্বিত করেছে।
তারা বিস্ময় প্রকাশ করেছে, এতো ভালো মানের পণ্য এতো কম খরচে ওয়ালটন কীভাবে তৈরি করছে। তিনি বলেন, ক্যান্টন ফেয়ারের মাধ্যমে ওয়ালটনের এবং বাংলাদেশের ব্র্যান্ড ইমেজ অনেক বেড়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশী ব্র্যান্ডের বাজার সম্প্রসারণে এই মেলা কাজে দেবে।